নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

২৯ এপ্রিল ২০২৪

রূপগঞ্জে মেলার নামে চাঁদাবাজি, জুয়া ও মাদকের আসর   

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৪৮, ২০ জুলাই ২০২৩

রূপগঞ্জে মেলার নামে চাঁদাবাজি, জুয়া ও মাদকের আসর   

রূপগঞ্জ উপজেলার শিংলাবো এলাকায় প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে ১০ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অনুমোদন ছাড়া মেলা আয়োজনের খবরে হতবাক সংশ্লিষ্টরা। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে একটি চক্র এভাবে নানা ইস্যুতে মেলার আয়োজন করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। 


প্রতিদিন মেলায় থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা চাঁদা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে মেলার নামে চলে জুয়া ও মাদকসহ নানা বেআইনি কর্মকান্ড। এছাড়া সন্ধ্যা হলেই মেলার ভেতরে বসছে মাদকের আসর। এ কারণে মেলাকে ঘিরে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।   


জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই আতিকুর রহমান মঈন নামে এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের শিংলাবো এলাকায় মেলার আয়োজন করার অনুমতি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি আবেদন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে আবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রশাসন মেলা বসানোর আবেদন নাকচ করে দেন।


 কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৮ জুলাই থেকে আতিকুর রহমান মঈন, স্বপান, সোহেল, আরিফ, শ্যামলসহ কয়েকজন মিলে মেলার আসর বসায়। মেলায় নাগর দোলা, ইলেকট্রিক নৌকা, খেলনার দোকান, কসমেটিক্সের দোকান, ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় অর্ধশত দোকানপাট বসায়। 


খেলনা, কসমেটিক্সের দোকান ও ফুচকার দোকান থেকে প্রতিদিন ৫’শ থেকে ৮ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। এছাড়া ইলেকট্রিক নৌকা ও নাগরদোলা থেকে ১০ দিনের জন্য প্রতিটি থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। 


এছাড়ার মেলা ভেতরে বসানো হয়েছে লটারীর নামে জুয়ার আসর ও মাদকের আসর। এতে করে মেলাটি মাদকের হাটে পরিনত হয়েছে। মেলার আশেপাশে বেশকিছু জান্নাতুল নাঈম মহিলা মাদ্রাস, আল-ইমরান মডেল মাদ্রাসা, রওজাতুল আফতাফ আরবি কোচিং সেন্টার, উদয়ন কিন্ডার কার্টেন, হযরত আছমা মহিলা মাদ্রাসা, তানজীমুল আরাবিয়া ইন্টারন্যাশনাল কওমী মাদ্রাসা স্কুলসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 


মেলার ভেতরে স্পিকারে জোরে জোরে গান বাজানোর কারণে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যঘাত ঘটছে। এদিকে মেলার কারণে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে মেলায় ঘুরাঘুরি করছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। অবৈধভাবে মেলা প্রশাসন বন্ধ করে দিয়ে আসলেও পরে তারা তা পূনরায় আবার চালু করে মেলার আয়োজকরা।    

 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, মেলার ভেতরে স্পিকারে জোরে জোরে গান বাজানোর কারণে শিক্ষার্থীদের লেখপড়ায় অনেক ব্যাঘাত ঘটছে। যারা মেলার আয়োজন করেছে তারা অনেক প্রভাবশালী এ কারণে কেউ কিছু বলতে পারছে না। 


স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মেলার ভেতরে খেলনা খাবার বিক্রির পাশপাশি মাদক বেচাকেনাও চলছে প্রকাশ্যে। এতে করে মেলার ভেতরে অস্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে মেলার ভেতরে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

 

এছাড়া কিশোর ও তরুণ বয়সী ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে মেলার ভেতরে সময় কাটাচ্ছে যেটি খুবই দুঃখজনক। মেলার আয়োজক কমিটি প্রভাবশালী হওয়ার তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। 


এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক আতিকুর রহমান মঈন বলেন, মেলার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই মেলা শুরু করবো।


রূপগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, মেলার অনুমোদন দেয়া হয়নি। এ কারণে পুলিশ গিয়ে মেলা বন্ধ করে আসে। তবে তারা যদি মেলা পূনরায় চালু করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এ ব্যপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, মেলার বসনোর অনুমতি প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি। যেহেতু তারা অনুমতি ছাড়া মেলা বসিয়েছে রূপগঞ্জ থানা ওসিকে বলে দিয়েছি মেলা ভেঙ্গে দিবে। 


ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান মারুফ বলেন, মেলা অনুমতি এ ধরনের একটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে। আবেদনটি আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। 


এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, আমি এ ধরনের আবেদন পাইনি। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।