নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

করোনা এবং বেহুঁশ মানুষ !

প্রকাশিত:২১:৩৩, ১ মে ২০২১

করোনা এবং বেহুঁশ মানুষ !

পাশের দেশ ভারতে কুকুরে খাচ্ছে লাশ। তাও আবার দেশটির রাজধানী দিল্লিতে।  এমন ছবি ছেপেছে নিউইয়র্কের একটি পত্রিকা। আমাদের দেশেও ভ্যাকু (এস্ককেভেটার) দিয়ে আগাম কবর খোড়া হচ্ছে।

 

আর সেই ছবিও বাংলাদেশের অনেক পত্রিকায় দেখেছি। পত্রিকায় এও দেখছি লকডাউনে রাস্তায় যানজট। বাজারে মানুষের জটলা।

 

ঈদ কেনা কাটার ধুম পরেছে। জনসমাগম সবখানেই হচ্ছে। তারাবী আর জুমার নামাজে হাজার হাজার মানুষ। মানুষের হুঁশ নেই।

 

অসভ্যতারতো একটা সীমা থাকা চাই। সরকার লকডাউন দিয়েছে। লকডাউনে দেশটা কি আর লক আছে? গণপরিবহন ছাড়া সবইতো চলছে। রাস্তা যানজট সেই আগের মতই। আমরা মোটেও সতর্ক নই।

করোনা ভাইরাসের ভারতের নয়া ভাইরেন্টে সারা বিশ^ আজ আতংকিত। মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ভারত। ঝুুকিতে আছে বাংলাদেশ। নভেল করোনা অতিমারীতে রূপ নেয়ার পরও আমরা এটাকে পাত্তাই দিচ্ছি না।

 

পাশের দেশ ভারত করোনাকে যাতাভেবে মিটিং, মিছিল, নির্বাচন করেছে। পূজা, স্নান, হৈ হুল্লুরে ভরা হলি খেলা কোনটাই বাদ যায়নি। আর এর পরিনতিও দেখছি আমরা।

 

সারা বিশ্ব আজ ভারতীয় করোনা ভাইরেন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে হাসপাতালে জায়গা নেই। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ জল থেকে ডাঙ্গায় আসা মাছের মতো ছটফট করে মারা যাচ্ছে। শ্বশানে লাশের জায়গা হচ্ছে না। অস্থায়ী শ্বশান করে একের পর একে রাত দিন লাশ পোড়ানো হচ্ছে।

 

কুকুর টানা হেচড়া করছে লাশ। দেশটির রাজধানী দিল্লিকে এখন মৃত্যুপুরী বললেও প্রকৃত চিত্রটা বোঝানো যাবে না। শ্মশানের দরজায় দরজায় ঘুরে জায়গা না পেয়ে কেবল বরফচাপা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টাও বাড়িতে লাশ রেখে দিচ্ছেন অনেকে।

 

হিন্দুদের লাশ পুড়তে শ্মশানে অস্থায়ী শ্মশান। এরপরও কি আমাদের হুশ হবে না। ভাবনার শেষ নাই। ভারতের ভাইরেন্ট এখন আমাদের নতুন মাথা ব্যাথার কারন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। যা আমাদের দেশে হয়নি, হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ ক্ষেত্রে হেলা ফেলা করা চলবে না।

দু:খ্যজনক হলেও সত্য ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকেই স্থ্যল পথে দেশে ফিরছেন। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম আগত ১০ জন সংক্রমিত ব্যক্তি যশোর সদর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।

 

উক্ত চলাচলের সময় এরা যাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো শৈথিল্য কাম্য নয়।

 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশ ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে, ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যেন বাংলাদেশে প্রবেশ না করে।

 

ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেন্টিনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমরা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছি।” ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ সেই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রোগীর পলায়নের বিষয়টি চরম দ্বায়িত্ব অবহেলার মধ্যে পড়ে বৈ কি! এ বিষয়গুলো সত্যিই উদ্দেগ সৃষ্টি করে।

 

বাংলাদেশের সংক্রমণ এখনও নিম্নমুখী হলেও ভারতে সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সার্বিক প্রস্তুতি, বিশেষ করে অক্সিজেন সঙ্কট রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

সংকট মোকাবেলায় হাসপাতাল গুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ডাক্তার নার্স সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

এ প্রেক্ষিতে বেসরকারি পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্ন্ম মূল্য পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যাতে স্ধাারন মানুষ সহজে পরীক্ষা করতে পারে। বেসরকারি পর্যায়ে টেস্টের মূল্য কমানো দরকার।

 

ভারতের ভাইরেন্টের কথা ভেবে করোনা মোকাবেলায় বেসরকারী হাসপাতাল গুলোকেও প্রস্তুত রাখতে হবে। কারন বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলায় সরকারী হাসপাতালের সাথে সমান তালে বেসরকারী হাসপাতাল গুলো যথেষ্ট ভুমিকা রাখছে।

মনে রাখতে হবে, করোনায় করুণা করছে না কাউকে। মানুষ মরছে প্রতিদিন। আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকা দরকার। আসলে আমরা কতটা প্রস্তুত? আর কতটা সতর্ক?

