নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

২৮ এপ্রিল ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ঘিরে বিভক্ত আওয়ামীলীগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২১:২৬, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ঘিরে বিভক্ত আওয়ামীলীগ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগ। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে গিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পাটির মনোনীথ প্রার্থী সেলিম ওসমান। এবং আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এসময় তার সঙ্গে জাতীয় পাটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে আওয়ামীলীগ অফিসে শামীম ওসমান সমর্থিত জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাদের দেখা গেলেও দেখা যায়নি নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমর্থিত জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের অপর অংশটিকে। যদিও নির্বাচন ঘিরে এই আসনে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ এবং  যুবলীগের ৬ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছিলেন। তাছাড়া গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগ এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়নি। এতে হতাশ হয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশাী নেতারা। ফলে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামীলীগের বিভক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে।


দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামীলীগের ৬ শীর্ষ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছিলেন। তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ বাদল, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত ও মহানগন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল। আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো দল এখানে নৌকার প্রার্থী দিবে। গত ক’বছর ধরে আওয়ামীলীগের নেতারা এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিকভাবে তৎপরতাও চালিয়েছেন। ফলে বিএনপি-জামাতের আন্দোলনের মুখে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আওয়ামীলীগ অফিস নেতাকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের হতাশ করে ১৫ নভেম্বর আওয়ামীলীগ সারাদেশে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। হতাশা নেমে আসে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়াও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। যার কারণে ১৫ নভেম্বরের পর থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। নেতারাও আগের মতো আসেন না বিধায় কর্মীরাও গড়হাজির। নেতাকর্মীদের অনেকই মন্তব্য করছেন, সারাজীবন আওয়ামীলীগ করেছি। আর ভোট দিতে হবে লাঙ্গল মার্কায়। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। 


এদিকে সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে সন্ধ্যায় জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রথমবারের মতো আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের ভেতর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী আলোচনায় মিলিত হন। সেখানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ অনুপস্থিত ছিলেন। 


আওয়ামীলীগ অফিসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান বলেন, অনেকে ভাবছে এখানে নৌকা কেন দেয়া হয়নি। এটা কষ্ট পাওয়ারই কথা। কিন্তু এই কষ্টে ভুল ছিল কীনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে। আমার সাথে একবার বসা উচিত ছিল, কে নমিনেশন নেবে। আমার ভাইয়ের (নাসিম ওসমান) মৃত্যুর পর থেকে আমি এই আসনে দায়িত্ব পালন করছি। আমার ছোট বোন আইভীও বলেছে সেলিম ভাইকেই কেন নৌকা দিয়ে দেয়া হয় না। আমিতো রাজাকারের সন্তান না। আমার গায়ের শিরায় শিরায় আওয়ামী লীগ। প্রতিটি মিটিংয়ে গিয়েছি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে নিয়ে এসেছি। 


তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন দেয়ার পর এই একটি আসন খালি ছিল। আমাকে বলা হল ঘরের ছেলে ঘরে থাকুক। আওয়ামী লীগ আমাকে ভালবাসে। হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ নারায়ণগঞ্জে এসে বলে গিয়েছিল এখানে দুটি পার্টি আছে। ওসমান পার্টি আর ওসমান লীগ। তিনি রংপুরে থেকে বুঝতে পারলে নারায়ণগঞ্জে থেকে তারা কেন বুঝতে পারছে না।


ওদিকে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বন্দরের কলাগাছিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন সেলিম ওসমান। প্রচারণায় জাতীয় পাটির নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামীলীগের শামীম ওসমান সমর্থিত নেতারা উপস্থিত রয়েছে। কিন্তু নেই অপর অংশটি। যদিও এই আসনে জাতীয় পাটির বিপরীতে শক্ত কোন প্রার্থী নেই। ফলে আওয়ামীলীগের বিভক্তি ভোটের মাঠে কোন প্রভাব ফেলবে না, এমনটাই মনে করছেন সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজনরা।