ভোরের আলো ফোটার আগেই কুয়াশায় ঢেকে যায় সোনারগাঁয়ের পথঘাট। শীতের তীব্রতায় কাঁপছে মানুষ, কাঁপছে হাত-পা। কিন্তু এই শীতই যেন নতুন প্রাণ দিয়েছে বাজারে।
শপিংমলের কাচঘেরা দোকান থেকে শুরু করে সড়কের ধারের ফুটপাত-সবখানেই এখন শীতের পোশাকের বেচাকেনা। শীত মানুষের কষ্ট বাড়ালেও ব্যবসার হিসাবে এনে দিয়েছে ব্যস্ততা।
সরেজমিনে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া, বারদী, কাঁচপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই শীতের কাপড় কেনার ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ফুটপাতে।
এখানে নতুন পোশাকের পাশাপাশি পুরোনো গরম কাপড় বিক্রিও জমে উঠেছে। ভ্যানে স্তূপ করে রাখা জ্যাকেট, সোয়েটার, উলের গেঞ্জি, মাফলার, টুপি আর মোজা ঘিরে ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বেছে নিচ্ছেন প্রয়োজনমতো।
শপিংমলগুলোতে মূলত মধ্যবিত্ত ও তরুণ ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি। ছেলেদের জন্য ডেনিম জ্যাকেট, পাফার জ্যাকেট, হুডি, মোটা ফুলহাতা গেঞ্জি ও উলের সোয়েটারের চাহিদা তুঙ্গে।
এসব পোশাকের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকারও বেশি। নারীদের জন্য উলের কার্ডিগান, লং সোয়েটার, শাল, হুডি ও জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে বেশি। শিশুদের জন্য সোয়েটার সেট, কানঢাকা টুপি ও মোজা কিনছেন অভিভাবকেরা।
একটি শপিংমলের বিক্রেতা সাইফুল আলম বলেন,শীত শুরু হওয়ার পর থেকেই বিক্রি বেড়েছে। দিনে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জ্যাকেট ও হুডি। তরুণদের চাহিদাই বেশি।
তবে শীতের বাজারের প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে ফুটপাতে। সন্ধ্যার পর এখানে মানুষের ভিড় সামলানো দায়। ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই পুরোনো ও নতুন গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। সোয়েটার, জাম্পার, ফুলহাতা গেঞ্জি, মাফলার, মোজা-সবই আছে হাতের নাগালে।
ফুটপাতের বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন,শীত বাড়লে আমাদের দোকান বাঁচে। নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও ফুটপাথেই বেশি আসে। কম টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
ফুটপাতে কাপড় কিনতে আসা এক শ্রমজীবী ব্যক্তি বলেন, শীত ঠেকাতে যেটুকু দরকার, সেটুকুই কিনছি। নতুন গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে ফুটপাতের দোকানই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।
শপিংমলে আসা এক শিক্ষার্থী হাসান মিয়া বলেন, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই গরম কাপড় কিনতে হচ্ছে। তবে লক্ষ্য করেছি, কিছু দোকান এই সুযোগে আগের তুলনায় দাম একটু বেশি নিচ্ছে, যা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য চাপের।
একজন গৃহবধূ বলেন, শীতকালে শিশুদের ঠান্ডা বেশি লাগে। নিজের জন্য কিছু না কিনলেও সন্তানদের কথা ভেবে গরম কাপড় কিনতেই হয়। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার খরচ আরও বেড়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, শীত যত বাড়ছে, গরম কাপড়ের বিক্রিও তত বাড়ছে। তবে এই ব্যস্ত বাজারের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে আরেকটি নির্মম বাস্তবতা-অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের শীতের কষ্ট। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক মানুষ প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কিনতে পারছেন না। কেউ কেউ শুধু দাম জিজ্ঞেস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে সরে যাচ্ছেন।
স্থানীয় এক শিক্ষক ও সমাজকর্মী বলেন, শীত এলেই গরিব মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। কারও জন্য একটি পুরোনো জ্যাকেট বা একটি কম্বলই হতে পারে শীত মোকাবেলার একমাত্র সম্বল। তাই এই শীতে সোনারগাঁয়ের স্বাবলম্বী, বিত্তবান ও সচেতন মানুষের উচিত অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো।
অব্যবহৃত শীতের পোশাক কিংবা নতুন গরম কাপড় তাদের হাতে পৌঁছে দিলে বহু মানুষের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতে পারে।


































