নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

০৯ আগস্ট ২০২৫

রূপগঞ্জে যে কারণে মাসের পর মাস পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৩০, ৮ আগস্ট ২০২৫

রূপগঞ্জে যে কারণে মাসের পর মাস পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

দখল-দূষণে খাল ভরাট ও অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্প নির্মাণের ফলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পানি আটকে ভোগান্তিতে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

অল্প বৃষ্টিতে উপজেলার অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসা-বাড়ি তলিয়ে যায়। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মাসের পর মাস পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয় তাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেচ প্রকল্পের মধ্যে থাকা খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ড্রেনের মুখ খুলে দিলেও সংস্কার না হওয়া ক্যানেলগুলো বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারে না। ত্রুটিপূর্ণ ক্যানেল দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের ভেতরের বিভিন্ন এলাকায় এখন থৈ-থৈ পানি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার অধিকাংশ জায়গার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তারাব, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল,মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, খালপাড়, ইসলামবাগ, নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তেঁতলাব, কর্নগোপ, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, মাসাব, যাত্রামুড়া, রূপসী মাঝিপাড়া, সোনাব, পাঁচাইখা, ইসলামপুর, কাঞ্চন ও হাটাবসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা।

এতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়ির উঠোনে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি। অনেকের বসত ঘরে ২-৩ ফুট পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। জমির ফসল হলদে হয়ে মরে যাচ্ছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছেন।

কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে নৌকায় ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।

শিল্প-কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। নারী ও শিশুরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

গোলাকান্দাইল এলাকার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন বর্জ্যে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এ সময়টাতে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেচ প্রকল্পের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে জলাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে।’

কর্নগোপ গ্রামের গৃহবধূ শামীমা বেগম বলেন, ‘এখানকার নিচু এলাকা সব ডুবে গেছে। ঘরে হাঁটু সমান পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।’

মাসাব এলাকার সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর একই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দুর্ভোগকে মেনে নিচ্ছে। কিছু শিল্প মালিক ও প্রভাবশালীরা নিজ স্বার্থে খালগুলো ভরাটের কারণে অগ্রণী সেচ প্রকল্পের খালগুলো ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অল্প বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

তেঁতলাব এলাকার সুমন রানা বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হলে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কোমর পানি পার হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হয়। প্রায় প্রতি বর্ষায় পানির নিচে ডুবে থাকি।

একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা-ঘাট, ঘরের উঠানসহ সব পানিতে তলিয়ে যায়। এ পানি রোগের উৎস হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চর্মরোগ, এলার্জি, ঘা ও চুলকানি দেখা দিচ্ছে মানুষের।’

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আটটি খাল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

পানি নিষ্কাশন কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তারাব অংশে তিনটি সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে এ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।‘

পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক রাকিবুল আলম রাজিব বলেন, ‘জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো এখানকার অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে তারাব পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের দখলে।

ফলে পানি জমলে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। সেচ প্রকল্পে পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।‘

পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ  বলেন, ‘কিছুদিন আগে অবগত হই যে কিছু প্রতিষ্ঠান অগ্রণী সেচ প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন খাল বালি ভরাটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দখল করে রেখেছে।

তদন্ত শেষে ৩০ জুলাই ১২টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে অবৈধভাবে দখল করা খালের জমি ছাড়তে বলা হয়। অন্যথায় খুব দ্রুত আমরা একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব।’
 

সম্পর্কিত বিষয়: