নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২৭ আগস্ট ২০২৫

পুলিশের সাথে প্রকাশ্যে ঘুরছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কিলার আক্তার 

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৬:৫৯, ২৬ আগস্ট ২০২৫

পুলিশের সাথে প্রকাশ্যে ঘুরছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কিলার আক্তার 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা কুতুবপুর এলাকার চিহ্নিত  মাদক ব্যবসায়ী কিলার আক্তার এখন প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় অব্যাহত অপরাধ চালাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আক্তারের মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধের ফলে তার সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকারও বেশি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিলার আক্তার শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন। তখন থেকে তার কর্মকাণ্ড ছিল চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা ও ভয়ংকর সন্ত্রাস। কুতুবপুরের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মীরুকে হত্যার চেষ্টা করার মতো ঘটনা তার হাতে ঘটেছে। ফতুল্লার শীর্ষ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আক্তার গড়ে তুলেছে বিশাল অপরাধ সম্রাজ্য, যা বৃহত্তর পাগলা ও কেরানীগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে কিলার আক্তারের বিরুদ্ধে আইনের কার্যক্রম কার্যকর হয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের  তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামের আর্শীবাদে তিনি মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সরাসরি পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  এমনকি পুলিশের সঙ্গে ঘুরে এসে শহরের বিভিন্ন আসামিকে গ্রেফতার করাতে দেখা যায়।এমন একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। যেখানে দেখা যায় ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ওয়াসিম এই শীর্ষ অপরাধীকে সাথে নিয়ে আসামি ধরতে গিয়েছেন। এ বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ওয়াসিম বলেন আমি জানতাম না এটা আক্তার। সে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে। কিন্তু সাথে সাথে তাকে এই অপরাধীর আসল পরিচয় জানানোর পরও সে আখতার কে গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয়।  স্থানীয়রা প্রশ্ন করছে।কিভাবে একজন শীর্ষ অপরাধীর সঙ্গে পুলিশের এমন ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠল, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছে।অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী মামলা। সে এর আগেও ধর্ষণ মামলাও গ্রেফতার হয়েছিলেন। 

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কিলার আক্তার রাজনৈতিক নেতার পরিবর্তন করে বর্তমানে কুতুবপুর বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সূত্র  বলছে, কুতুবপুরের যুবদল নেতা পরিচয় দানকারী ল্যাংড়া লিখন  এখন এই আক্তারের খুব ঘনিষ্ঠ। এই লিখনের অফিসে প্রতিদিন আক্তার কে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তার সাথে সক্ষতার একাধিক ছবি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এই কিলার আক্তার  প্রশাসন এবং বিএনপির নেতাদের নাম ব্যবহার করে এবং তাঁদের পাশে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, যা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করছে।

কিলার আক্তারের অপরাধী জীবনযাত্রা চোখে পড়ার মতো। বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে, তৎকালীন সাংসদ   কবরীর সময় কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরুকে গুলি করার পর তিনি পাগলা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়াটারে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখে কুতুবপুর জুড়ে গড়ে তোলেন বিশাল মাদক বাজার।

২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট কাউন্টার টেরোরিজম নারায়নগঞ্জ জেলা শাখার হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের সময় উদ্ধার হয় কোটি টাকার ২৫০ কেজি গাঁজা, ২ হাজার পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ৪০০ পুরিয়া হেরোইন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে কিলার আক্তার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই জামিনে বের হন। এরপর তিনি পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সোর্স হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাদক ব্যবসা ও প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকেন।

সর্বশেষ, চলতি বছরের মার্চ মাসের ৩ তারিখে বাসা থেকে ডেকে এনে পাগলা-নুরবাগস্থ টর্চার সেলে আদর্শ নগরের আব্দুর রাজ্জাকের দুই ছেলে মারধর করে অস্ত্রসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। সেই সময় ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় কিলার আক্তারও উপস্থিত। একইভাবে, তার প্রতিপক্ষ মিথুনকে গ্রেফতারের সময়ও পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে, যার সিসি ফুটেজ ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

স্থানীয়দের মতে, কিলার আক্তারের মতো একজন শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী পুলিশ এবং প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এত দীর্ঘ সময় অপরাধ চালাতে পারত না। স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত, প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ এবং প্রশ্ন তুলছে—এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কীভাবে নিরাপদে চলাফেরা করছে।

সচেতন মহল এবং সাধারণ জনগণ দাবি করছে—কিলার আক্তারের মতো সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয়। প্রশাসন ও পুলিশের ঘনিষ্ঠতার এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া কুতুবপুরসহ আশেপাশের এলাকায় শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত বিষয়: