নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবারও মাদরাসা ছাত্রদের বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীমের (৩২) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে স্থানীয় একদল ব্যক্তি ৪ লাখ টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে একই এলাকায় একই শিক্ষক দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকার নূরে মদিনা মাদরাসার মুহতামিম শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীম দুই ছাত্রকে রুমে ডেকে বলাৎকার করেন।
ঘটনাটি জানাজানি হলে ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করে এবং পুলিশ শিক্ষক শরীফুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
পাঁচ বছর পর, সেই একই শিক্ষক আবারও একই ধরনের জঘন্য অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচনায় এসেছেন।
গত ১০ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকার জমজম টাওয়ারে অবস্থিত নূরে মদিনা তাহফিজুল কুরআন মাদরাসায়, যেখানে শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীম মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা সামসুল হক তালুকদার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ভবনটির মালিক।
অভিযোগ অনুযায়ী, শরীফুল বিভিন্ন সময়ে মাদরাসার পাঁচ ছাত্রকে তার কক্ষে ডেকে বলাৎকার করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কৃষকদল নেতা জাকির মোল্লা ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু এসময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামি ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ‘পল্টি দেলোয়ার’ ঘটনাটি “মীমাংসা করে দেওয়ার” আশ্বাস দেন।
এরপর স্থানীয় কৃষকদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির মোল্লা, ফরিদ মাস্টার ও জালালকে নিয়ে সালিশ বসানো হয়। সেখানে অভিযুক্ত শিক্ষক শরীফুলের পিতা সামসুল হক তালুকদারকে প্রথমে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও, পরবর্তীতে ৪ লাখ টাকায় বিষয়টি “মীমাংসা” হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৪টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তবে একটি পরিবার কোনো টাকা পায়নি।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জরিমানার টাকার মধ্যে কৃষকদল নেতা জাকির মোল্লা নিজে ৬০ হাজার টাকা নেন এবং সাংবাদিকদের দেওয়ার কথা বলে আরও ৩০ হাজার টাকা নেন।
এছাড়া পরে সাংবাদিকদের মধ্যে আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয় বলে জানা যায়। বাকি টাকা ভাগাভাগি করেন দেলোয়ার ও ফরিদ মাস্টার।
এলাকার লোকজন জানান, ঘটনার পরও শিক্ষক শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়নি; তিনি এখনো এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের পরিবার আতঙ্কে আছে এবং মাদরাসাটি এখনও চলমান।
ভুক্তভোগী ছাত্রদের পরিবার বলছে, টাকার বিনিময়ে এমন জঘন্য অপরাধের বিচার বন্ধ করা নয়, বরং অভিযুক্ত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শরীফুল ইসলাম ইব্রাহীমের বাবা ও মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামসুল হক তালুকদারকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনি হাউজিং এর ফরিদ মাস্টার আর দেলোয়ারের সাথে কথা বইলেন।
এ বিষয়ে বিচারক ফরিদ মাস্টারকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি আর্মির কন্টাকটারি করি। ভুক্তভোগীদের একজন আর্মির নাতি হয়। তারা প্রথমে নারায়ণগঞ্জে গেলে সেখান থেকে তাদেরকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পাঠায়।
পরে তারা থানায় গেলে সেখানে তাদেরকে বলে বিষয়টা সামাজিকভাবে মীমাংসা করুন। কারণ বাচ্চাকে নিয়ে কোর্টে থানায় যেতে আনইজি ফিল করবেন।
এরমধ্যে আমরা হাউজিং এর যারা ছিলাম তাদের বক্তব্য নিয়ে আমরা নিজেরা মীমাংসা করে কিছু জরিমানা করে দিছি।
কত টাকা জরিমানা করেছেন এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, প্রায় তিন লাখ টাকা। আমরা প্রথমে চার লাখ টাকা ধার্য করেছিলাম।
ভুক্তভোগীদের পরিবারকে কত টাকা দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে বলে,আমাদের এখানে স্থানীয় যারা ছিল তারা ঘোরাফেরা করেছে এজন্য তাদেরকে লামসাম কিছু দিছি।
তাদেরকে কত দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আপনার জানার দরকার নাই। আপনি এসে সরাসরি আমার সাথে কথা বলেন। এভাবে ফোনে কথা বললে হবে না। আপনি সামনে আসলে একরকম টেলিফোনে একরকম।
আমি বিচারের সাংবাদিকদের খাবারের জন্য কিছু টাকা দিছি। আর আমরা যে টাকা পেয়েছি সে টাকা ভিকটিমের সামনে তাদেরকে সহ দিয়ে দিছি।
এ বিষয়ে দেলোয়ার বলেন, আমরা জোহরের নামাজ পড়ে আসার সময় এলাকার কিছু ছেলেপেলে আছে এর মধ্যে একটা ছেলে আছে বিএনপির জাকির কইরা নাম। ওরা এক হুজুরকে ধরে আনসে।
পরে হাউজিং অফিসে নিলে আমি গিয়ে দেখি ঘটনা বলাৎকারের। আমি এখানে পাঁচ সাত মিনিট ছিলাম। পরে আমি চলে আসছি। সেখানে পাঁচ সাত জন সাংবাদিক ছিলো আর ফরিদ মাস্টার ছিলো। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে পুরো তথ্য পেয়ে যাবেন। আমি এর বেশি কিছু জানি না।
টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শুনসি বিএনপির এক নেতা জাকির, সে কিছু পাইসে, সাংবাদিকগো দিসে আর ভিকটিম ৪জনকে কিছু দিসে। এর বেশি আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ৪নং ওয়ার্ড কৃষক দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বলেন, আমাদের কাছে এ ঘটনায় কেউ কোন অভিযোগ বা যোগাযোগ করেনি।
পুলিশ কখনও কোন ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে অনুৎসাহিত করে না। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার আসলে অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


































