
রূপগঞ্জে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাট, কালবার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে প্রকল্পের ৪০ থেকে ৫০ পার্সেন্ট টাকা লুট করেছে বলে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যানে আব্দুর রাজ্জাক শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে।
মোটা অংকের পার্সেন্টিসের বিনিময়ে ওই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শেল্টার দিচ্ছেন উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান। মাসের পর মাস ইউনিয়ন পরিষদের টাকা লুটপাট চলতে থাকলে প্রতিবাদ আর ক্ষোভে ফুসে ওঠেছে ইউপি সদস্যরা।
প্রতিবাদ করলে আওয়ামীলীগ ট্যাগ দিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকি দিয়ে জিম্মি করা হয় ইউপি সদস্যদের। উপজেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগীতা চাইতে গেলে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যকে উল্টো হুমকি দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিকুর রহামন।
পরে লুটপাটের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক বিচার চেয়ে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও দুদকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য।
অভিযোগ থেকে জানাযায়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গাজীর মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। তাই ২০২০ সালে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিনা ভোটে আওয়ামীলীগ নেতা রাজ্জাক শিকদারকে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান সিলেকশন করেন সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তারপর থেকেই শুরু হয় রাজ্জাক শিকদারের স্বৈরাচারি কর্মকান্ড। গেল ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আগষ্ট মাসে মুখোশ পাল্টে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহায়তায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন শুরু করেন আ.লীগ নেতা রাজ্জাক শিকদার।
তখন থেকেই শুরু করেন স্বেচ্ছাচারিতা, স্বৈরাচারিতা, লুটপাট। একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা শুরু করেন ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম। ইউপি সদস্যদের সাথে বৈরি আচরণ করা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইউপি সদস্যদের উপর হামলা করা, পরবর্তীতে উল্টো মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করা, প্রকল্পের অর্থ আত্বস্বাৎ করা যেন তার নিয়মে রূপ নেয়।
ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য হাসিবুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের জন্য উপজেলা থেকে পিআইসি (চওঈ) প্রজেক্ট থেকে প্রতি প্রকল্পে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ ২ লাখের মধ্যে ৫০% টাকা রেখে মেম্বারদের দেয়া হতো ১ লাখ টাকা।
সেই ১ লাখ টাকার মধ্যেও কর্তন হয় ১০ হাজার টাকা সিকিউরিটি মানি। আর কাজের পুর্বে ইউএনও’র কথা বলে জমা নেয়া হতো স্বাক্ষরিত ব্ল্যাঙ্ক চেক।
তিনি আরো জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে পিআইসি (চওঈ) প্রকল্পের ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে মাত্র ২৫ লক্ষ টাকার এবং চলতি বছরের জুন মাসে (জুন ২০২৫ ইং) ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা।
বাকী ৫০ লক্ষ টাকার কোন তথ্য নেই। এছাড়াও চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারী ১% স্থাবর সম্পতির বরাদ্বকৃত ৪০ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ করা হয়েছে মাত্র ২৮ লক্ষ, গত জুন ২০২৫ইং তারিখে ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের মধ্যে কাজ করা হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকার, বাকী ৪৮ লক্ষ টাকার কোন হিসাব নেই।
এছাড়াও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টিআর প্রকল্পের কাজেও ইউপি সদস্যদের মুল্যায়ন করা হয় না।
উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ৫০% বরাদ্দ দেয়া হয় কেবল ৮নং ওয়ার্ডে। পরিষদে ইউপি সদস্য, ইউপি সচিব থাকলেও চেয়ারম্যানই একক নিয়ন্ত্রনকর্তা। বিভিন্ন ভাতা কার্ড বিতরণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতি ও অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে।
নেই মাসিক সভা, দেয়া হচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদের আয় ব্যায়ের হিসাব। বিজিএফ, ভিজিডি, টিসিপির তালিকা প্রদানের সময় ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে চেয়ারম্যানের ব্যাক্তি পছন্দে তালিকা প্রদান করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য বলেন, পিআইসি প্রকল্পের ২ লাখ টাকার মধ্যে আমরা ১ লাখ টাকা পাই, তাও আবার কাজের আগে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে হয়। বিগত সরকারের সময়ে ২ লাখ টাকার প্রকল্পে অনেক বেশি টাকা পেতাম। এই কম টাকায় রাস্তাঘাটের কাজ করতে গিয়ে জনগনের গালমন্দ খেতে হয়। পরিষদের কোন কাজে আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না।
দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা রমজান বলেন, প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদের জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে গড়িমসি করে হয়রানি করা হয়।
দুয়ারা এলাকার আনোয়ার বলেন, টিসিবির একটা কার্ডের জন্য গিয়েছিলাম, আমরা গরিবরা পাইনা। অথচ যাদের দালান বাড়ি আছে এমন লোকেরে ঠিকই কার্ড দিছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, হুমকির বিষয়টি সঠিক নয়। তবে দুজনকে মিলেমিশে চলার পরামর্শ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এরকম কোন অভিযোগ পাইনি। ঘটনার তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।