নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

৩০ অক্টোবর ২০২৫

দিলেন ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার  

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর পাশে ডিসি জাহিদুল

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর পাশে ডিসি জাহিদুল

বিরল রোগে আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জের শিশু মান্তাহার মাহমুদকে একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার দিয়েছেন মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এখন থেকে মান্তাহারকে আর সারাক্ষণ মায়ের কোলে চড়ে কোথাও যেতে হবে না।

সে নিজেই এই হুইলচেয়ারটি ব্যবহার করতে পারবে। এর মাধ্যমে নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল মান্তাহার। মান্তাহার মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকার ইসদাইর এলাকার এনামুল হক ও মিতু বেগম দম্পতির সন্তান।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নয় বছর বয়সী মান্তাহার প্রথমে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। পরে ভর্তি হয় খোরশেদ আলম ইসলামিয়া মাদরাসায়। কিন্তু হঠাৎ তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সে হাটাচলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় এক বছর ধরে মাদরাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

শিশুটির বাবা এনামুল হক বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক। মাসে যে টাকা আয় করেন, সেটা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। 

একসময় সুস্থ থাকা মান্তাহার হঠাৎ হাটা-চলার অক্ষমতায় পড়লে চিকিৎসকেরা জানান, সে Duchenne Muscular Dystrophy (DMD) নামের এক বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই, বিদেশে করাতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।

চিকিৎসার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে হতাশ হয়ে পড়েন অসহায় এই দম্পতি। সব জায়গায় সহায়তা না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত দেখা করেন ‘মানবিক ডিসি’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে।

গত ২২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে মান্তাহারের মা মিতু বেগম সারাক্ষণ অসুস্থ সন্তানকে কোলে নিয়ে ছিলেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।
 শিশুটির অসুস্থতা ও মায়ের অসীম মমতা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি মিতু বেগমকে একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার প্রদানের জন্য লিখিত আবেদন করতে বলেন।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়ে মান্তাহার ও তার পরিবারকে ডেকে নেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি নিজ হাতে মান্তাহারকে অত্যাধুনিক একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার উপহার দেন।

হুইলচেয়ার পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মান্তাহার। সে বলে, আমি অনেক খুশি। ডিসি অফিসের নিচে রাস্তায় অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে চালিয়েছি। এখন আমি মাদরাসায় যেতে পারব। সারাক্ষণ মায়ের কোলেও থাকতে হবে না।

মান্তাহারের মা মিতু বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ডিসি স্যার গত সপ্তাহে হুইলচেয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজ তিনি তার কথা রেখেছেন। উনি সত্যিই খুব মানবিক মানুষ। আমরা অনেক খুশি। আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য সবাইকে পাশে আসার অনুরোধ করছি।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সরদার বলেন, জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম যেদিন নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেছিলেন, সেদিনই প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কিছু স্মার্ট ডিভাইস বিতরণ করেছিলেন। তিনি শুধু বলেন না, কাজ করে দেখান। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তিনি ইতোমধ্যেই নানা স্মার্ট উদ্যোগ নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, শিশুটি দেখতে খুব সুন্দর। প্রথম যেদিন আমার কাছে এসেছিল, ওকে দেখে আমার খুব মায়া লেগেছিল। কিছু সহায়তা করেছিলাম, কিন্তু মনে হয়েছিল যথেষ্ট নয়।

আজ যখন দেখলাম সে হাসিমুখে হুইলচেয়ার চালাচ্ছে, তখন সত্যিই ভালো লেগেছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের বাইরের আলো-বাতাসে থাকার সুযোগ যেন আমরা কখনো বন্ধ না করি, এই আহ্বান জানাই।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।