“প্রিয় মুসুল্লি একরাম, মসজিদের ট্যাংকিতে পানি নাই, আপনারা নিজ দায়িত্বে অজু করে মসজিদে আসবেন”। শুক্রবার (৪ জুন) জুম্মার দিন দুপুর সোয়া ১২টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডের রেললাইন বায়তুল নূর জামে মসজিদের মাইকে মোয়াজ্জেন এমন ঘোষণা দেন। কারণ ওই ওয়ার্ডে ১ জুন বিকাল থেকে সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ নেই। রিজার্ভ ট্যাংকির পানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর মসজিদে পানি সংকট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন মুসুল্লিরা। শুধু এই মসজিদ-ই নয় ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি মসজিদ ও গৃহীনিরা পানির জন্য চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গত ৪দিন ধরে। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের নতুন সিস্টেম মুখ থুবড়ে পড়েছে শুরতেই। এমনটাই মনে করছেন ভুক্তভোগিরা।
তথ্যমত, গত ২৪ মে সিটি করপোরেশন এক জরুরী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নগরবাসীকে জানায়, ১ জুন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুই দফায় ৮ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করেন। নির্দেশনা মতে ১ জুন ভোর থেকে নতুন নিয়মে পানি সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু ওইদিন বিকাল থেকেই নাসিকের বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়। যাদের ডিপ টিউবওয়েল আছে তারা পানি সংকটে পড়ছেন না। যারা নাসিকের সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করেন তারা ভোগান্তিতে পড়েন। সোনামিয়া বাজারের গৃহীনি রওশন আরা জানান, বুধবার ভোরে কল ছাড়ার পড় দেখি এক ফোটা পড়ছে না। মনে করেছি আমাদের মোটর নস্ট হয়ে গেছে। তাই রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে উপরে পানি উঠছে না। পরে রিজার্ভ ট্যাংকি চেক করে দেখি সেখানে পানি নাই। শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পানি পাই নাই। বুধ-বৃহস্পতি দুইদিন ডিপ টিউবওয়েল আছে এমন বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে খাবারের পানি এনেছি। কিন্তু শুক্রবার অনেক পানির প্রয়োজন হয়। সেই পরিমান পানি আর আনা সম্ভব হয়নি। ফলে গোছল ছাড়াই নিরুপায় হয়ে স্বামী-সন্তান জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছে।
একই এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক নাসির জানান, বুধবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ওয়াসার এক গ্লাস পানি পাই নাই। একটি পরিবারের সারাদিন যে পরিমান পানি লাগে সে পরিমান পানি ইচ্ছে করলেই কি অন্য বাড়ি থেকে আনা যায়? তাও যদি একদিনের ব্যাপার হতো। তাহলে কথা ছিল না। আজ ৪দিন পানি নাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে চেক করে দেখুক আমাদের কলে পানি পড়ে কি না।
নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ৩১ তারিখ রাতে ট্যাংকিতে পানি ভর্তি করে রেখেছিলাম। তা দিয়ে ১ জুন দুপুর পর্যন্ত চলতে পেরেছি। কিন্তু ওইদিন বিকাল থেকেই আমাদের রিজার্ভ ট্যাংকিতে সিটি করপোরশনের সরবরাহকৃত পানি আসছে না। শুক্রবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পানি আসেনি। আমাদের বাড়ির তিনটি ভাড়াটিয়া গত চারদিন ধরে পানির জন্য অনেক কস্ট করতেছে। আমরা নিজেরাও নতুন বাজার এলাকায় আমার আত্মীয়েরর বাড়ি থেকে পানি এনে প্রয়োজনীয় কাজ সারছি। আর খাবার পানি কিনে খাচ্ছি। তিনি প্রশ্ন রাখেন ঠিকমতই তো পানি পাচ্ছিলাম। কিন্তু এমন কি হলো ১ জুন বিকাল থেকে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ। প্রথমে মনে করেছিলাম শুধু আমরাই সমস্যায় আছি। পরে সুমিলপাড়া আইলপাড়ায় আত্মীয়কে ফোন দিয়ে জানলাম তারাও একই সমস্যায় আছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের সূত্র জানায়, পানি সরবরাহের পাম্প চালানোর সময় আরও চার ঘন্টা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সকাল থেকে ৬ ঘন্টা করে দুই বেলায় মোট ১২ ঘন্টা পাম্প চালু রাখবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ (সাবেক ঢাকা ওয়াসা)। কিন্তু তাতেও কাংখিত পানি পাচ্ছে না নগরবাসী।
সূত্র আরও জানায়, নানান কারণে নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হতো। পানি সরবরাহের সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রিত ছিল না। এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় হতো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাছে পানি সরবরাহের দায়িত্ব আসার পর সিটি করপোরেশন সবধরনের কার্যক্রম গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন দুই বেলা পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই সিস্টেম শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকায়। বিষয়টি নাসিক মেয়রকে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।