শীর্ষ পরিবহন চাঁদাবাজ হাজী রিপন পুত্রসহ গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান 'অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২' পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হাজী রিপন (৫৫) ও তার ছেলে রাফি (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান জানান, ডেভিল হান্ট অপারেশনের অংশ হিসেবে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মান্নান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সকলের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ফতুল্লায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে আমাদের এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ শহরে হাজী রিপন বলে পরিচিতি থাকলেও তার পুরো নাম হাজী মো. বজলুর রশীদ রিপন। জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জেলা জাতীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে তাকে ওই কমিটি থেকে বহিষ্কারও করা হয়। বর্তমানে তিনি জেলা ট্রাক ট্যাংক লরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। হাজী রিপন মূলত ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শহরের দক্ষিণ অংশে যত গার্মেন্ট রয়েছে সেগুলোর ঝুটও তার সহযোগীদের দখলে। তার নেতৃত্বে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায় সহযোগীরা। এক সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ নাসিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি শহরে পরিচিত ছিলেন রিপন। বর্তমানে সাংসদ পুত্র আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। হাজী রিপন সন্ত্রাসী ক্যাঙ্গারু পারভেজের মামা শ্বশুর। ২০১৩ সালে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় রিপনের ছেলে সালেহ রহমান সীমান্ত র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। এর আগে ২০১২ সালে সীমান্ত শহরের অভিজাত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের টয়লেটে তরুণীকে নিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়। ছেলের এই কর্মকান্ডের কারণে রিপন ক্লাবের সদস্য পদ হারায়। পরে রিপন নিজেও এক তরুণীর সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হন। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয়। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র (বর্তমান সিটি কর্পোরেশন) ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সন্ত্রাসী হাজী রিপনের কর্মকান্ডে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাকে ট্রাক চাপায় হত্যার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ২২০ পিস ইয়াবাসহ জামতলার বাসা থেকে হাজী রিপন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এরপর জামিনে বেরিয়ে আসলে অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় সে। তবে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আলোচিত এই সন্ত্রাসী।
২০২১ সালের ২৩ মার্চ ফতুল্লা থানাধীন জেলা কারাগারের বিপরীত পাশে একটি জমির উপর নির্মিত দোকানপাটে ভাঙচুর চালায় হাজী রিপন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা। ওই সময় ঘটনাস্থলে ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে দৈনিক সংবাদচর্চার ফটো সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রীতমকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হাজী রিপন ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাও করেন প্রীতম।


































