নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফতুল্লায় আবারো বেপরোয়া কিশোরগ্যাং

প্রকাশিত:০০:৩৬, ৯ মে ২০২১

ফতুল্লায় আবারো বেপরোয়া কিশোরগ্যাং

 
কিছুদিন নীরব থাকার পর ফতুল্লায় আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। ফতুল্লা থানার প্রতিটি এলাকাতেই দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে  কিশোর গ্যাং সদস্যরা। কালচারে পরিণত হওয়া কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রতি রয়েছে রাজনৈতিক মহলের বিশেষ করে সরকারদলীয়  কথিত বড় ভাইদের আর্শীবাদ।
 
ফলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধ সংঘটিত করেও সহসাই পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন তাদের হাতে নেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তালিকা।
 
তাছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রতিটি এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে কাজ করছে বলে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের দ্বায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়।
 
 অতীতের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এখন সরাসরি অপরাধের জন্ম না দিলে ও উঠতি বয়সী কিশোরদের ব্যবহার করে নানা অপরাধের জন্ম দিয়ে স্বীয় স্বার্থ হাসিল করছে।
 
অপরদিকে উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সঠিক তালিকা প্রশাসনের হাতে না থাকায় প্রশাসন ও নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা মামলা ব্যতীত তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারছেনা। আর এ সুযোগের সদ ব্যবহার করে থানার প্রতিটি এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্যরা হয়ে উঠেছে অতিমাত্রায় বেপরোয়া।
 
ধর্ষণ, খুন, মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ সমাজ বিরোধী নানা অপকর্মের সাথে সক্রিয় থেকে চায়ের দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক,বিভিন্ন অলি- গলি, হোটেল–রেস্তোরাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক দলের সদস্য অবস্থান গ্রহণ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে থাকে এবং দল বেধে মোটর বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি করে।
 
চায়ের দোকানগুলোয় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি আড্ডায় মেতে থাকে। আর স্কুল-কলেজের ছুটির সময়ও এদের উৎপাতে অস্থির হয়ে ওঠেন সেখানে আগত অভিভাবকরা। এখন কোরোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও রাস্তাঘাটের নিরিবিলি পরিবেশকে তারা মুহূর্তেই অশান্ত করে তোলে। এমনই নানা অভিযোগ স্থানীয়দের।
 
তথ্য মতে,এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ফতুল্লা রেল স্টেশন এলাকায় ও শাহজাহান রোলিং মিলস এলাকায় পরপর দুটি গণ ধর্ষণের ঘটনার জন্ম দেয়।তবে প্রশাসনের তৎপরতায় ঘটনার পরপরই জড়িতরা গ্রেফতার হয়।
 
বিশেষ করে শাহজাহান রোলিং মিলস এলাকায় সংঘটিত হওয়া গণধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত ছয় ধর্ষক কে ঘটনার ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। গত বছর লক ডাউনের শুরুর দিকে দেওভোগ এলাকায় সংঘটিত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো একদল কিশোর।
 
ঘটনার রাতেই ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ জড়িত বেশ কয়েক ঘাতক কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। গ্রেফতারের পর তারা হত্যা কান্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী ও দেয়। এ ছাড়া কিশোর গ্যাং সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় জড়িয়ে পড়ছে বড় ধরনের সহিংস ঘটনায়।
 
সে সময় পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রতিটি এলাকার বেশ কিছু কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করলে কিশোর গ্যাং সদস্যদের উপদ্রব অনেকটাই হ্রাস পায়।
 
বেশ কিছুদিন কিশোর গ্যাং সদস্যরা নীরব থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি এলাকাতেই এরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।গত এক মাসের ব্যবধানে কিশোর গ্যাং সদস্যরা কাশিপুর, সস্তাপুর, লালপুর, পৌষাপুকুর পাড়, রেল লাইন বটতলা, রেল স্টেশন পাগলা দেলপাড়া, নয়ামাটি, কোতালেরবাগ, শিয়াচর, তক্কার মাঠ হ বিভিন্ন এলাকায় জন্ম দিয়েছে কম করে হলেও অর্ধশতাধিক মারামারি, লুটতরাজ ও সহিংসতার ঘটনা।
 
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ শীর্ষ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের ভয়ে এখন আর নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে না। তবে তারা উঠতি বয়সী কিশোরদের ব্যবহার করে জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ।
 
পাগলা রেললাইন বটতলা এলাকার এক চায়ের দোকানি এ প্রতিবেদককে বলেন, বেশ কিছু কিশোর তার দোকানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে থাকে।কিছু বললেই তাকে মারতে আসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দোকানে বসে থাকে। ছোট্ট বাচ্চা। বয়স মনে হয় ১৫-১৬ বছর হবে।
 
আর এরাই একটার পর একটা সিগারেট টানে। কোনো মুরব্বিও মানে না। যতক্ষণ থাকে তাদের দখলে চলে যায় দোকানটা। তিন-চারজন নয় একসঙ্গে আট-দশজন এসে আড্ডা মারে।এক গ্রুপ চলে গেলে আরেক গ্রুপ এসে আড্ডা মারে।
 
কখনো সখনো আড্ডা নিয়ে ও তাদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনা ও ঘটে।আর এমনই একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিলো গত এক বৎসর পূর্বে ফতুল্লা রেল লাইন বটতলা এলাকায়।
 
জানা যায়, কিশোরদের এই গ্রুপগুলো ফতুল্লায় বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। একেক জায়গায় একেক গ্রুপ বসে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে আসে। চায়ের দোকানে ভিড় করে হইহুল্লোড় করেই ক্ষান্ত হয় না কিশোর গ্যাংয়ের ওই দলগুলো।
 
ফতুল্লা দাপা বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে আসা সাধারণ মানুষদেরও উত্ত্যক্ত করে তারা। বিশেষ করে কোনো প্রেমিক যুগলকে একসঙ্গে বসে গল্প করতে দেখলে নানাভাবে বিরক্ত করে। এতে কেউ ক্ষিপ্ত হলে তার ওপর চড়াও হয়।সিনিয়র-জুনিয়র’ হওয়া নিয়ে মারামারি বাঁধে।তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও তারা মাঝে মধ্যো জড়িয়ে পরে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনায়।
 
এ সকল কিশোর গ্যাং সদস্যরা কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই মিথ্যা অজুহাত তৈরী করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অপরাধ খুব সহজেই করে থাকে।কিশোর গ্যাংয়ের প্রতি এলাকার শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাই এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশীর্বাদ থাকায় প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পর্যন্ত কেউ করে থাকেনা।
 
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর হওয়ার কারণে দন্ডবিধিতে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। বাংলাদেশের শিশু আইন–২০১৩ অনুযায়ী, ১৮ বছর বা এর কম বয়সী শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের জেলে নেওয়ার পরিবর্তে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠাতে হবে, যাতে তারা সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
 
তাই তাদের আটক করে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে হয়। বয়সে কিশোর হওয়ার সুবাধে শাস্তির আওতায় আনতে আইনের যথেষ্ট ফাঁকফোকর থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছে এসব গ্যাংয়ের লিডারসহ বাকি সদস্যরা।
 
অনেক বড় বড় অপরাধ ঘটিয়েও বয়সের অজুহাতে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে জামিনে বের হওয়ার সুযোগ। জামিনে বাইরে এসে এরা আবারও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে।