নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২১ আগস্ট ২০২৫

অপরাধীদের অভয়ারণ্য ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২৩:১৯, ২০ আগস্ট ২০২৫

অপরাধীদের অভয়ারণ্য ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড

ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বাইক (হোন্ডা) বাহিনী হয়ে উঠেছে প্রধান আতংকের কারন।

ছিনতাই হয়ে উঠেছে এ সড়কটিতে নৈমিত্তিক বিষয়। বাইক বাহিনীর দ্ধারা এ সকল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।  মাঝে মাঝে অটো বা মিশুক যোগে ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে বাইক বাহিনীই সড়কজুড়ে সুযোগ বুজে অধিকাংশ ছিনতাইয়ের জন্ম দিয়ে থাকে। 

রাতের বেলা তো বটেই দিনের আলোতেও সড়কে প্রকাশ্যে চলে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বছরজুড়ে এ সড়কটি জেলার মধ্যে আলোচিত সড়ক হয়ে ওঠে। পুরো বছরেই এই সড়কে চুরি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয়।

তথ্য মতে, ছিনতাইকারীরা বাইকে করে এসে টার্গেট মতো ছিনিয়ে নিয়ে নিরাপদে সটকে পরছে।  ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যাক্তিটি কিছু বুজে উঠার ছিনতাইকারীরা তাদের কর্ম শেষে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পরছে।

 চলতি মাসের ২ তারিখ  রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে পার্কিং করা কভার্ডভ্যানে হামলা চালিয়েছে এক দল ছিনতাইকারী। এসময় এলোপাথারী কুপিয়ে কভার্ডভ্যান চালক মোস্তফার কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

তখন গাড়ির হেলপারের ডাক চিৎকার আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং ধাওয়া করে জুয়েল নামে এক ছিনতাইকারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেন। অপর এক ছিনাইকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

জালকুড়ি বাস স্ট্যান্ড  এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী মাসুম জানান,গত ৭/৮ দিন পূর্বে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোডস্থ বিজিবি ক্যাম্পের সামনে মটর সাইকেল যোগে তিন ছিনতাইকারী এসে তার মিশুক গাড়ী থামিয়ে চাপাতির ভয় দেখিয়ে তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা টাকা লুটে নেয় ছিনতাইকারীর।

দৈনিক উজ্জিবিত বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক কবিরুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার ভোর ছয়টার দিকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য দেলপাড়াস্থ তার বোনের বাড়ী থেকে বের হয়ে ভুইগড় এস,বি গার্মেন্টেসের সামনে  তার অপর দুই সহকর্মীর জন্য অপেক্ষা করছিলো। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটর সাইকেল যোগে তিন ছিনতাইকারী তার সামনে এসে থামে।

এসৃয় একজনের হাতে চাপাতি দেখে সে বুজতে পারে যে এরা ছিনতািকারী। তখন সে দৌড়ে গলির ভিতর প্রবেশ করে এক নৈশ প্রহরীর সামনে গিয়ে দাড়ায়। কিন্ত ছিনতাইকারীরা তার পিছু না গিয়ে ঐ রাস্তা দিয়ে আসা এক অটোরিক্সায় থাকা মহিলাযাত্রীর সর্বস্ব লুটে নিয়ে জালকুড়ির দিকে চলে যায়।

মেহেদী হাসান রাসেল জানান, তিনি প্রায় এ রাস্তায় যাতায়াত করে থাকে। তিনি দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী। সেই ঘটনা বর্ননা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনাই বাইকে আসা  ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছে। একবার তিনি ধাওয়া করেছিলনে কিন্ত জেলা পরিষধের বিপরীতে থাকা গলি দিয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। 

অপর একটি জালকুড়ি কড়ইতলা এলাকায় সেদিন দুটি বাইকে ছয় ছিনতাইকারী একটি মিশুক যাত্রী থেকে ছিনতাই করে শিবু মার্কেটের দিকে চলে যায়। বাইকগুলোতো কোন নাম্বার ছিলোনা।  শুধু অনটেস্ট লেখা ছিলো তাই তিনি বাইকগুলোর নাম্বার নিতে পারেনি।

মোকলেছ নামের একজন জানায় গত ৭/৮ দিন পূর্বে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিং রোডস্থ নম পার্কের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসযোগে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ীতে তুলে তার চোখ বেধে ফেলা হয়।

পরবর্তীতে অপহরনকারীরা তার মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যেগাযোগ করে বিকদশে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে পুনরায় নম পার্কের সামনে ছেড়ে দেয়।

পথচারীরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে কয়েকটি গ্রুপ ছিনতাইয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাইনবোর্ড থেকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটারের মধ্যে মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার ও ইজিবাইকে ছিনতাই করে থাকে।

প্রতিরাতে ধারালো ছুরি হাতে পথচারীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে মামলা মোকদ্দমা হয়রানী মনে করে থানায় অভিযোগ করেন না। পথচারীদের দাবী লিংক রোডে কয়েকটি চেকপোষ্ট ও পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হলে ছিনতাইকারীদের উপদ্রপ কমে যেতো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বাউল গানের নামে অপসংস্কৃতি চলা অন্তত ৮টি গানের ক্লাব রয়েছে। সারারাত প্রতিটি ক্লাবে উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে শতশত নারী পুরুষের নাচ গান চলে।

অপর দিকে ক্লাব গুলোর সামনেই প্রতিদিন লোম হর্ষক ছিনতাই ও খুন সংঘঠিত হচ্ছে। স্টেডিয়ামের সামনে একটি ক্লাব রয়েছে সে ক্লাবের প্রায় ৩০ গজ গত কয়েকদিন পূর্বে ভোরের দিকে এক যুবককে হত্যা করা হয়। পুলিশ এসব অপরাধের বিষয় জেনেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। 

এ সকল বিষয় নিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান,এ সড়কটিতে ছিনতাই নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। হুটহাট করে রাতের অন্ধকারে সড়কটির পাশ দিয়ে যাওয়া অলিগলি থেকে ছিনতাইকারীরা বের হয়ে ছিনতাইকরে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পুলিশ সড়কটি একদিকে থাকলে অপরদিকে ছিনতাই হয়। ছিনতাইকারীদের মূলতঃ টার্গেট হলো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নাইট কোচে আসা যাত্রীরা।  আর তারাই বেশী ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে।

 সেক্ষেত্রে তিনি সেকল যাত্রী এবং চালকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেন যে, নির্দস্ট কাউন্টারে যাত্রীদের নামানো সহ সকাল না হওয়া পর্যন্ত যেনো কেউ কাউন্টার থেকে বের হয়ে তাদের নির্দিস্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা না দেন।

তিনি জানান,প্রতিদিনই পুলিশের একাধিক টিম প্রতিদিনই  সড়কটিতে টইল দিয়ে থাকে। বেশ কিছু ছিনতাইকারী কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া ছিনতাইকারী চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে চিন্থিত করা হয়াছে। তাদেরকে গ্রেফতার করাী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পর্কিত বিষয়: