
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লøাহর সাথে দেখা করে তিনটি দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
দাবি গুলো হলো, কদম রসুল সেতুর কাজ চলমান রেখে পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তন, নারায়ণগঞ্জে মেট্রোরেলের সংযোগ স্থাপন ও যথাযথ আলোচনার পূর্ব পর্যন্ত শহরের খানপুর এলাকায় কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণের কাজ বন্ধ করা।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. জাহিদুল হক দীপু, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলার অসিত বরন বিশ^াস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নাগরিক আন্দোলনের ধীমান সাহা জুয়েল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী অহমেদুর রহমান তনু।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন। প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লøাহর প্রতিনিধিদের অবহিত করেন সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে তিনটি বিষয়েই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যথাযথ মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি অচিরেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে এ সব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ সব প্রকল্প বিষয়ে সে সময় অংশিজনদের জানানো বা তাদের কোন মতামত গ্রহণ করা হয় নাই।
সরকার পরিবর্তনের পর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের মাঝে আলোচ্য পাঁচটি প্রকল্প তুলে ধরলে আমরা তা জানতে পারি। আমরা দেখলাম এ সব প্রকল্পে অস্বচ্ছতা এবং যথাযথ পরিকল্পনা ও সমীক্ষার অভাব বিদ্যমান।
আমরা জানি বিগত সরকার নিজেদের লোকদের লুটপাটের সুযোগ তৈরির জন্য উন্নয়নের নামে এমনি অনেক প্রকল্প, মেগা-প্রকল্প গ্রহণ করেছে যা অপ্রয়োজনীয়, অপরিকল্পিত এবং যা জনকল্যাণের বদলে জনদুর্ভোগ তৈরি করবে। নারায়ণগঞ্জে চলমান প্রকল্পও এ সব ত্রুটির বাইরে নয় বলে আমরা মনে করি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধিন কদম রসুলসেতুটি বর্তমান নকশায় পশ্চিমাংশের মুখটি নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নেমেছে। যা বাস্তব সম্মত নয়। নারায়ণগঞ্জ কলেজ দশ হাজার শিক্ষার্থীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাশে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলÑ যেখানে রয়েছে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
এর পাশে রয়েছে দিগুবাবু বাজারে প্রদেশের মুখ, সাথে রয়েছে বৃহত্তর কালীর বাজার। দেশের বৃহত্তর রং সুতার বাজার টানবাজারে প্রবেশের এইটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক- সর্বপরি এইটি শহরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত যেমনি ভয়াবহ যানজট থাকে, আবার বিভিন্ন সময় এখানে রেললাইনের কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এমনি বাস্তবতায় আমরা চাই কদম রসুল সেতুর কাজ চলমান রেখে এর পশ্চিমাংশের র্যাম্পটি পরিবর্তন করা হোক। মেট্রোরেল আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এই রেল আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে। ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জে থেকে এই পূর্ববঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হয়।
বাণিজ্য, প্রশাসন ও বিবিধ গুরুত্ব বিবেচনায় সে সময় নারায়ণগঞ্জ-মযমনসিংহ রেল যোগাযোগ চালু হয়। সে সময়ের প্রাচ্যের ডাণ্ডি স্বধীনতা উত্তর সময়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলার স্বীকার হলেও দেশের অর্থনীতিতে এখনো পর্যন্ত জেলাটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আনায়নে জেলা হিসেবে প্রধানতম ভূমিকা রেখে চলেছে নারায়ণগঞ্জ।
দেশের প্রতিটি জেলার মানুষ জীবীকার প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জে আসেন। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এখনো নারায়ণগঞ্জ একটি বি-শ্রেণিভূক্ত জেলা। আমরা আপনার কাছে দাবি জানাচ্ছি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জের মেট্রোরেল সংযোগের জন্য আপনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মেট্রোরেলের দাবি আজকে নারায়ণগঞ্জবাসীর জনদাবিতে পরিণত হয়েছে।
শহরের খানপুরে কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণের সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবাস্তব এবং এইটি অপ্রয়োজনীয়। এইটি এটকি অস্বচ্ছ প্রকল্প। বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জের অংশিজন বা নাগরিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ পাশকাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প করতে যাচ্ছে।
জনবহুল এলাকায় এমনি প্রকল্প অন্য দেশেও বিরল। অন্যদিকে জেলার কাছাকাছি এলাকা পানগাঁওয়ে বুড়িগঙ্গার পাশে ৫৫ হাজার বর্গমিটার কন্টেইনার ইয়ার্ডে সাড়ে তিন হাজার টিইইউ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কন্টেইনার পোর্ট রয়েছে। যার ৪০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় না।
খানপুরে কন্টেইনার পোর্ট তৈরি হলে এর জন্যে ফ্লাই ওভার নির্মাণের যে পরিকল্পনা রয়েছে তাও অস্বচ্ছ। এই প্রকল্পটি কোন রকম সমীক্ষা না করে শুধু মাত্র অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
যথাযথ আলোচনার পূর্ব পর্যন্ত এই প্রকল্পটি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি।