নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে কথিত যুবলীগের কার্যালয়ে জমজমাট মাদক ব্যবসা

প্রকাশিত:০১:৩৬, ২৫ এপ্রিল ২০২১

সিদ্ধিরগঞ্জে কথিত যুবলীগের কার্যালয়ে জমজমাট মাদক ব্যবসা

সিদ্ধিরগঞ্জে কথিত ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়টি এখন মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর কাছে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে মাদক কেনা-বেচা ও সেবন চলে।

কখন কিভাবে কোথা থেকে মাদক আসবে এবং সেগুলো কিভাবে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌছে দেয়া যায় তার গোপন শলাপরামর্শ হয় ওই কার্যালয়ে। টাকার ভাগবাটোয়ারাও হয় সেখানে।

দীর্ঘদিন ধরে এমন কার্যক্রম চলে আসলেও বাইরে থেকে বুঝার উপায় ছিল না। সবাই জানতো এটা যুবলীগের কার্যালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই কার্যালয়ের ১০ সদস্য বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্যসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাদক ব্যবসার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। “কথায় বলে বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট”।

অথচ গ্রেপ্তারকৃত এই ১০ সদস্যকে টাইগার ফারুক পরিচয় দিত তারা যুবলীগকর্মী। কিন্তু এখন সবাই জানলো তারা যুবলীগের নাম বিক্রি করে মুলত মাদক ব্যবসা করতো। আর নিজে এবং তাদের দিয়ে মাদক ব্যবসা করিয়ে টাইগার ফারুক রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক বনে গেছে। ফাউন্ডেশন দিয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছে।

যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, কিভাবে সম্ভব ১-২ বছরে এতো বড় বিল্ডি বানানো।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোড এলাকায় ইয়াদআলী মেম্বারের পুল সংলগ্ন চান টাওয়ারের পশ্চিমে বিএনপি নেতা হযরত আলীর বাড়ির নিচতলায় নিচ তলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রধান কার্যালয় বানিয়েছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক।

অথচ যুবলীগে তার কোন পদপদবী নাই। এমন কি ১নং ওয়ার্ডে যুবলীগের কোন কমিটিও দেয়া হয়নি। বিএনপি ঘরোয়ানার টাইগার ফারুক নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কার্যালয়টি গড়ে তলেছে। এবং কার্যালয়ের ভেতরে বঙ্গবন্ধ, প্রধানমন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতির ছবি টানিয়ে রেখেছে। যাতে যে কেউ দখলে মনে হয় এটা যুবলীগের কার্যালয়।

দিনের বেলা অফিসে আড্ডাবাজি হলেও আসল ব্যবসা শুরু হয় সন্ধ্যার পর। যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মাদকের ওই আস্তানাটি যুবলীগের কার্যালয় হিসেবে পরিচিত বিধায় পুলিশও তেমন একটা সেখানে যায় না।

তবে মাসোহারাভোগী কতিপয় অসাধ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের যাতায়াত রয়েছে ওই কার্যালয়ে। এমনটা জানিয়েছে কার্যালয়ের আশপাশের লোকজন।

তারা আরও জানান, গত ৩৭ দিনের ব্যবধানে বিশেষ করে ১০ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দফায় টাইগার ফারুকের ১০ সহযোগি র‌্যাব-২ ও ৩ এবং কুমিল্লা ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৮ কেজি গাঁজা ও ৮৯৬ বোতল ফেনসিডিল।

গ্রেপ্তারকৃত আলমগীর হোসেন, মিলন, তার ভায়রা মোঃ মোশারফ হোসেন ও সহযোগী মোঃ মহিন উদ্দিন হোসেন হৃদয়, রাকিব, ওমর, সোলায়মান, ফরহাদ ও অয়ন এখন কারাগারে। তাদের জামিনে বের করার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে টাইগার ফারুক।

ওদিকে যুবলীগের কার্যালয়ের নাম দিয়ে সেখানে দিব্বি মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও মাদক ব্যবসায়িদের নিরাপদ আড্ডাখানা করায় কার্যালয়টি অপসারণ করার দাবি তুলেছে স্থানীয় আওয়ামলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যদিও ইতিমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান বলেছেন ফারুক আওয়ামীলীগের কেউ না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেছেন ফারুক যুবলীগের কেউ না। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু বলেছেন ১নং ওয়ার্ডে যুবলীগের কোন কমিটি নাই। তাহলে মাদক ব্যবসায়ি ফারুক কিভাবে নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে যুবলীগের কার্যালয় বানিয়ে সেখানে মাদক ব্যবসা করছে এ নিয়ে প্রশ্ন তলেছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন টাইগার ফারুকের ১০ সহযোগি মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর মানুষ যুবলীগ নিয়ে ছি ছি করছে। তাছাড়া যেহেতু ফারুক যুবলীগের কেউ না তাই দ্রুত দলের সুনাম রক্ষায় কথিত যুবলীগের কার্যালয়টি অপসারণ করা জরুরী।

এজন্য তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আরও পড়ুন :১০ সহযোগি গ্রেপ্তার : সিদ্ধিরগঞ্জে মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টেছে টাইগার ফারুক