নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

১৯ এপ্রিল ২০২৪

থেমে নেই ভিক্টোরিয়ায় রোগী ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৩:১৩, ২৫ মে ২০২২

থেমে নেই ভিক্টোরিয়ায় রোগী ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জে ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের চিকিৎসা সেবার অন্যতম ভরসাস্থল নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া)। কিন্তু হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। আবার  কিছু দিন পর পর আলট্রাসনোগ্রাফির মেশিন অচল হয়ে পড়ে থাকে। এতে রোগীরা দুই-তিনগুণ অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন।

 


 হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের এক্সরে মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন রয়েছে।  তবে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন না থাকায়, চিকিৎসকেরা রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের কার্যাকারিতা নেই বললেই চলে৷ কিছু দিন পর পর আলট্রাসনোগ্রাফির মেশিন অচল হয়ে পড়ে থাকে। ফলরূপ যন্ত্রপাতি থেকেও যেন নেই। বাধ্য হয়ে রোগীরা অন্যত্র পরীক্ষা করান। হাসপাতালে হয় নাম মাত্র কিছু রক্ত পরীক্ষা। এছাড়া অন্যান্য উন্নত পরীক্ষার জন্য নেই সিটি স্ক্যান ও এমআরআই  মেশিন। উন্নত মেশিনের চাহিদাপত্র দিয়ে মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কোন সদুত্তর পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  


হাসপাতাল সংশ্লিষ্টের সূত্রমতে, প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ও বহিবিভাগে কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে। শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ শহর নয় আশেপাশের মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকেও রোগীরা এসে এখানে চিকিৎসা করতে আসেন। কিন্তু ভোগান্তিতে পড়েন যখন কেবলমাত্র চিকিৎসক দেখানো ছাড়া অন্যান্য সেবা থেকে বঞ্চিত হন। না পান ঔষধ,  না হয় পরীক্ষা।  সবই নিজ অর্থে ক্রয় করতে হয়। পরীক্ষার জন্য শরণাপন্ন হতে হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।  

 

মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহি.বিভাগে রোগীদের লম্বা সিরিয়াল। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করতে ছুটছেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।  কিন্তু হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কয়েকজন রোগী  ব্যতীত রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সামনে রোগী নেই। আবার কেউ কেউ পরীক্ষা করাতে এসে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নাই জেনে ফিরে যাচ্ছেন।  রেডিওলোজি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মচারীর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, রোগী একটু তুলনামূলক কম।  কারণ ডিজিটাল এক্সরে মেশিন হাসপাতালে নেই।  

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট-ল্যাব এটেনডেন্ট জানান, আলট্রাসনোগ্রাফির মেশিন কিছু দিন পর পর নষ্ট হয়ে পড়ে। একারণে সবসময় আলট্রাসনোগ্রাফি করা সম্ভব হয় না।  

 

ভুক্তভোগী রোগী ইমরান বলেন, আমরা এক্স-রে করা দরকার। কিন্তু যন্ত্রপাতি না থাকায় এখানে ভালো টেস্ট  হয়না  শুনলাম। বাইরে থেকে অনেক টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ টাকা লাগছে। এখানে করাতে পারলে হয়তো অনেক কম টাকা লাগত।  

 

শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রোগী জসিম বলেন, হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী মিলে বাইরে একটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লোক পাঠিয়ে ব্যবসা করছেন। আর হাসপাতালের মেশিনে পরীক্ষা করাতে পারি না। মেয়ের টনসিল হইছে। অপারেশন করাইতে হবে। পরিবারে এতো রোজগার নাই যে প্রাইভেটে চিকিৎসা করাবো। সরকারি হাসপাতালে আসি কম টাকায় চিকিৎসার জন্য।  কিন্তু এখন সেটাও জোটে না। চিকিৎসা মানেই অনেক খরচ। 

 


 হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এস কে ফরহাদের সঙ্গে হাসপাতালে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরের মেশিন নেই।  আলট্রাসনোর মেশিন নষ্ট। এ কারণে রোগীদের সব পরীক্ষা করাতে পারছি না আমরা।  আমরা মেশিনের জন্য মন্ত্রাণালয়ে চিঠি দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উত্তর পাইনি।  খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে শুধু করোনার চিকিৎসা হয় এজন্য আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। আমরা ৩০০ শয্যা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা এ বিষয়ে বলেছি, আমাদের রোগীকে ওই হাসপাতালে রেফার্ড করা হলে তারা তাদের ল্যাবে টেস্ট করবে। আপাতত এটা ছাড়া আমাদের অন্য  কোন উপায় নেই। 

সম্পর্কিত বিষয়: