নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪

শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

এহসান বিন মুজাহির 

প্রকাশিত:০৪:২৬, ১৯ মার্চ ২০২২

শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

শবেবরাত একটি মহিমান্বিত রাত। শবেবরাত শব্দটি ফারসি। শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রজনী। এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বরাত’। হাদিসে শবেবরাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরাত বলা হয়েছে। 

আমাদের দেশে এ রাতটি শবেবরাত নামে অধিক পরিচিত। শবেবরাত একটি পুণ্যময় রজনী। ইবাদতে প্রশান্ত হওয়ার রাত। ভেজা চোখে মোনাজাতে কাটানোর রাত। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। চাওয়া-পাওয়ার রাত।

মহিমান্বিত এ রাত অশেষ ফজিলতের। হজরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, শবেবরাত হলো-‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’। অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫তম রজনী। 

বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৯০, সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫)।

হজরত আসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর তার পিতার সনদে দাদা হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা শাবানের ১৫তম রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং সব পাপীকে (যারা ক্ষমা প্রাার্থনা করে) ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক (আল্লাহর সঙ্গে সমকক্ষ সাব্যস্তকারী) ও মুশহিন (হিংসুক) ছাড়া। (বায়হাকি : ৩৮৩৫)।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.), আবু সালাম আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা), আবু মুসা আশআরী (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবু বকর (রা.), আউফ ইবনে মালিক (রা.) ও হজরত আয়েশা (রা.) সবাই এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। 

হাদিস বিশারদরা উক্ত হাদিসের রাবিদেরকে ছেক্বাহ তথা বিশ্বস্ত বলেছেন। মূল কথা হাদিসটি ‘সহিহ’। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২ খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১৮)। এ রাতে করণীয় সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, হজরত আলী বিন আবু তালীব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। 


কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো রোগাক্রান্ত? 

আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)।

হজরত আলা ইবনুল হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম।

তার বৃদ্ধঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? 

আমি উত্তরে বললাম, না-ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। তখন নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? 

আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন এরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। 

আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রাার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (বায়হাকি : ৩৮২, তাবরানি : ১৯৪)। 

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে যাবতীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন। আর শবেকদরে তা নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলদের অর্পণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি ১২৬)।

সম্পর্কিত বিষয়: