নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের নিস্ক্রীয়তায় অপরাধীদের আস্ফালন

ইকবাল কবীর

প্রকাশিত:০৪:০৪, ২৬ আগস্ট ২০২২

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের নিস্ক্রীয়তায় অপরাধীদের আস্ফালন

সিদ্ধিরগঞ্জে দিন দিন পুলিশের ভুমিকায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পুলিশের উদাসীনতা আবার কোন কোন সময় নিস্ক্রীয়তায় অপরাধীদের আস্ফালন চলছে।

 

বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জের প্রত্যোকটি পাড়া মহল্লায়  কিশোরগ্যাংয়ের উৎপাত এবং পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই মাদক দ্রব্য, এই কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে।


 শুধু তাই নয়, কোন কোন এলাকায় প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়িদের। বীরদর্পে মাদকের আগ্রাসন চললেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কার্যকরি কোন প্রদক্ষেপ নেই বললেই চলে।

 

তবে মাঝে মধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে মাদকের বিরুদ্ধে ফটোশেসন মার্কা দুই একটা অভিযান চালিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে পুলিশ।

 

পুলিশের নিস্কীয়তায় গত দুই বছর ধরে ভয়াবহভাবে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকাকে মাদকের বড় একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক কারবারীরা।

 

এই দুই বছরে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৩, র‌্যাব ১০ ও র‌্যাব-১১ যে পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে সেই অনুপাতে পুলিশের কার্যক্রম শুন্যের কোঠায়।

 

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতার সাথে যুক্ত হয়ে ভয়ঙ্করভাবে কিশোর গ্যাং। কিশোরগ্যায়ের হামলায় ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। থানার ১০টি ওয়ার্ডে কিশোরগ্যাংয়ের মাস্তানী চলছে বীরপর্দে।

 

গত দুই বছরের কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোরগ্যাং বাহিনী। কিন্তু পুলিশের ঘুম ভাঙ্গেনি। কিশোরগ্যাংয়ের আতঙ্কে মানুষ  যখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় তখন ১৪ আগস্ট র‌্যাব-১১ এর একটি টিম সিদ্ধিরগঞ্জে মিজমিজি ২ নাম্বার ওয়ার্ডের আলোচিত কিশোরগ্যাং বাহিনী “টেনশন গ্রæপ” এর প্রধানসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে।

 

এরই মধ্যে টেনশন গ্রæপের অস্ত্র চালানো ও নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ গত দুই বছরে পুলিশ এই টেনশন গ্রæপকে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মুলে কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি।

 

সবশেষ বুধবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডে মিজমিজি টেরা মার্কেটে কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেনের অফিস ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসী টাইগার ফারুক বাহিনী।

 

এই বাহিনী গত কয়েক বছর ধরে এলাকার সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে পুলিশ টাইগার ফারুকের আস্তানায় তালা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আস্তানার ভেতর অভিযান চালায়নি পুলিশ।

 

এলাকায় চাউর আছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে পুলিশ দুই/তিনদিন পরই টাইগার ফারুকের আস্তানা খুলে দেয়। এরপরই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে টাইগার ফারুক বাহিনী। 


এলাকাবাসী জানায়, পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকার কারণেই কাউন্সিলর অফিসে হামলা করার সাহস দেখিয়েছে টাইগার ফারুক বাহিনী। 


এছাড়া চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলা, শিমরাইল মোড়ের ফুটপাত, শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, চোরাই জ্বালানী তেল ব্যবসায়িদের সাথে মাসোহার বিনিময়ে সখ্যতা সব মিলিয়ে থানা পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা নেই বললেই চলে।

 

মজার বিষয় হচ্ছে, গত দুই বছর দেখা গেছে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে এর অনুষ্ঠান হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ি, পরিবহন চাঁদাবাজ, চোরাইল জ্বালানী তেল ব্যসায়িদের টাকায়।

 

