নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

২৮ এপ্রিল ২০২৪

একুশে বইমেলায় শাব্বীর আহমদের নিখাদ ভালোবাসার কাব্য “অনেক ভালোবাসি”

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৬:০০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

একুশে বইমেলায় শাব্বীর আহমদের নিখাদ ভালোবাসার কাব্য “অনেক ভালোবাসি”

কবি আর. কে. শাব্বীর আহমদের ৩য় কাব্যগ্রন্থ “অনেক ভালোবাসি” প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। বইটি প্রকাশ করেছে সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতি ধারার ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা দেশজ প্রকাশন। বইমেলা ৫৮৭ নং স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। রকমারি ডটকমেও পাওয়া যাবে। 

আর. কে. শাব্বীর আহমদ মূলত ভালোবাসার কবি। তাঁর ভালোবাসা বস্তুকেন্দ্রিক ভালোবাসার ঊর্ধ্বে ওঠে নৈর্ব্যক্তিক, নৈসর্গিক ও নির্মোহ  ভালোবাসায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যা ভালোবাসার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

 হিংসা-বিদ্বেষ নয়, ঘৃণা-প্রতারণা নয়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। প্রেম-প্রীতি, মানবতা আর অমল ভালোবাসার পরশে তিনি একটি অসাম্প্রদায়িক, নান্দনিক ও মানবিক পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন এঁকেছেন তাঁর কবিতার পেলব শব্দমালায়।

 মানব-মানবীর দেহসর্বস্ব ভোগবাদী বিকৃত ভালোবাসা নয়, আত্মিক ও ঐশ্বরিক পবিত্র ভালোবাসায় মমতাময়ী ও নিরাপদ বাসভূম নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি  আশাহত, বেদনাহত মানবতাকে।

কবি ভালোবাসেন পৃথিবীকে, পৃথিবীর সৃষ্টিকে ও পৃথিবীর স্রষ্টাকে। সৃষ্টি ও স্রষ্টার প্রেমে এক মায়াবী পৃথিবী গড়ে তুলবেন, যেখানে আগামীর শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠবে। আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ স্বভূম বিনির্মাণ করবে। যেখানে নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের হাহাকার থাকবে না।যেখানে হিংসার বোমার আঘাতে ঝাঝরা হবে না কোনো পুরুষ,  নারী, শিশুর বুক। যেখানে মানুষেরা সুখ আনন্দে সূর্যের মতো হেসে উঠবে।

বিরহ-বেদনা ও মানবিক বেদনাকে কবি মুছে ফেলতে চেয়েছেন অপার স্রষ্টার অপরূপ প্রকৃতির ছোঁয়ায়। কবির কাব্যকথায় : তোমাকে অনেক ভালোবাসি বলে/ বেদনারা রক্তজবা হয়ে  ফুটে ওঠে / বাতাস মুছে দেয় বিরহ-গ্লানি/ বৃষ্টিকণা ধুয়ে দেয় মনের কালিমা। ( অনেক ভালোবাসি ) 

কবির ভালোবাসার গভীরতা অতল সমুদ্রের মতো। অশরীরী ভালোবাসায়ও কবির অন্তর তৃপ্ত হয়। ভালোবাসাই কবিকে প্রেমান্ধ করে তোলে। না পাওয়ার বেদনাকেও আনন্দময় করে তোলে।

' সমুদ্র কথা ' কবিতায় কবির অভিব্যক্তি : ভালোবাসা কতো গভীর হলে / মানুষ অন্ধ হয় / প্রিয়জনকে কাছে না পেলেও / অন্তর তৃপ্ত হয় / বিশ্বাস কতোটা চাক্ষুষ হলে / নিরাকারেও অবয়ব দেখে / কতোটা  কৃতজ্ঞ হলে মন / সামান্য প্রাপ্তিতে সুখী হয়।

কবি সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করেন। সুদিনের গান শোনেন কোকিলের কুহুতানে। শুভ্র বলাকার ডানায় উড়ে যান অসীমের প্রেমের সীমাহীন উপমায়। তাঁর  অন্তর্মননকে পরিশুদ্ধ করেন স্বর্গীয় ভালোবাসায়। কবির অন্তর্গত উচ্চারণ :

তোমাকে অনেক ভালোবাসি বলে / সুদিনের গান শুনি কোকিলের কুহুতানে / শুভ্র বলাকার ডানায় ওড়ে যাই দূর নীলিমায় / তোমার অস্তিত্বের উপমায় ভাস্বর হয় অন্তর্মনন।

কবি প্রকৃতির সুস্থিত আবহে এক নীরিক্ষাধর্মী উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পের প্রয়োগ করেছেন এ কাব্যগ্রন্থে। যেমন : রাতের হাসনাহেনারা / আমায় বড্ড বেশি ভালোবেসে মদির সুবাস ছড়িয়ে যায় / আমার নীল বাতায়নে / আমায় ভালোবাসে বলেই / চাঁদ চন্দ্রিমা চাদর জড়িয়ে দেয় / হৃদয় জমিনে। ( প্রকৃতি প্রেম ) 

বিজন রাতে অরণ্যেরা শুয়ে থাকে / সবুজ চাদর মুড়ি দিয়ে / তারারা জেগে রয় মিটি মিটি নিয়ন বাতি জ্বেলে / আকাশ ঠাঁই নেয় পাহাড়ের বুকে / পরম মমতায় / ঝিলের বুকের নীড়ে প্রাণ রেখে / একটানা ডাকে ডাহুক প্রিয়তমের নাম। ( বিজন রাতে ) 

কবি মা-বাবার অকৃত্রিম স্নেহ- মমতার স্মৃতিতে নিজেকে উজ্জীবিত করে তোলেন " মাগো তোমায় " ও " বাবার কথা"  কবিতায়।

একলা নিরব ঘরে শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টিধারায় সিক্ত চাঁপা ফুলের ঘ্রাণে বিমোহিত কবি প্রিয়তমকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনেন "শ্রাবণ গাথা" কবিতায় :ঝর ঝর বৃষ্টি ঝরে চাঁপা কানন সিক্ত করে / স্বপ্ন আঁকি নতুন দিনের একলা নীরব ঘরে / গল্প হবে এসো!

কবি আর. কে. শাব্বীর আহমদ অধিকারহারা ক্ষুধিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানবতার জন্য ভালোবাসা ও দরদভরা উদারপ্রেমিক প্রজাবৎসল শাসকের আকুল আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন তাঁর " নতুন পৃথিবী " কবিতায়।

কবির উচ্চারণ :নতুন পৃথিবীর স্বপ্নে উজ্জীবিত আমি / যেমনি সোনালি ভোরে উজ্জীবিত  উঠতি তরুণ / যেখানে শাসকরা কাঁদেন ক্ষুধার্তের জঠর যন্ত্রণায় / অনুশোচনায় পৌঁছে দেন নিরন্নের অন্ন নিজ কাঁধে / খলিফা উমরের মতো। 

ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিটি মানুষ যেন অমায়িক ভালোবাসা ও মানবিক পৃথিবীতে নিরাপদে, সানন্দে প্রিয়জনদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, এমন আশাবাদ উচ্চকিত করেছেন ভালোবাসার কবি আর.  কে. শাব্বীর আহমদ তাঁর এ কাব্যভুবন জুড়ে। আমরা তাঁর  মেধা-মননকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাই। 

" অনেক ভালোবাসি " ভালোবাসার এ অনন্য কাব্যটি বিপুল পাঠকপ্রিয়তায় বহুল সমাদৃত হোক,  এ প্রত্যাশা রইল!


 

সম্পর্কিত বিষয়: