
সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আলী হোসেন আলার ছেলে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে আদমজী কদমতলী এলাকার একটি পরিত্যক্ত মাঠ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে এই গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রয়াত পিতা ও পুত্রের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে জমে থাকা নানা অভিযোগ পুনরায় আলোচনায় এসেছে। আবার অনেকেও প্রকাশ করেছেন স্বস্তি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, আল-আমিন তার এলাকার একটি পরিত্যক্ত খোলা মাঠে বেশ কিছু লোকজন নিয়ে অবস্থান করছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি বিশেষ দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে এবং ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে এই অভিযান পরিচালিত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আল-আমিনের বাবা প্রয়াত আলী হোসেন আলা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি এলাকায় এক ধরনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তার বিরুদ্ধে মানুষের জমি দখল, আদমজী ইপিজেডের একাধিক কারখানা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। আলী হোসেন আলা খুব অল্প সময়ের মধ্যে শত কোটি টাকার মালিক হন এবং এলাকায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ করেন।
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আলী হোসেন আলার মৃত্যুর পর তার ছেলে আল-আমিন রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওসমান পরিবারের আশীর্বাদে আল আমিন অল্প বয়সেই এলাকার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং বাবার রেখে যাওয়া বলয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন। বাবার মতোই তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আল-আমিন আন্দোলন প্রতিহত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তবে কিছুদিন পর এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন।
অভিযোগ উঠেছে, আল আমিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন এবং বিভিন্নভাবে অর্থায়ন করে আসছিলেন। তার এই কর্মকাণ্ড আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, আল-আমিনের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।
উক্ত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অন্যান্য অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।