শ্রী শ্রী শ্যামা পূজার বিসর্জন উপলক্ষে বন্দরের বিভিন্ন মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তদের মাঝে আলতা সিঁদুর বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রাতে বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানী হরিজন কলোনি পূজা মন্ডপে এ আলতা সিঁদুর বিতরণীর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সমীর বসু ও প্রধান বক্তা হিসেবে ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক লাল ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ ঘোষ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী জয়দেব রায় জয় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমীর বসু বলেন, আসলে পাঁচই আগস্ট স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পর যখন বাংলাদেশের সনাতনী চরম অস্থিরতার মধ্যে দিনতিপাত করছিলো। তখন আমরা সনাতনীদের বিপদগ্রস্থ অবস্থায় দেখেছি।
যখন তারা অত্যান্ত ভীতসন্তুষ্ট হয়ে এদেশে বসবাস করছিলো, ঠিক সেই সময়ই আমরা চিন্তা করলাম এ সনাতনীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের কিছু করা উচিৎ।
ঠিক সেই মহুর্তে আমরা অনুভোব করলাম আমাদের একটি সংগঠন করা দরকার। তখন আমরা ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট গঠন করি। এবং গঠনের পর থেকে আমরা এ ৭ আট মাসে সারা বাংলাদেশে ৬১টি জেলায় আমরা আমাদের পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কমিটি গঠন করেছি।
তিনি আরও বলেন, জেলা কমিটি গঠন করেই আমরা বসে থাকি নাই। সমস্ত জেলা তাদের উপজেলা কমিটি করেছে এবং উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কমিটি বিস্মৃত রয়েছে।
এখন পূজা উদযাপন ফ্রন্ট বাংলাদেশ সনাতনীদের জন্য একটা বৃহৎ সংগঠন এবং সনাতনীদের একমাত্র আস্থার সংগঠন। এ কমিটি মাধ্যমে আমরা যেকোন জায়গায় যেকোন সমস্যা সনাতনীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি।
প্রধান বক্তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক লাল ঘোষ বলেন, বিএনপি সবসময়ই সকল ধর্মের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। গণতন্ত্রের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশই আমাদের স্বপ্ন ও অঙ্গীকার।
আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে, নিরাপত্তায় ও সমঅধিকারে বসবাস করতে পারে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা সবাই ধানের শীষের পক্ষে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
মহানগর মৎস্যজীবী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রী ঋষিকেশ মন্ডল মিঠু বলেন, আজ কবি চন্ডীদাসের একটি কবিতার কথা খুব বেশি মনে পড়ে যাচ্ছে। চন্ডীদাস তার একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ আসলে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ।
কিন্তু তা না করে মানুষকে ধর্ম বর্ণ ও জাতি দিয়ে পার্থক্য করা হচ্ছে। যা খুব দুঃখজনক এবং ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে বার বার সহিংসতার সৃষ্টি হচ্ছে। আসলে আমাদের এ থেকে বেড়িয়ে আসা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, আমার নেতা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান সব সময়ই সনাতনীদের পাশে থেকেছেন এবং এখনও আছেন। সেই দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে এ শ্যামা পূজায়ও তিনি প্রতিটি মন্ডপের নিরাপত্তায় নজর রেখেছেন। সনাতনীদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়, সেজন্য তিনি তার প্রতিটি নেতাকর্মীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
অবশেষে তাদের সহযোগীতায় অত্যান্ত শান্তিপূর্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে আমাদের এ পূজাগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য আমি আমার নেতা জাকির খানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বক্তব্য শেষে সনাতনী মা-বোনদের মাঝে আলতা সিঁদুর বিরতণ করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দরা। পরে বন্দর বাজার দুর্গামন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে প্রায় সহস্রাধীক ভক্তদের মাঝে আলতা সিঁদুর বিরতণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক শ্রী নয়ন সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, একরামপুর ইস্পাহানী হরিজন কলোনি পূজা কমিটির সভাপতি অনিল দাস, সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন দাস, বন্দর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন, একরামপুর জেলেপাড়া পূজা কমিটির সহ সভাপতি মিঠু বর্মন, মনা সাহা, অজিত বর্মন, পিন্টু বর্মন, রাজিব ঘোষ, গৌরাঙ্গ দাস প্রমূখ।


































