
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকায় নূর নবী নামের এক ব্যক্তির লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, রংমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রী, গার্মেন্টস কর্মী, রিকশাচালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ফুটপাত ব্যবসায়ীরাও তার চাঁদার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
একাধিক ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, হাউজিং এলাকায় কেউ কাজ করতে এলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা দিতে হয়। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকি, মারধর, এমনকি শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পান, কারণ নূর নবীর রয়েছে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয় এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছায়া।
এক ভুক্তভোগী রং মিস্ত্রি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা দিনে যা আয় করি, তার একটা অংশ চাঁদা হিসেবে দিতে হয়। না দিলে কাজ করতে দেয় না, হুমকি দেয়। একবার টাকা না দেয়ায় আমার লোকজনদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল।”
নূর নবী নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন এসব অপকর্ম।
হাউজিং এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সবুজ জানায়, “আমাদের দিনে যা আয় হয়, তার এক-চতুর্থাংশ দিয়ে দিতে হয়। না দিলে হাউজিং এলাকায় কাজ করতে দেয় না। পুলিশকে বলেও লাভ হয় না—সব জানে, তবুও চুপ।”
শুধু শ্রমিক বা মজুর নয়, বাড়ি নির্মাণ করতে গেলেও নূর নবীর চাঁদার ফাঁদে পড়তে হয়। চাঁদা না দিলে তার লোকজন নির্মাণসামগ্রী লুট করে নেয়, ভয় দেখায় অস্ত্রের মুখে।
স্থানীয় এক বাড়িওয়ালা কামরুল ইসলাম বলেন, “বাড়ির কাজ শুরু করতেই দুই দফায় রড ডাকাতি করেছে। আমার চেনা মানুষজন বলেছে, অভিযোগ করে লাভ নেই। তাকে চাঁদা দিয়েই থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। তাও মিস্ত্রিরা কাজ করতে পারছে না, চাঁদা না দিলে বাধা দেয়।”
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একাধিকবার মৌখিকভাবে থানায় এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। বরং যারা অভিযোগ করার সাহস দেখিয়েছেন, তারা পরে আরও বিপদে পড়েছেন।
এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, থানায় গিয়ে কী করব? উল্টো তার লোকজন জানলে বিপদ বাড়ে।”
গার্মেন্টস কর্মী আরিফ হোসেন জানান, “বেতন পাওয়ার পর বাসায় ফেরার পথে নূর নবী আমার পথ আটকায়। টাকা না দেওয়ায় আমাকে মারধর করে, গলায় ছুরি ধরে সব টাকা নিয়ে যায়। সেই মাসে ভাড়াও দিতে পারিনি। ধার করে চলেছি।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও দুর্নীতির জালেই এ ধরনের ‘গডফাদার’রা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে—একটি স্বাধীন দেশে দিনের আলোয় খোলা রাস্তায় এভাবে গরিব মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ—এটাই কি ন্যায়বিচার?
নিম্ন আয়ের মানুষরা বলছে, “এভাবে আর কত? আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আমাদেরও তো বাঁচার অধিকার আছে। কেউ কি দেখবে না আমাদের দিকে?”
সব অভিযোগ অস্বীকার করে নূর নবী বলে, আমি এমন কোন কাজই করিনি। সাহেব আলীর লোকজন আমার নামে এসব করে। কিন্তু আমি এমন কোন কাজের সাথে জড়িত নাই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন শাহীনুর আলম বলেন, র্যাব এবং আমরা নূর নবীকে খুঁজতেসি। তার নামে অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। চাঁদাবাজের কোন ঠাঁই নেই। আমরা একবারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।