 

সতর্কতা খুবই কম। রাজধানীকেন্দ্রিক প্রস্তুতি থাকলেও জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি তেমন চোখে পড়ে না। আমাদের জনবল খুব কম। স্বাস্থ্য সরঞ্জামও কম। ভেন্টিলেটর, আইসিও, হাইফ্লো অক্সিজেনের অপর্যাপ্ততা রয়েছে।

করোনাভাইরাস ভারতের মতো ছড়িয়ে পড়লে তাতে সামাল দেয়া কঠিনই হবে। আমাদের জনগণও সচেতন নয়। একবার করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভাইরেন্ট ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এজন্য আগেভাগেই জনগণকে সচেতন করে তুলতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

 

প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সতর্কীকরণ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা দরকার। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ সবখানে জনগণকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

সারা বিশ্ব যেখানে সতর্ক সেখানে আমাদের দেশে সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক। পরে হয়তো বুঝতে পারব কতটা ক্ষতি হলো আমাদের। হচ্ছেইতো। সরকারী হিসাবই দিনে মৃত্যু একশ ছাড়িয়েছে। প্রকৃত হিসাবে মৃত্যু আরও অনেক বেশি।

 

আল্লাহ মাফ করুক। একটা কথা মনে রাখতে হবে সার্স, মার্স, ডেঙ্গু বা ইবোলার মতো নানা ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাসের কথা আমরা জানি। এমন মহাবিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের উদ্ধারও করেন। বিভিন্ন ধর্মেও রোগের ক্ষেত্রে সতর্ক করা আছে।

আল-কোরআনে মহামারি হলে যে যার স্থানে থাকার কথা বলা আছে। তাই প্রয়োজন না হলে ক’দিন না হয় নিজের জীবনের জন্য; স্বজনদের জীবনের জন্য ঘর থেকে অতি প্রয়োজন ছাড়া নাইবা বের হলেন। প্রয়োজন থাকলে কী আর করা। মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধী মেনে ঘর থেকে বের হউন।

 

মনে রাখবেন এ সমস্যা কিন্তু অনেক দিন ধরেই থাকবে না। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেনই। কিছুদিন যারা সতর্ক থাকতে পারবেন, সবকিছু ঠিকঠাক মেনে চলবেন তারা হয়তো

 

এ বিপদ থেকে অনেকটা মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে আমারা বেশিই অসাবধান মনে হয়। কোন কিছুকেই গুরুত্ব দিতে চাই না কখনো। কোনো কিছু মানতে চাই না। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করলেই চলে।

 

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের এখন যুদ্ধে নামতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। ঘুরতে না যাওয়া, বেশি মানুষ এক জায়গায় না হওয়া, আড্ডাবাজি বন্ধ করতে হবে। করোনা নামক শত্রু এদেশে ঢুকে পড়েছে। ক্ষতিও বেশ করেছে। জীবন গেছে অনেকের।

 

দেশের অর্থনীতিতে করোনার ব্যাপক প্রভাব পরেছে। অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে বেকার হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় সবাই সতর্কতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমরা হয়তো এই যুদ্ধে এক বারে হেরে যাব।

 

আসুন আমরা সবাই সতর্কতার যুদ্ধে নামি। এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। পাশের দেশ ভারত থেকে কিন্তু আমাদেও শিক্ষা নিতে হবে। তবে যুদ্ধ জয়ের জন্য আমাদের  আতঙ্কগ্রস্ত হলে চলবে না। দিশেহারা হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

 

সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিকভাবে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সর্বদা বজায় রাখতে হবে। নিজে সতর্ক থাকতে হবে অপরকে সতর্ক করতে হবে। ভাইরাস থেকে রক্ষার একটাই পথ সতর্কতা।

 

আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি। ডেঙ্গু, কলেরা-ডায়েরিয়া মহামারী সামনে ফেলে সফল হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করে আমদের এই পরিস্থিতিও জয় করতেই হবে। সব ভয়কেই দুরে সরিয়ে নির্ভয়ের, নিরাপদের বাংলাদেশ গড়তেই হবে আমাদের। লেখক-  সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।