নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘটছে দূর্ঘটনা, বাড়ছে ভোগান্তি

অবৈধ দখলে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:৫৯, ১১ নভেম্বর ২০২৪

অবৈধ দখলে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা

অবৈধ স্থাপনা দ্বারা দীর্ঘদিন ধরেই দখল হয়ে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা। এর ফলে রেলের জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়ার যাত্রীরা ঠিকমত চলাচল করতে না পারার পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের সময় ট্রেনে কাঁটা পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে।

এর ফলে অনেকেই আহত হচ্ছেন, বরণ করে নিচ্ছেন প্রঙ্গুত্ব। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে সামনে বাস-ট্রেনের সংঘর্ষে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। 

ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়। আহত হোন কমপক্ষে ৭ জন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পথচারীও ছিল। এ ঘটনার পর শুধুমাত্র নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও এখনো এটি দখলমুক্ত করা সম্ভব হয় নি।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।

সচেতন মহলের প্রত্যাশা ছিল, ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে কিন্তু এখনো দেদারসে চলতে ব্যবসা বাণিজ্য। সেই সঙ্গে পূর্বের ন্যায়ই এইসব স্থাপনা থেকে চলছে চাঁদাবাজি।

এইসব বিষয়ে অভিযোগের তীর নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলামের দিকে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তার কোনো প্রদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। 

এদিকে, এইসব অবৈধ স্থাপনার কারণে পরিষ্কার কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। তাদের কেউ এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে হলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা থেকে শুরু করে বদলী করে দেওয়া হয়।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ স্কাউটসের সদস্য ও বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। অচিরেই এইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে আগামীতে আরও দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন চলাচল করার দুইপাশে বর্তমানে গড়ে তোলা হয়েছে ভাতের হোটেল, চা-সিগারেটের দোকান, ফলের আড়ৎ ও থান কাপরের দোকান ও বাজারসহ বিভিন্ন আইটেমের দোকানপাট। এসব দোকানপাট থেকে স্টেশন মাস্টারের নামে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। সেই টাকা পদ মর্যাদা অনুসারে ভাগবন্টন করা হয়।

অবৈধ স্থাপনার সুযোগে কতিপয় কিছু রেলের অসাধু অবৈধ স্থাপনা ভাড়া দিয়ে রাতের আধাঁরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রেলওয়ে মাস্টারের গাফিলতিসহ চার দফা দাবিতে গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির মনির আহম্মেদ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির রামচরণ সর্দারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্বারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তার অধীনে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন ও আশেপাশের সকল জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ স্থানীয় হরিজন সম্প্রদায়ের মোট ১৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ পেয়েছিলেন।

২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি সময় ধরে ওই স্টেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীগণ দেশের কঠিনতম মহামারীর মধ্যেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিরলস পরিশ্রম করে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকারি সকল ছুটিতেও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কোনো বিশ্রাম নেই। দেশের বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনের কারণে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও দেশের বিভিন্ন দপ্তর তথা অফিসের আওয়ামী পন্থী অফিসারদের স্বৈরাচার এখনো রয়েছে।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করার পর ও উক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের থেকে মাটি কাটা, ঘাস কাটা, পাথর উঠানো, ড্রেন বানানো ইত্যাদি কাজগুলো করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। 

যদিও উক্ত কাজগুলো করার জন্য পি.ডব্লিউ.আই.ডব্লিউ বিভাগের লোকজন সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের সিস্টেমেটিক্যালি তাদের থেকে বেতনের অর্ধেক অংশ নিয়ে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অন্য কাজ অথবা ব্যবসা করার জন্য।

ওই কাজগুলো করতে তারা অস্বীকৃতি জানালে তৎকালীন অনেক দূরে বদলি করানো হবে বলে তাদের হুমকি দেওয়া হয়। স্টেশনের অনিয়ম তথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ইতিমধ্যে ৬ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বদলি করে অন্যান্য রেলওয়ে ষ্টেশনে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য মাত্র ৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। তার মধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মী মোফাজ্জল হোসেন খান শুরু থেকেই পরিচ্ছন্নতার কাজ না করে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খানের ব্যক্তিগত কাজ, যেমন: স্টেশনের অলিতে গলিতে প্ল্যাটফর্মের উপরে দোকানপাট ও হকার বসিয়ে তাদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা তোলা এবং স্টেশন মাস্টার অফিসের সামনে হাঁস-মুরগি কবুততের খামার দেখাশোনা করাই হচ্ছে মোফাজ্জলের কাজ। 

ওই স্টেশনে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে কনজারভেন্সি স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক ২০২১ সালে অবসর হন এবং তাহার পদবী বর্তমানে খালি রয়েছে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর রাহুল দাসকে কনজারভেন্সি জমাদারের দায়িত্ব পালন করার অফিস কর্তৃক লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে দপ্তরের অফিস কর্তৃপক্ষের বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন সুফল পাওয়া যায় নাই।  

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ স্থাপনা দ্বারা রেলওয়ের আশেপাশের এলাকা দখলে রয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ে বিভাগকে জানানো হয়েছে। রেলওয়ের বিভাগের ভূমির দায়িত্বে যিনি রয়েছেন উচ্ছেদ অভিযান তিনি পরিচালনা করে থাকেন। এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে যোগদান করেছি। নারায়ণগঞ্জের রেলওয়ে স্টেশনের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিচ্ছন্ন কর্মী সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো ডিপার্টমেন্টেই জনবল সংকট রয়েছে। বর্তমানে নিযোগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি, অচিরেই জনবল সংকট দূর হয়ে যাবে। চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য বিষয় আমার জানা নেই।