নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

২৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে

যুবদল নেতা রনির বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৯:০৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

যুবদল নেতা রনির বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঢাকা বিভাগের ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে। আর নারায়ণগঞ্জে ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল না হওয়াতে এখনও টাকা ফেরত চেয়েছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।


আর রনি সেই টাকা দিছি-দিচ্ছি বলে তাল বাহানা করছে বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। আর টাকা ফেরত না দিলে কেন্দ্র লিখিতভাবে অভিযোগ দিবে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন যুবদল নেতা।


তথ্য সূত্র জানায়, গত ১৪ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে করার জন্য জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি কেন্দ্রকে অতিবাহিত করেন। সেই সময়ে কেন্দ্র বলে আমি ফতুল্লা ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল করতে পারবো।


আর প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না। রনির সরল কথা বিশ্বাস করে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃবৃন্দরা। পরে সে ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে প্যান্ডেলের কাজ শুরু করে। তবে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়েই রনি নিজেকে জাহির করতে থাকে আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি। মাঠে কিছু সংখ্যক বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেল করে রনি শুরু করে নিরব চাঁদাবাজি।


পরে মশিউর রহমান রনি নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে বসে মিটিং করে প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করেন। জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দশ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে রনি। রনি বলে যেকোনো মূল্যে নারায়ণগঞ্জে ইফতার মাহফিল করতে হবে। কেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ দিবে তা দিয়ে ইফতার মাহফিল হবে না। অনেকে টাকার প্রয়োজন। 


সবাইকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে হবে। আর যে এই চাঁদা দিবে সেই এই অনুষ্ঠানে থাকবে আর না দিলে তাকে মূল্যায়ান করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। রনির এমন কঠোর বক্তব্যের কারনে একটা পর্যায়ে টাকা দিতে বাধ্য হয় জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা। 


এরপর জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা রনির কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে থাকে। এছাড়াও রনির নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যক্তির কাজ থেকেও শুরু নিরব চাঁদাবাজি।


তবে রনি যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও প্রশাসকের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়েই ফতুল্লায় ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে প্যান্ডেল করেছে। যা গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর পুলিশ এসে ফতুল্লা ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে বাঁধা দেয়। তখন পুলিশ বলে আগে অনুমতি নিয়ে আসেন তারপর এখানে অনুষ্ঠান হবে তা নাহলে হবে না। রাত নয়টার সময় দিলাম এর মধ্যে এসকল খুলে নিয়ে যাবেন। 


তা নাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর কেন্দ্রীয় ও জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছে রনির  নাটকীয় অনুমতি পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর থেকেই কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন মশিউর রহমান রনি। জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত চাওয়া শুরু করে। এখনও পর্যন্ত অনেক যুবদলের নেতাদের টাকা ফেরত দেয়নি রনি এমন অভিযোগ রয়েছে।


যুবদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির পাকনামির কারনেই নারায়ণগঞ্জে জেলা যুবদলের ইফতার মাহফিল বাতিল হয়েছে। বরফকল মাঠে হওয়ার কথা ছিলো সেটাকে রনি যুবদল কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলভাল বুঝিয়ে হঠাৎ করে ভেন্যু পাল্টিয়ে তা নিয়ে যায় ফতুল্লা পঞ্চবট্টি ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে।


জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্যান্ডেল থেকে কাজ শুরু করেছিলেন হঠাৎ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ এসে বাঁধা দেয় এবং অনুমতি নিয়ে আসতে বলে। আর অনুমতি ছাড়া এখানে কোনো অনুষ্ঠান হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন পুলিশ প্রশাসন।


এরপর নারায়ণগঞ্জে ঢাকা বিভাগীয় যুবদলের ইফতার মাহফিলের আয়োজনের দায়িত্ব নেয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার পুত্র জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুবদল নেতা খায়রুল ইসলাম সজিব। 


গত বুধবার তারা সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে তারা প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ প্রশাসন এসে বাঁধা দেয় এবং প্যান্ডেল খুলে ফেলার জন্য বলেন। 


সারাদিন বাপ-বেটা স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করে লাভ হয় নাই। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের থেকে অনুমতি না পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে হলো না যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল।


এদিকে গত ১৪ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল বাতিল করা হয়েছে। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের চেষ্টা বিফলে যায়।  আর পিছনে নাটের গুরু হিসেবে ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি।


কারন হিসেবে যুবদলের নেতাকর্মীরা বলেন, মশিউর রহমান রনি মামাতো ভাই হলো জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধান ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। এবং তার মামা মাসদাইর আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিন প্রধান। 


এছাড়াও মশিউর রহমান রনি'র শ্বশুর প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আর রনির বাবা মোস্তফা কন্ট্রাক্টর হলো সরকারি ঠিকাদার। এসকল কিছুর প্রভাব খাটিয়ে রনি নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করে থাকেন। 


যার কারনে রনি ফাজিলপুর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠান করতে না পেরে সোনারগাঁওয়ের অনুষ্ঠানও বানচাল করিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আর রনির পাকনামির কারনেই নারায়ণগঞ্জে হলো না ঢাকা বিভাগীয় যুবদলের ইফতার মাহফিল এমনটাই অভিযোগ তৃনমুল যুবদলের নেতাকর্মীদের।