এমনকি সমাজের অপরাধী শ্রেণির মানুষকে দেখা যায় ওপেন হাউজ ডে’র অনুষ্ঠানে চেয়ার পেতে বসে থাকতে। ফলে ওপেন হাউজ ডে নিয়ে মুখরোচক নানা কথা চালু রয়েছে সাধারণদের মধ্যে।

 

থানার  ওসি, দুইজন ইন্সেপেক্টর ও কতিপয় দারোগাদের পছন্দের লোকজন দিয়ে ভরে রাখা হয় ওপেন হাউজ ডে এর অনুষ্ঠানস্থল। যাতে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সামনে কেউ পুলিশের ভুমিকা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে না পারে।


এছাড়া ভুমিদস্যু ও পরিবহন চাঁদাবাজদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো। তাদের পাশাপশি চলছে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে গেলে এলাকার ছিচকে মাস্তাররা বাধ্য করে তাদের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিতে। আর না নিলে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়, না দিলে রাতের অন্ধকারে নির্মাণ সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়।

 

এই ছিচকে মাস্তানদের শেল্টার দেয় রাজনৈতিক আবরনে এলাকার ‘বড় ভাই’। পুলিশের সাথে এই বড় ভাইদের বিশেষ সখ্যতা থাকায় কেউ প্রতিবাদ তো দুরের কথা ভোগান্তির শিকার হলেও পুলিশের কাছে যায় না।


অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ আইনশৃখলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা এবং অপরাধ দমনের চেয়ে সামারি বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী। বিষয়টা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে, পুলিশ আসছে চাকরী করতে।

 

আর বেতনের বাইরে মোটা অংকের টাকা কামানোর জন্য। কার কি হলো, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক থাকলো কি থাকলো না, তাদের মাথা ব্যাথা নেই।


ষাটোর্ধ্ব আক্কাস আলী বলেন, আদমজী জুট মিল যখন চালু ছিল তখন প্রায় আদমজীর চারপাশের এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগে থাকতো। ওই সময়ের ভয়াবহ সংঘাত সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একজন ওসির নেতৃত্বে ৮/১০ এসআই ও এএসআই।

 

এখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লোকসংখ্যা বাড়লেও আদমজী জুট মিল নাই। তারউপর একজন ওসি, দুই ইন্সপেক্টর এবং অর্ধ শতাধিক এসআই ও এএসআই থানার দায়িত্ব পালন করছে।

 

বিপুল সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ কনস্টবল থাকার পরও জেলার ৭টি থানার মধ্যে সবচেয়ে ছোট একটি থানা এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।


যদিও প্রায় দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ওসি মশিউর রহমান বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিয়ে বেড়ান মাদকের সাথে কোন আপোষ নাই। ফুটপাত, পরিবহন সেক্টরসহ কোন সেক্টরে কোন চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা।


২৩ আগস্ট সকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় নবাগত পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল পিপিএম,বার বলেছেন, সমাজে অপরাধের পিছনে অন্যতম কারণ মাদক।

 

মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। মাদক নির্মূলে যেসব কাজ করা দরকার সেগুলো আমরা করব। মাদক মুক্ত সমাজ করা আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য।

 

দ্বিতীয়টি হলো কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ। কিশোর অপরাধ সমাজে নৈতিকতাকে নষ্ট করছে। সচেতন মানুষ সকলে একযোগে কাজ করলে কিশোর গ্যাং এর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রতিরোধ করা সম্ভব।  

 

পুলিশ সুপার আরও বলেছেন, কিশোর অপরাধ এর সাথে মোটরসাইকেলের একটা সম্পর্ক আছে। কিছুদিনের মধ্যে মাদক ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অপারেশন হবে।  

 

যেসব মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নেই, কাগজপত্র আছে তারা রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেন। কিন্তু যাদের কোনটি-ই নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

 

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে হয়তোবা আমি অপারেশনে যাবো। এখন দেখার বিষয় সিদ্ধিরগঞ্জবাসী নবাগত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে কতটা স্বস্থি পায়।