নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সোনারগাঁ কাঁপাচ্ছে ‘কাইল্লা রক্সি’ : এলাকাজুড়ে সন্ত্রাস, ডাকাতি, মাদকেরত্রাসের রাজত্ব

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৪৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সোনারগাঁ কাঁপাচ্ছে ‘কাইল্লা রক্সি’ : এলাকাজুড়ে সন্ত্রাস, ডাকাতি, মাদকেরত্রাসের রাজত্ব

সোনারগাঁ উপজেলায় সন্ত্রাস, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসার ভয়ংকর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে কুখ্যাত মাহবুবুর রহমান রক্সি ওরফে কাইল্লা রক্সি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী অংশের দোসর হিসেবে পরিচিত রক্সি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে।

মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে রক্সির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই সশস্ত্র চক্রে তার সহোদর সাব্বির, সহযোগী রাজিবের ছেলে হাসান ও জাকিরের ছেলে মেহেদীসহ অন্তত ১০/১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায়সহ সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকা, সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজ রোড, মোগরাপাড়া বাজার, কাবিলগঞ্জ, ভিন্নিপাড়া, ঋষিপাড়া ও বটতলা বাজার-এই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রক্সি বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিয়মিত চাঁদা না দিলে দোকান ভাঙচুর, মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ফলে ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

গত ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে কাবিলগঞ্জ এলাকায় রক্সি বাহিনীর সদস্যরা গরু ব্যবসায়ী আব্দুল বাতেন ব্যাপারীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয় এবং তার সঙ্গে থাকা প্রায় ৭ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা ও ফেনসিডিল এনে সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ঢাকায় সরবরাহ করছে রক্সি বাহিনী। এই মাদক সিন্ডিকেটের কারণে এলাকায় কিশোর ও যুব সমাজ দ্রুত ধ্বংসের পথে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারে শেল্টারে রক্সি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করতেই তাকে ডাল হিসেবে ব্যাবহার করেছে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা। রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সে ও তার বাহিনী প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওরা প্রকাশ্যেই বলে আমাদের কিছু হবে না। এই কথাটাই এখন এলাকার মানুষের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।

স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, যে সব রাজনৈতিক নেতা একসময় রক্সি বাহিনীকে ছত্রছায়া দিয়েছিল, তারা বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও রক্সি এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছাত্র–জনতার ওপর হামলার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের দোসর এই সন্ত্রাসীকে ঘিরে এলাকায় আতঙ্ক কাটেনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্ত্রাস, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক আইনে রক্সি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসীর একটাই দাবি রাজনৈতিক পরিচয় নয়, অপরাধের ভিত্তিতেই রক্সি ও তার পুরো বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে সোনারগাঁয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।