নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বক্তাবলীতে থামছে না আওয়ামী সন্ত্রাসী নাসির-সুলতান বাহিনীর দাপট

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২৩:২২, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

বক্তাবলীতে থামছে না আওয়ামী সন্ত্রাসী নাসির-সুলতান বাহিনীর দাপট

ফতুল্লা থানাধীন বক্তাবলীতে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ত্রাস হিসেবে পরিচিত নাসির-সুলতান বাহিনী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা আবারও দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতার রাজত্ব শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বক্তাবলীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ও তার ৫ পুত্রের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নিরীহ মানুষের জমি দখলের পাহাড়সম অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের ভুমিকা রহস্যজনক দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের মতে, বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ক্যাডার শাহ নিজামের নাম ভাঙিয়ে নাসির মাদবর ও তার ছেলেরা বক্তাবলীতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র হত্যার ঘটনায় নাসির মাদবর আসামী হলেও তিনি এখন এলাকায় প্রকাশ্য। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের গোপন লেনদেনের বিনিময়ে স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতার আশীর্বাদ নিয়ে তারা এখন নতুন করে দখলবাজি শুরু করেছে।

জানা গেছে, রামনগর গ্রামের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আতাউর রহমানের ৭ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে নাসির ও তার তিন পুত্রÑসুলতান, রুবেল ও রিপন। গত অক্টোবরে নাসিরের স্ত্রী নাসরিন বেগম এ বিষয়ে ডায়েরি করলেও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া বন্ধ হয়নি।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কানাই নগরের বাসিন্দা ও জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক জামাল উদ্দিন বারীর মালিকানাধীন সম্পত্তি নিয়ে।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যখন জামাল উদ্দিন বারীর ছেলে সালমান বারী রিজাল রাজপথে বুলেটবিদ্ধ হয়ে আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে লড়ছিলেন, সেই সুযোগে নাসির বাহিনী তার জমির বাউন্ডারি ভেঙে এবং ভাড়াটিয়াকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মালামাল লুটে নেয়।

ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিন বারী জানান, গত ২০ ডিসেম্বর তিনি ফতুল্লা থানায় আবারও অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভুয়া মালিক সাজিয়ে নাসির উদ্দিন তার জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তারা আমার দোকানের মালামাল ট্রাকে করে লুটে নিয়ে যায়।”

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ‘বিপ্লবী হাদি’ হত্যার গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন আসামীরা বক্তাবলীতে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় ধরা পড়ায় বিষয়টি আরও ঘোলাটে হয়েছে। সাধারণ বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কতিপয় সুবিধাবাদী বিএনপি নেতার আশ্রয়ে বক্তাবলী এখন মাদক ও ভূমিদস্যুদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, প্রভাবশালী আওয়ামী নেতারা পালিয়ে গেলেও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির ও তার ছেলেরা কীভাবে এত বেপরোয়া থাকে? তারা মনে করছেন, বিএনপির জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতৃত্বের নিস্ক্রিয়তা এবং পুলিশের নির্লিপ্ততাই এর জন্য দায়ী।

এলাকাবাসী ও সাধারণ বিএনপি কর্মীদের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের অবমাননা করে যারা এই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অতিদ্রুত নাসির-সুলতান বাহিনীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: