নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

০৯ মে ২০২৪

ফের মুখোমুখি শামীম-গিয়াস 

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:১৯:২৭, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

ফের মুখোমুখি শামীম-গিয়াস 

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমান সময়ে আলোচিত জুটি এ কে এম শামীম ওসমান ও মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তাদের একজন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও অপরজন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি। এক সময় দুইজন একই দলের (আওয়ামীলীগ) রাজনীতি করতেন।  ৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের অল্প কয়েকদিন আগে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন গিয়াস উদ্দিন। ফলে দুই নেতার দলীয় সম্পর্ক ‘সাপে নেউলে’ রূপ নেয়। এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন ও শামীম ওসমান প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন ভোটযুদ্ধে। সেই যুদ্ধে শামীম ওসমান পরাজিত হন। এমপি নির্বাচিত হয় গিয়াস উদ্দিন। এরপর জল অনেক গড়িয়েছে। শামীম ওসমান ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন। গিয়াস উদ্দিন এই ১০ বছর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রাখেন প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে। কোন প্রকার রাজনৈতিক বাধাহীন ভাবে মাঠ দাপিয়ে বেড়ান শামীম ওসমান। কিন্তু দীর্ঘদিন নিরব থাকার পর গত বছর মাঠে নামেন গিয়াস উদ্দিন। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রীয় হয়ে ওঠেন রাজপথে। ফলশ্রুতিতে ১৬ জুন জেলা বিএনপির আহবায়কের পদ পান তিনি। এবং এক বছর পর ১৭ জুন জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচন হন সম্মেলনের মাধ্যমে। 


এদিকে একদিকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন দুই বিষয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠে।  এই অবস্থায় শামীম ওসমান এককভাবে ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেইট এলাকায় জনসমাবেশ করে নিজের শক্তির জনান দিয়েছেন বিরোধী শিবিরে। পক্ষন্তরে গিয়াস উদ্দিনও ২৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের পিছনে জেলা বিএনপির জনসমাবেশ করে শোডাউন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্ধির বক্তব্য বিবৃতি সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। একে অপরকে ঘায়েল করে নানাা বিশদাগার করছেন। তবে দুই শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে শামীম ওসমানের ইটের জবাব গিয়াস উদ্দিন পাথর দিয়ে দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচন ঘিরে কেউ কাউকে ছাড় দিবেন না। কারণ জানুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে ২৩ বছর পর ভোট যুদ্ধে আবারো মুখোমুখি হবেন এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তখন পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠবেন শামীম ওসমান। আর গিয়াস উদ্দিন দ্বিতীয়বার পরাজিত করার মিশনে থাকবেন।


ওদিকে শামীম ওসমান তার গরম বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিনকে বিষদাগার করছেন, জবাবে গিয়াস উদ্দিন ঠান্ডা বক্তব্যে শামীম ওসমানকে একহাত নিচ্ছেন। রীতিমত এই দুই নেতার বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য রাজপথে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এই উত্তাপ কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে শংকিত দুই শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।


রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী প্রার্থী যেমন শামীম ওসমান তেমনি শামীম ওসমানের মোকাবেলায় বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন। কারণ দুইজনেরই রয়েছে সু-সংগঠিত নিজস্ব বলয়ের কর্মীবাহিনী। সঙ্গে পেশিশক্তি। শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী-মাস্তান লালন-পালনের অভিযোগ তোলা হলে গিয়াস উদ্দিনও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জবাসী শামীম ওসমানকেও দেখেছে আবার ২০০১ সালের ১ অক্টোরের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিনকেও দেখেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় কেউ কারো থেকে কম যাননি। 


সবশেষ এই দুই শীর্ষ নেতার পাল্টাপাল্টি বিষদাগারমূলক বক্তব্যে যা উঠে আসে তা হলো- ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জেলা শ্রমিকলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গিয়াস উদ্দিনকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ভালো লোকরা যখন ছিল তখন সহঅবস্থান ছিল। এখন খুনিরা এসে পড়েছে। বয়সে আমার শাশুড়ির সমান। বুড়া বয়সে ২৩ বছরের মেয়ে বিয়ে করেছেন। আপনার বউ এর নামও বলতে পারি, কোন এলাকায় থাকেন সেটাও জানি। রাজনীতিটাকে নষ্ট করবেন না। পুলিশ ধরে না দেখে ভাববেন না আপনারা কোথায় আছেন জানি না। বাড়ি-ঘর কই সবই জানি। ভাববেন না আপনারা কোথায় থাকেন এটা জানি না। পুলিশ আপনাদের ধরে না দেখে ভাববেন আমরা জানি না। কিন্তু আমরা সব জানি। প্রতিহিংসা চাই না। মানুষের মনে থাকতে চাই। রাজনীতিটা নষ্ট কইরেন না। একসাথে থাকতে দেন। ছেলেদের রাস্তায় নামিয়ে এমন কিছু করবেন না যাতে মামলা খেয়ে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়।


১৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, শামীম ওসমান  যে ভাষায় কথা বলেন তার উত্তর দিতেও রুচিতে বাধে। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে বসে হার্ড ড্রিঙ্ক করি না, ধুমপানও করি না। আমার সন্তানরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, খুনখারাবিও করে না। খুনের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরও প্রশসানকে ব্যবহার করে খুনের দায় থেকে তাদের রক্ষা করার চেষ্টাও করি না। আমার সন্তনরা ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলে না। ভুমি দস্যুতা, মাদক ব্যবসার ভাগ নেয় না।

 

আমাদের পরিবার, সাধারণ পরিবার।  দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করে। এ কারণে যদি কেউ আমাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে, আমাদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে কুৎসা রটায় এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়, এসব বক্তব্যের প্রত্যুত্তর দেওয়ার রুচিবোধও আমাদের নেই। শামীম ওসমানের বক্তব্য বাচলতা মাত্র।পুরো পরিবার নিয়ে লুটপাট করতে করতে তিনি এখন বেসামাল হয়ে পড়েছেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।