নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

১০ সহযোগি গ্রেপ্তার : সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টেছে টাইগার ফারুক

প্রকাশিত:০১:৫২, ২২ এপ্রিল ২০২১

১০ সহযোগি গ্রেপ্তার : সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টেছে টাইগার ফারুক

সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক সিন্ডিকেটের মুলহোতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুকের ১০ সহযোগি বিপুল পরিমান মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মাদক ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। তবে এলাকাবাসী বলছে, একের পর এক সহযোগি গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টিয়েছে টাইগার ফারুক। ভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে সে।

তবে আগের মতো বিক্রি করতে পারছে না। কারণ ১০ সহযোগি গ্রেপ্তার হওয়ার প্রকাশ্যে বীরদর্পে যেভাবে এলাকায় মাদক বিক্রি করতো এখন আড়ালে চলে গেছে সেই ব্যবসা। সিন্ডিকেটের কোন কোন সদস্য ফারুকের সঙ্ঘ ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ এতোদিন ফারুক বলে আসছিল কেউ গ্রেপ্তার হবে না।

আর হলেও দুই-চারদিনের মধ্যে জামিনে বের করে আনা হবে। কিন্তু ২ এপ্রিল রাতে ২০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হয়ে অন্যতম সহযোগি মিলন কারাগারে রয়েছে। ১৯ দিনেও তাকে জামিন করতে পারেনি টাইগার ফারুক। এতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে নাসিকের ১নং ওয়ার্ড টক অব দ্য এলাকায় পরিনত হয়েছে টাইগার ফারুকের মাদক ব্যবসা। এতোদিন টাইগার ফারুক নিজেকে আদমজী ইপিজেডের ব্যবসী পরিচয় দিলেও বিপুল মাদকসহ তার ১০ সহযোগি গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকাবাসী নড়ে চড়ে বসেছে। এলাকার সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে টাইগার ফারুকের মাদক ব্যবসার ঘটনা। তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন টাইগার ফারুক ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে একাধিক ব্যক্তি জানান, তদন্ত করলে শুধু মাদক ব্যবসা নয় নানা অপরাধের চিত্র বেরিয়ে আসবে টাইগার ফারুক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এমন কোন অপরাধ নাই যার সাথে তারা জড়িত নয়। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানী প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।

কারণ সাম্প্রতিক সময়ে এই সিন্ডিকেটের হাতে এক যুবক নিহত হয়েছে। তাকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে তারা। বর্তমানে মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতে বিচারাধীন। চুরি ও ছিনতাইয়ের মুলহোতা হচ্ছে টাইগার ফারুকের ছোট ভাই মাদক ব্যবসায়ি জসিম। সে সম্প্রতি ছিনতাই করতে গিয়ে হাতে নাতে গ্রেপ্তার হয়।

পরে ফারুক মোটা অংকের টাকা খরচ জামিনে বের করে আনে। জসিম চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ি। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এদিকে খোদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন কিভাবে মাত্র ১-২ বছরে টাইগার ফারুক ৮তলা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেছেন টাইগার ফারুক যুবলীগের এমনকি তাদের দলের কেউ না।

এছাড়া মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদত হোসেন সাজনু এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউ রহমান মতিও বলেছেন টাইগার ফারুক যুবলীগের কেউ না। অথচ বাটপার টাইগার ফারুক নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসা করে আসছেন বীরদর্পে।

প্রতারক ও চতুন ফারুক নিজেকে যুবলীগ পরিচয় দিতে কৌশলে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে ছবি তুলেছেন। যা ওই নেতারা নিজেরাও জানেন না। আর বাটপার ফারুক ওই ছবি ব্যবহার করে নিজের আখেন গুছাচ্ছে। দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন অনেক পরে হলেও নেতারা বাটপার ফারুকের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

এখন আর তার জায়গা হবে না দলেল ভেতর। চতুর ফারুক মাদক ব্যবসার পাশাপাশি মূলত তার ছোট ভাই জুয়েল রানাকে নিরাপদে রাখতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে মিশে গেছেন। তার ভাই মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। পুলিশী গ্রেপ্তার থেকে তাকে রক্ষা করতে টাইগার ফারুক আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে ছবি তুলেছে।

র‌্যাবের তথ্যমতে, গত ২০ মার্চ বিপুল পরিমানের গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ আলমগীর হোসেন নামে টাইগার ফারুকের এক সহযোগী কুমিল্লা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।

গত ২ এপ্রিল শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় একটি বিশেষ চেকপোষ্ট স্থাপনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে টাইগার ফারুকের অন্যতম সহযোগি মাদক ব্যবসায়ী মিলন, তার ভায়রা মোঃ মোশারফ হোসেন ও সহযোগী মোঃ মহিন উদ্দিন হোসেন হৃদয়কে গ্রেফতার করে। তারে কাছ থেকে ২০ কেজি গাঁজা, ১টি প্রাইভেটকার, ৩টি মোবাইল ফোন এবং ৪টি সীমকার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

এ ছাড়াও গত ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে রাকিব, ওমর, সোলায়মান, ফরহাদ ও অয়নকে ৯৬ বোতল ফেনসিডিল ও ১৮ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে।

এ সময় মাদকের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্ধ করা হয়। এরা সবাই টাইগার ফারুকের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। মোটকথা ২৭ দিনের ব্যবধানে টাইগার ফারুকের ১০ সহযোগি গ্রেপ্তার হওয়ায় তার মাদক ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। কিন্তু এলাকাবাসী বলছেন, টাইগার ফারুককে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় না আনলে ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধু হবে না।