বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইতিহাসেই প্রথমবারের মত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩১ জুলাই।
ইতিমধ্যে নগরীর শেখ রাসেল পার্ক ওসমানী স্টেডিয়াম এই দুইটি স্থান জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের জন্য নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে কেন্দ্রর সাথে আলাপ আলোচনা করে এই দুইটি মধ্যে যেকোন একটি স্থানে শেষ পর্যন্ত একটি স্থান নির্ধারণ করা বলে জান গেছে।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। নতুন কমিটির মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনের পাশাপাশি সংগঠনের গতি ফিরবে বলে প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
কারা আসছেন সংগঠনের নতুন নেতৃত্বে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত কৌতুহল বাড়ছে। জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ যতোই সামনে এগিয়ে আসছে, পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে ততোই বাড়ছে স্নায়ুর লড়াই। নারায়ণগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছে একাধিক প্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছে ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ছগির আহম্মেদ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সদ্য ঘোষিত সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামির হোসেন রনি।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাহের উদ্দিন আহমেদ সানি, আলী হাসান সজীব, কায়কোবাদ রুবেল, মাফরুল ইসলাম।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন মুখ আসতে পারে এমন ধারণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগকে শক্তিশালী হবে। ফলে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা।
যাচাই- বাছাই করে সৎ, শিক্ষিত ও রাজপথের ত্যাগী নেতাকে আমরা মূল্যায়ন করবো। কে কার লোক তা সেটা বড় বিষয় নয়। কে দলের জন্য নিবেদিত, সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে পারবে তার হাতেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগে সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরকে মূল্যায়িত করা হবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই কমিটিতে স্থান পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থীরা তাদের জীবন বৃত্তান্ত বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে জমা দিচ্ছেন। আর ছুটছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দ্বারে দ্বারে চালাচ্ছে নানা তদ্ববির। চলছে লবিং ও গ্রুপিং।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা পরপরই জেলার সকল সাংগঠনিক ইউনিট ঢেলে সাজানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ছয়জন সহ-সভাপতির নেতৃত্বে ছয়টি টিম গঠন করে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আওতাধীন রূপগঞ্জ থানা, সোনারগাঁ থানা, ফতুল্লা থানা ও তিনটি ইউনিয়নের সম্মেলন করা হয়নি। এগুলো সব জুলাই মাসের মধ্যে করা হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
জানাগেছে, ২০০৩ মতান্তরে ২০০৬ সালে আহবায়ক ও ৫ জন যুগ্ম আহ্বায়কসহ মোট ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এতে আহ্বায়ক করা হয় নিজাম উদ্দীনকে এবং যুগ্ম আহবায়ক করা হয় ফিরোজ হোসেন, আব্দুল মতিন মন্টু, গোলাম কিবরিয়া খোকন ও শাহাজাদা প্রধান বাবুলকে। তাদের ওই আহবায়ক কমিটি দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৮ বছর পার করলেও পূর্নাঙ্গ হয়নি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২০ জুলাই শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগেরা কমিটি বিলুপ্ত করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়। তখন সভাপতি করা হয় মো. জুয়েল হোসেনকে যিনি বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক করা হয় নারায়ণগঞ্জ ঞ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান।
তাদের অধীনে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে তেমন একটা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মো. জুয়েল হোসেন অনেকবারই ঘোষণা দিয়েছেন যে কিছুদিনের মধ্যেই থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু কার্যত সেই ঘোষণার বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয় নাই। তবে জেলা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নতুন কমিটিতে যারা আসবে তারা পূর্বের কমিটি ভুল করবে না বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রয়াত সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নির্দেশক্রমে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং এর অন্তর্গত সদর থানা, ফতুল্লা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, বন্দর থানা, রূপগঞ্জ থানা, সোনারগাঁ থানা কমিটি ও মহানগরের অন্তর্গত ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
সেই সময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক পদে ছিলেন নিজাউদ্দিন। আর মহানগরের সভাপতি জুয়েল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল।