প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ ধর্মীয় সম্প্রীতি মডেল বারংবার মনে করিয়ে দেয়। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা মহোৎসব পালিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করে।
শহরের দেওভোগ ইসকন মন্দির আয়োজিত রথযাত্রা আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলমগীর হুসাইন এডিসি (সার্বিক) বলেন, শত শত বছর ধরে এ রথযাত্রা মহোৎসব হয়।
সনাতন ধর্মালম্বীদের এ রথযাত্রা মহোৎসব বাঙালি জাতির দীর্ঘ অনাদিকাল থেকে হয়ে চলে আসছে উপমহাদেশে। আমরা ছোট্টবেলায় যখন পড়াশোনা করতাম তখন সনাতন ধর্মালম্বীদের এ রথযাত্রা মহোৎসবে নিমন্ত্রণ পেতাম যেতাম।
আবারও অনেক দীর্ঘদিন সময় পরে এমন একটা জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা স্যারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আজকের এ অনুষ্ঠানের আয়োজকসহ সবার জন্য শুভকামনা করছি।
নারায়ণগঞ্জ রাজনৈতিক অঙ্গনের বহুল আলোচিত জনপ্রিয়মুখ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক জাকির খান সাহেব ও রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শহরের ইসকন মন্দিরের এলাকার প্রতিবেশী।
জাকির খান নারায়ণগঞ্জের সনাতনী সমাজের সাথে রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি বলেন, রাজা থেকে রিক্সা চালক শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের হাতে হাত ধরে ভগবান জগন্নাথের রথের রশি টেনে এগিয়ে নিয়ে যাই।
হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এ রথযাত্রা মহোৎসব হয়ে উঠে অভাবনীয় মিলন মেলা। আপনারা দীর্ঘ সময় ধরে শুনেছেন রথযাত্রার তাৎপর্য নিয়ে ইসকন প্রভুরা বলেছেন। এ রথযাত্রা মহোৎসবে সনাতনীদের এই ধর্মীয় সংগঠন ইসকন অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে থাকে।
আমি বলব রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি একটি মহৎ আদর্শের প্রতিফলন। ভগবান জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা'র এ মঙ্গল যাত্রায় মানব জীবনে বহুমাত্রিক বার্তা বহন করে।
সাবেক পূজা পরিষদের নেতা শংকর সাহা বলেন, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। ঈশ্বর নিরাকার। আমাদের মধ্যে ধর্ম বর্ণ গুরু শিষ্য অনুসারীদের মধ্যে মতপার্থক্যের থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যেন একটা জায়গায় এক থাকি। আমাদের মধ্যে যেন বৈষম্য বিরোধীতা না থাকে। সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কার্ত্তিক ঘোষ বলেন, আমরা বৈষম্য ভুলে গিয়ে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করব। কোন সংগঠনের সাথে আমাদের বিরোধ থাকবে না। আমাদের পূজা উদযাপন ফ্রন্ট শুধু ধর্মীয় নয়। এটা একটা মানবিক সংগঠনের রূপ নিবে।
আমরা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর প্রমাণ করে দিব আমরা সংখ্যালঘু নই আমরা বাংলাদেশী। নারায়ণগঞ্জ তথা সারা বাংলাদেশে ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না। জয় হোক মানবতার। সবাইকে রথযাত্রা মহোৎসবের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব খোকন সাহা বলেন, আমরা যে যে-ই সংগঠন করেন না কেন আমরা যেন সবাই হিন্দু স্বার্থে একমত থাকি। আমাদের মধ্যে যেন কোন দূরত্ব না থাকে। তাহলে সনাতনী সমাজ টা সুন্দর হবে না। আমরা সাংগঠনিক সৌন্দর্যে বিশ্বাসী। সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ হংসকৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভু বলেন, আমি খুবই আনন্দিত রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় সংগঠন প্রশাসনসহ সবাইকে কাছে পেয়ে। আমার সবসময়ই আপনাদের সকলের ভালবাসা সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চলতে চাই। নারায়ণগঞ্জের সম্প্রীতির সনাতনী সমাজ সারাদেশের মধ্যে অনন্য উদাহরণ।
আমি দীর্ঘ সময় ধরে এ ইসকন মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছি। সুখে দুঃখে সবসময়ই আপনাদের কাছে পেয়েছি সামনেও যেন পাই এমনটাই প্রত্যাশা রাখছি। আবারও সকলকে ভগবান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ দেবের রথ নিয়ে বের হয় ভক্তরা।
রথযাত্রা মহোৎসবে রথ টান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সামাজিক সংগঠন গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আহ্বায়ক নয়ন সাহা, জেলা আহ্বায়ক শ্রী অভয় কুমার রায়সহ সদস্যদের মধ্যে সুশীল দাস, তাপস সাহা, রাহুল দাস রিপন, অজিত দাস, কানাই চন্দ্র দাস, অরবিন্দ সরকার, রামকৃষ্ণ সাহা ( রামু), রাজন সাহা, রনি ঘোষ, রবিন দাস, অনিক দাস, বিশ্বজিৎ সাহা, টিটু সাহা, জয়ন্ত দাস, হৃদয় দাস, বিমল সাহা, অজিত সাহা, চান দাস, উত্তম কুমার দাস, উৎপল কুমার দাস প্রমুখ।
