নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ওসমান দোসর মাকসুদের প্রচারণায় শংকর সাহা, সনাতন সমাজে ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৩৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ওসমান দোসর মাকসুদের প্রচারণায় শংকর সাহা, সনাতন সমাজে ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের চিহ্নিত গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা মামলার জেলখাটা আসামি মাকসুদ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি শংকর সাহাকে। ’

গত কিছুদিন আগে মাকসুদ হোসেনকে সাথে নিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন শংকর সাহা এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে সনাতলীদের মাঝে সমালোচনার ঝড়।

ক্ষুব্ধ সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা চালানো ওসমান পরিবার ও তার দোসরদের সাথে শকর শংকর সাহার এই সখ্যতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি শংকর সাহা শুরু থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ছিলেন সহ-সভাপতি। 

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু উভয়ের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন এই হিন্দু নেতা। তাকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইডির পাশে যেমন দেখা যেতো আবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের পাশেও দেখা মিলেছে শঙ্কর সাহার। নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য সকল পক্ষেই ব্যালেন্স করে চলতে দেখা গেছে তাকে। 

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথেই পুরো ৩৬০ ডিগ্রী ইউটার্ন করেন শংকর সাহা। আওয়ামী লীগ নেতা থেকে ধীরে ধীরে বিএনপিতে ঘেষতে থাকেন তিনি।

সনাতন সম্প্রদায় স্বঘোষিত বিএনপি নেতা জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পির সাথে সারাক্ষণ উঠবসা করতে থাকেন এবং নিজেকে বিএনপি প্রমানের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। যদিও ৫ আগস্টের পূর্বে তাদের কাউকেই বিএনপি’র কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে নারায়ণগঞ্জে সনাতন সম্প্রদায়ের সকলে একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেছে। সেখানে কোনো রাজনৈতিক বিভাজন ছিল না কিন্তু ৫ আগস্টের পর শুরু হয় নতুন বিভক্তি।

এ সময়ে বিএনপিপন্থী সনাতনী কিছু সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। নারায়ণগঞ্জে এসব সংগঠনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরকে ইতিপূর্বে বিএনপি’র কোনো কর্মসূচিতে দেখা মিলেনি। কোনো মামলা হামলার স্বীকারও হননি কিন্তু তারা ৫ আগস্টের পর বিএনপির পরিচয়ে সনাতন সম্প্রদায়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকেন। সেই নব্য বিএনপি সাজা গোষ্ঠীর সাথে নিয়মিত উঠাবসা করতে থাকেন সুচতুর শংকর সাহা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ তারিখে বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ এলাকায় অনুষ্ঠান করে আত্মপ্রকাশ ঘটে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উৎসব উদযাপন ফ্রন্টের। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়কে আহবায়ক এবং জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পিকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয় সেই অনুষ্ঠানে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাওসার আশা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কমিটি ঘোষণা করেন।  

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা শংকর সাহা। এই কমিটি ঐতিহ্যবাহী লাঙলবন্দ অষ্টমী স্নান আয়োজনের সহ আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার প্রথমেই বিতর্কের সৃষ্টি করে স্নান উদযাপন ফ্রন্ট। স্নান চলাকালীন সময়ে উদযাপন ফ্রন্টের একটি পোস্টার সকলের নজরে আসে। সেই পোস্টারে খুনি ওসমান পরিবারের দোসর এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি মাকসুদ হোসেনের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়েছে।

লাঙ্গলবন্দ স্নানে আগত পুণ্যার্থীরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আর তাতে লেখা ছিলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী। এই পোস্টারের নিচে লেখা ছিলো প্রচারে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উৎসব উদযাপন ফ্রন্ট। গণহত্যা মামলার আসামির ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানোয় উদযাপন ফ্রন্টের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বন্দরবাসী।

অনেকের সাথে কথা বললে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর বন্দরের মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন চালানো মাকসুদ চেয়ারম্যানের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়েছে সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে যেই সংগঠনের প্রধান একজন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাহলে কি আমরা ভাববো বিএনপি স্বৈরাচারের দোসর গণহত্যা মামলার আসামি মাকসুদ চেয়ারম্যানকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে!

স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছিলো, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি দিয়ে কোনো পোস্টার তারা ছাপায়নি বরং ছাপিয়েছে স্বৈরাচারের দোসর গণহত্যা মামলার আসামির ছবি দিয়ে। এ থেকে কি বুঝা যায়? তারা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে স্বৈরাচারের দালালি করছে। এ ধরনের দালালদের এখনই প্রতিরোধ করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী জানিয়েছেন, উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি কিংবা শংকর সাহা গত ১৭ বছর কোথায় ছিলেন। বিএনপির কোনো মিটিং মিছিল সভা সমাবেশে তাদেরকে দেখা যায়নি।

এমনকি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠানগুলোতেও তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে তারা নারায়ণগঞ্জে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।  এমনকি বিএনপি’র সেই চরম দুঃসময় গুলোতে তাদেরকে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অথচ ৫ আগস্ট এর পরে সবখানে তাকে দেখা যাচ্ছে এবং নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র কিছু নেতা এ সমস্ত হাইব্রিডদের প্রশ্রয় দিচ্ছে যার ফলে বিভিন্ন ভুঁইফোর সংগঠনের ব্যানারে এরা মাথাচাড়া দিচ্ছে এবং স্বৈরাচারকে পেট্রোনাইজ করছে। এদেরকে অংকুরেই বিনষ্ট করতে না পারলে আমাদেরকে আবারো কড়া মাশুল গুনতে হবে।

সেই সময়ের ভবিষ্যৎবাণী ধীরে ধীরে ফলতে শুরু করেছে। স্বৈরাচারের দোসর গণহত্যা মামলার আসামি মাকসুদ চেয়ারম্যানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা মিলছে বিএনপি সমর্থিত সেসব  সনাতনী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের।

যদিও বিএনপির নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রচারণায় মশগুল আছে কিন্তু সেসব প্রচারণায় দেখা মিলছে না তথাকথিত নব্য বিএনপি সাজা এসব সনাতনী নেতৃবৃন্দের বরং তারা স্বৈরাচারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যেনো নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। আর তাই বিএনপি প্রার্থীদের পরিবর্তে স্বৈরাচারের দোসরকে বিজয়ী করার চেষ্টা করছেন।