নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এবার নিজেকে রক্ষায় সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুকের দৌড়ঝাপ

প্রকাশিত:০২:৪৬, ২০ এপ্রিল ২০২১

এবার নিজেকে রক্ষায় সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুকের দৌড়ঝাপ

এবার নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক। চারদিকে টাকা ছিটিয়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে প্রচার করাচ্ছে। অথচ যুবলীগ পরিচয় দিলেও তার কোন পদপদবী নাই।

মজার বিষয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেছেন টাইগার ফারুক নামে যুবলীগে কেউ নাই। এবং নাসিক ১নং ওয়ার্ডে যুবলীগের কোন কমিটিও দেয়া হয় নাই। তাহলে বরকী ফারুক কোন যুবলীগের নেতা পরিচয় দিচ্ছে?

এই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তাছাড়া একজন মাদক ব্যবসায়ি কিভাবে দলের লোক হয় এই প্রশ্নও তুলেছেন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলছেন, কোন মাদক ব্যবসায়ি দলের লোক হতে পারে না। এরা বর্ণচোরা, ছদ্দবেশী ,দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে এসেছে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলেছে দলের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, এই বদমাইশকে (টাইগার ফারুক) এখনোই থামাতে হবে। না হলে এলাকার যুব সমাজ ধংস হয়ে যাবে। তার দুইভাইও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এরমধ্যে জসিম ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। ধর্ষণ চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফারুক নিজেও হত্যা মামলার আসামী। গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপরাধে একাধিখ মামলা রয়েছে। তার আরেক ভাই ছাত্রদল নেতা। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা।

[caption id="attachment_15761" align="alignnone" width="600"]বিপুল মাদকসহ ৬ সহযোগি গ্রেপ্তার হলেও বহাল তবিয়তে মূলহোতা লাল গোলাকার চিহ্নিতরা গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে।[/caption]

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ২০১৪ সাল থেকে মাদকের সাথে জড়ায় ফারুক। পরবর্তীতে আদমজী ইপিজেডে ছোট খাটো ব্যবসার সাথে জড়িত হলেও মুলত মাদক ব্যবসা তার প্রধান ব্যবসা। আর ইপিজেডের ব্যবসা তার সাইনবোর্ড। মাদক ব্যবসা করে রাতারাতি জমিসহ দেড় কোটি টাকা খরচ করে মিজমিজি পাগলা বাড়ি এলাকায় বহুতল ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করেছে। এসব তথ্য ফারুকের ঘনিষ্ঠজনদের। তারা বলছেন, আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে কৌশলে ফারুক ছবি তুলে সেই ছবি পুজি করে তার অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করছে। মাদক ব্যবসায়ি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে সে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্য কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন। ইতিমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের ৯ সদস্য আইনশৃংখলাবাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

শুধু তাই নয়, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪৮ কেজি গাঁজা ও ৯৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মূলহোতা টাইগার ফারুকের ৮ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা।

গত ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে রাকিব, ওমর, সোলায়মান, ফরহাদ ও অয়নকে ৯৬ বোতল ফেনসিডিল ও ১৮ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে। এ সময় মাদকের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্ধ করা হয়।

অন্যদিকে ২ এপ্রিল শুক্রবার গভীর রাতে নয়াপল্টন এলাকায় একটি বিশেষ চেকপোষ্ট স্থাপনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী মিলন, তার ভায়রা মোঃ মোশারফ হোসেন ও সহযোগী মোঃ মহিন উদ্দিন হোসেন হৃদয়কে গ্রেফতার কর হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে ২০ কেজি গাঁজা, ১টি প্রাইভেটকার, ৩টি মোবাইল ফোন এবং ৪টি সীমকার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। দু’টি অভিযানের গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকেই টাইগার ফারুকের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জনিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ছাড়াও গত ২০ মার্চ বিপুল পরিমানের গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ আলমগীর হোসেন নামে টাইগার ফারুকের আরো এক সহযোগীকে কুমিল্লা জেলার ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে এলাকায় খবর বেড়িয়েছে। গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে ।

সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকের অভিযোগ, টাইগার ফারুক নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট লোক ও যুবলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে এসব মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। এছাড়াও টাইগার ফারুক প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের বাড়ির পাশে মিজমিজি টিসি রোড ইউরো টাওয়ার এলাকায় একটি অফিস নিয়ে বসেছেন। ওই অফিসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ের সাইনবোর্ড জুলিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ওই অফিসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একাধিক অফিসারের যাতাযাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এদিকে টাইগার ফারুক মাদক ব্যবসা করে ইতিমধ্যে বহুতল বাড়ি, গাড়ি ও বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি মাদক ব্যবসায়ীরাও প্রচুর টাকা ও গাড়ির মালিক। অভিযোগ রয়েছে, তার মাদক সিন্ডিকেটের কোন সদস্য গ্রেপ্তার হলেই তাকে জামিনে বের করতে মুল ভুমিকা পালন করে টাইগার ফারুক।

তবে সিদ্ধিরগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন তিনি শুনেছেন টাইগার ফারুক শ্রমিক লীগ করে। সে তার সংগঠনের কেউ না। আওয়ামীলীগেরও কেউ না। টাইগার ফারুক কিভাবে ৬ মাস ১ বছর, ২ বছর ব্যবসা করে ৮তলা বিল্ডিং বানাইয়া লায়। আর আমি ৫২ বছর ব্যবসা করে পারি না। আমার একটাই কথা যে যেই কর্ম করবো, তার ফল তাকেই ভোগ করতে হবে।

এদিকে দুই দফা র‌্যাবের অভিযানে ৪৮ কেজি গাঁজা ও ৯৬ বোতল ফেনসিডিলসহ সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের মূলহোতা টাইগার ফারুকের ৮ সহযোগী আটক হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কথা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান পিপিএম বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যে দলের ই লোক হোক না কেন ? তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের শত্রু। মাদক ব্যবসায়ীই না শুধু কোন অপরাধীদের সাথে আপোষ না।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত মিলন সিদ্ধিরগঞ্জের কথিত যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুকের ম্যানেজারের পাশাপাশি লোহা চোর মোটা কবিরের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে আসছে। টাইগার ফারুক নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন। অথচ যুবলীগের কোন পদে আছেন নিজেও জানেন না।

বাটপার ফারুক তার অপকর্ম চালিয়ে নিতে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি টিসিরোডস্থ ইউরো টাওয়ার এলাকায় একটি অফিস নিয়ে সেখানে ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রধান কার্যালয় বলে প্রচার করছে। ওই কার্যালেয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছে। এই ছবি পুজি করে দিব্বি অপকর্ম করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি নাসিক প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান, ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের কোন কমিটি গঠন করা হয় নি। টাইগার ফারুক আমাদের দলের কেউ না। তার ছোট ভাই ভাই জুয়েল রানা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। সে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের অন্যতম সগহযোগী।

মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু জানান, এক নাম্বার ওয়ার্ড তো দুরের কথা, সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডেই আমাদের কোন কমিটি নাই। কেউ যদি যুবলীগের নাম ব্যবহার করে কার্যালয়ে বানিয়ে অপকর্ম করে এর দায় কোনভাবেই যুবলীগ নিবে না। এটা যুবলীগের বদনাম করার জন্য কেউ করে থাকতে পারে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, এদের সাথে (টাইগার ফারুক) আমার কোন সম্পর্ক নাই। সে আমার সংগঠনের কেউ না। আমার আওয়ামীলীগেরও কেউ না। শুনছি সে শ্রমিকলীগ করে। যদি সে আওয়ামীলীগও করে আর অন্যায় করে তার বিচার হবে না ? যার জন্য ধরতাছে এটা কিন্তু বোঝা কঠিন ব্যাপার।

সে ইপিজেডে ব্যবসা করে, আমরা তো এটাই জানি। এখন যে ভেতরে ভেতরে এ কাজ (মাদক ব্যবসা) করে, এটা তো আমাদের জানা নাই। আমাদের নেত্রী কেন্দ্রের বড় বড় নেতাদের কেউরে ছাড় দেন নাই। যে যেই কাজ করবো তার প্রাপ্য সে পাবে। আমি ওসির অনুষ্ঠানে বার বার বলতেছি, শেখ হাসিনা চায় না মাদক সন্ত্রাস, এমপি শামীম ওসমান চায়না না মাদক সন্ত্রাস, আমিও চাই না মাদক সন্ত্রাস।

আমি তাকে (টাইগার ফারুক) পাত্তাই দেই না। শুনেছি সে শ্রমিকলীগ করে। পাল্টা প্রশ্ন করে মজিবুর রহমান বলেন কিভাবে টাইগার ফারুক ৬ মাস ১ বছর, ২ বছর ব্যবসা করে ৮তলা বিল্ডিং বানাইয়া লায়?। আর আমি ৫২ বছর ব্যবসা করে পারি না। আমার একটাই কথা যে যেই কর্ম করবো, তার ফল তাকেই ভোগ করতে হবে।