![রোজার আগেই বাড়ছে পণ্যের দাম, স্বস্তি নেই বাজারে রোজার আগেই বাড়ছে পণ্যের দাম, স্বস্তি নেই বাজারে](https://www.narayanganjtimes.com/media/imgAll/2021May/Bazar-2402022130.jpg)
নারায়ণগঞ্জে পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ১৩ ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রোজা আসতে এখনও বাকি দেড় মাসের বেশি সময়।
পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাড়তে শুরু করেছে ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, চিনির দাম। হঠাৎ করেই ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়ছে। বেড়েছে গরুর মাংসের দাম।
চালের বাজারে সরকারি অভিযান, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, সবজির মৌসুমি সরবরাহ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, এসব কারণে বাজারে স্বস্তি আসবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
অস্বাভাবিক হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোয় শুধু নিম্নবিত্ত নয়, দুর্বিষহ উঠছে মধ্যবিত্তের জীবনও। চাল, ডাল, চিনি, পিঁয়াজ, তেল সবকিছুরই দাম বাড়ছে লাগামহীন গতিতে।
ক্রেতাদের শঙ্কা, রমজানের দেড় মাস আগে নিত্যপণ্যের দাম এমন অস্বাভাবিক হলে, রোজার মধ্যে পণ্য কেনায় কঠিন হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদেক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখনই তাদের আওয়াজ তুলে সরকারের দৃষ্টি কাড়তে হবে। তা না হলে নিম্ন আর মধ্যবিত্তের আওয়াজ পৌঁছাবে না সরকারের কানে।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান পাইকারি বাজার দিগুবাবুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ ক্রেতাদের।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য যাদের নিয়মিত বাজারে যেতে হয় সেসব ক্রেতারা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরোনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজান নির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাতে রমজানে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
রাজু আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, রমজানের সময় প্রশাসনের তোড়জোড় বেশি থাকে বাজারে। সেজন্য এরা (ব্যবসায়ীরা) এখন বাড়িয়ে রাখছেন, যেন ওই সময় আর না বাড়াতে হয়। তাতে এখনো লাভ, তখনো লাভ।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী অপূর্ব আহমেদ বলেন, বাজারে এখন কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে, দাম বাড়াচ্ছে। আর এতে কষ্ট পাচ্ছে কেবল আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
দিগুবাবুর বাজারঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম ৫৬ খেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পেঁপে, মুলা ছাড়া অন্যান্য সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকার ওপরেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং আদা ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ এখনো বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতবছর প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও একই দাম দেখা গেছে। ওই ছোলা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে।
একইভাবে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের মুগ ডালের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। একইভাবে অ্যাংকর ডালের দামও বেড়েছে।
নতুন করে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা বেশি।
বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় যা ৫ টাকা বেশি।
এ ছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা এ যাবৎকালের সবোর্চ্চ।
দিগুবাবুর বাজারের মুদি দোকানি আক্তার হোসেন সুকুম বলেন, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডালের মূল্য মোকাম পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। একেক পণ্যের দাম একেক অজুহাতে বেড়েছে। কিন্তু কোনোকিছুর দাম কমেনি। এদেশে আর কিছু কমে না, শুধু বাড়ে।
এদিকে, কিছুদিন দাম একটু কমলেও ফের বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা।