নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

০৫ মে ২০২৪

ইউপি চেয়ারম্যান অবরুদ্ধসহ আহত ২০

রূপগঞ্জে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা, সংঘর্ষ হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৮:১৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

রূপগঞ্জে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা, সংঘর্ষ হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর রূপগঞ্জে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও গাড়ি এবং মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়। 

এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। 

খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে উদ্ধার করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ির আগুন নেভায়। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়াকে হারিয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করেন দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার লোকজন। 

মঙ্গলবার দুপুরে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কম্বল বিতরণের আয়োজন করেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার। একই সময় দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের গেইটের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নির্বাচনী পরবর্তী আলোচনা সভার আয়োজন করেন গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থিত স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। 

একই জায়গায় পাশাপাশি দুটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজন জমায়েত হতে থাকে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর দেড়টার দিকে দুই পক্ষের লোকজন লাঠি সোটা ও ধারালো অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে একটি পক্ষের হামলাকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারের ব্যবহৃত হেরিয়ার গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুরো গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভিতরে নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। 

পরে আরেকটি পক্ষের হামলাকারীরা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে থাকা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনাও ঘটে। 

এদিকে, আওয়ামীলীগ অফিসে হামলা ভাঙচুরের প্রতিবাদে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।

এ বিষয়ে দাউদপুর পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে এখানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে চেয়ার টেবিল দেয়া হয়।

কোন কিছু বোঝার আগেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গেট ভেঙ্গে আমার লোকজনের উপর হামলা করে এবং গাড়ি ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। চেয়ার টেবিল ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। 

দাউদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী পরবর্তী আলোচনা সভার আয়োজন করি। সেখানে নেতাকর্মীরা বসেছিলেন। এ সময় নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। 

এ সময় তারা অফিসে থাকা চেয়ার টেবিল, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোলাম দস্তগীর গাজীর টানানো ছবি ভাঙচুর করে। 

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপঙ্কর চন্দ্র সাহা বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 

ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এবং তদন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।