নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৯ মার্চ ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ

নগরীতে মাছের বরফে বাহারী শরবত, স্বস্তি মিললেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি

নুসরাত জাহান সুপ্তি

প্রকাশিত:০২:৫৭, ১০ মে ২০২২

নগরীতে মাছের বরফে বাহারী শরবত, স্বস্তি মিললেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি

গত ক’দিন ধরে চলছে প্রচন্ড তাপদাহ। গ্রীষ্মের দাবদাহ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। ফলে শরীর জুড়াতে ঠান্ডা পানীয়র প্রতি ঝুঁকছে মানুষ। চাহিদা বাড়ায় নারায়ণগঞ্জ নগরের অলিগলিতে বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো রঙিন পানীয় ও বরফ মেশানো লেবু শরবত বিক্রির ধুম পড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এসব শরবত-জুস পানে তৃষ্ণা মিটলেও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়ছে। এসব পানীয়তে টাইফয়েড, কলেরা ও ডায়রিয়ার মতো রোগের জীবাণু রয়েছে। 


গ্রীষ্ম মৌসুম এলেই শহরের ফুটপাতে জুস কিংবা ঠান্ডা পানীয় এর ভ্রাম্যমান দোকানিদের সংখ্যা বেড়ে যায়। লেবু, ট্যাংক, আখের রসসহ নানা ফলের শরবত বিক্রি করেন তারা। প্রচন্ড গরমে এসব পানীয় বেশ জনপ্রিয়। এ সুযোগে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে এসব পানি তৈরী করে প্রতিদিন  হাজার হাজার টাকার ব্যবসা করছেন মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। 


এদিকে তৃষ্ণায় পিপাসা মিটাতে পথচারী ও নিন্মবিত্তরা নিশ্চিন্তে এসব পানীয় পান করছেন। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা। 
হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) সূত্রমতে, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের শরাণাপন্ন হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ¦র নিয়ে আগত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

 


সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রধান ফটকের সামনে ৬-৭ টি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ঠান্ডা পানীয়। ড্রাম ভর্তি রঙিন পানিতে (সিভিটা, ইসপি, প্যালিটা সফট ড্রিংক পাউডার মেশানো পানি) লেবু, বিট লবণ ও মাছ সংরক্ষণের বরফ মিশিয়ে তৈরী প্রতি গ্লাস রঙিন শরবত ১০ টাকা। এছাড়াও আখের শরবত প্রতি গ্লাস ২০ টাকা, মালাই শরবত ১০ টাকা, লেবু-বরফ মেশানো শরবত ৫ টাকা করে বিক্রি করছেন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে এসব দোকানিদের চাহিদা বেশি। এছাড়াও শহরের জনবহুল এলাকাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মৌসুমী পানীয় ব্যবসায়ীরা শরবত বিক্রি করেন। পিপাসার্ত শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে শরবতের নামে পান করছে অস্বাস্থ্যকর এসব পানীয়। ছোট একটি বালতিতে রাখা পানিতে বারবার গ্লাস ধোয়ায় নোংরা হয়ে যাওয়া পানিতে আবারও গøাস ধুয়ে বাচ্চাদের শরবত সরবরাহ করা হচ্ছে। 


 শহীদ মিনারের সামনে বিক্রেতা শফিক লেবুর শরবত বিক্রি করেন। তিনি তার শরবত প্রক্রিয়া জানিয়ে বলেন, গরম বাড়লে লেবু পানি ভালো বিক্রি হয়। মাছ ঘাট থেকে আমাদের বরফ দিয়ে যায়। প্রতিটা বরফ ৫০ টাকা দিয়ে কিনি। এই বরফ, বিট লবণ আর লেবু দিয়ে শরবত বানাই। পানি সংগ্রহের স্থান হিসেবে পাশর্^বর্তী একটি কল থেকে সিটি করপোরেশনের সাপ্লাইয়ের পানি সংগ্রহ করেন  বলে জানান।  


তিনি আরো বলেন,  রোজার শুরু থেকে শরবত ভালোই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার ফিল্টার পানির শরবত বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন অনেক মানুষ শরবত খায়। বিক্রি করেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। তার কথায় সম্মতি জানিয়ে পাশের মালাই শরবত বিক্রেতা বলেন, আমাদের এমনই বেচা হয় কিন্তু খরচাও আছে। জিনিসের খরচ ছাড়াও প্রতিদিন লাইনম্যানরে (চাঁদাবাজ) ৭০ টাকা দিতে হয়।  


 জানা যায়, প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ শফিকের দোকান থেকে শরবত খান। কিন্তু তার দোকানে গøাস মাত্র তিনটি। একজনের খাওয়া শেষ হলে সেই গ্লাস একই পানি দিয়ে বারবার ধোয়ার পর সেই গøাসে আবারও পরিবেশন করা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা যায় প্রত্যেকটি দোকানে।  


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস কে ফরহাদ এসব পানীয় ক্ষতিকর দিক জানিয়ে বলেন, গরমের সময়ে প্রয়োজনীয় পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু  রাস্তার ধারে ভ্যানে খোলা অবস্থায় যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কারণ যে পানি রাস্তার পাশে বিক্রি হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে পানির পাত্রটি ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। গøাসগুলো ঠিকমতো ধোয়া হচ্ছে না। ফলে জীবাণু থেকে যায়। একই গøাস বারবার ব্যবহারের ফলে একজনের জীবাণু আরেকজনের মধ্যেও যাচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সহজেই সংক্রমিত হচ্ছে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর পানীয় করায় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।  এছাড়াও দূষিত পানির কারণে অন্যান্য রোগ বাড়ছে। বিশুদ্ধ ও ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: