নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

০৮ মে ২০২৪

কা‌শি চি‌কিৎসায় হোমিওপ্যাথি

ডা. গাজী খায়রুজ্জামান

প্রকাশিত:০০:৩৭, ১৫ আগস্ট ২০২২

কা‌শি চি‌কিৎসায় হোমিওপ্যাথি

ফুসফুসের বাতাস যখন কোনো কারণে প্রচণ্ড বেগে স্বরযন্ত্র দি‌য়ে তীক্ষ্ণ শব্দসহ বেরিয়ে আসে, তখন তা‌কে কাশি ব‌লে। এ‌টি বি‌ভিন্ন ধর‌ণের বা‌হ্যিক কো‌ন বস্তু বা উত্তেজক কো‌ন বস্তু ‌থে‌কে শ্বাসনা‌লীকে রক্ষা ক‌রে।‌ যেমন- খাদ্যবস্তু গলাদকর‌ণের সময় বা শ্বাস গ্রহ‌ণের সময় কো‌ন কিছু শ্বাসনা‌লি‌তে ঢুক‌লেই  কাশি হ‌য়ে তা প্র‌তি‌রোধ ক‌রে বের ক‌রে দেয়। তাই এ‌টিকে  ফুসফুসের একটি আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থাও বলা যায়।



এ‌টি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর-উ‌ত্তেজক বস্তুকে ফুসফুস থে‌কে বের করে দিয়ে ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। মা‌ঝে মা‌ঝে স্বল্প সম‌য়ের জন্য কষ্টবিহীন কা‌শি ফুসফুসের সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু ঘন ঘন বির‌ক্তিকর-কষ্টদায়ক কাশি সাধারণত কোনও রোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে।



ফুসফু‌সের ও শ্বাসনালীর প্রদাহ, স্বরভঙ্গ, হৃদ‌পি‌ন্ডের সমস্যার জন্য ফুসফুস প্রদাহ, স্বরয‌ন্ত্রের প্রদাহ, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, চাপা-পড়া এলা‌র্জি, যক্ষ্মা‌ ইত্যা‌দি রো‌গের উপসর্গ হি‌সে‌বে কা‌শি দেখা দি‌তে পা‌রে। আল‌জিহ্বার বৃ‌দ্ধির ফ‌লে কা‌শি হ‌তে পা‌রে। 


এ‌টি ফুসফুসের রোগ ব্যতীত অন্যান্য রো‌গের কারণেও হ‌তে পা‌রে।‌ এ‌টি যে কোন বয়সের যে কো‌নো মানু‌ষের হ‌তে পা‌রে। এ‌টি সম্প‌র্কে  সক‌লেরই কম-বে‌শি ধারণা ও অভিজ্ঞতা আ‌ছে।



বি‌ভিন্ন ধর‌ণের কা‌শির বর্ণনা ও  কারণ এবং লক্ষণঃ

কা‌শি ১-২ সপ্তাহ ব্যা‌পী স্থায়ী হলে তাকে স্বল্পস্থায়ী  কাশি বা এ‌কিউট কফ বলে। এই কাশি সাধারণত সর্দি-জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ার কারণসহ অন্যান্য কার‌ণেও হ‌তে পা‌রে। স‌র্দি জ্ব‌রে অল্প কা‌শি হ‌তে পা‌রে।‌ নিউ‌মো‌নিয়া‌র কা‌শিতে যে শ্লেষ্মা উ‌ঠে তা‌ কখনো সাদা, কখনো হালকা-হলুদ এবং এক পর্যায়ে কফের মধ্যে ই‌টের গুড়ার মত বা মরিচার মতো লাল রং মিশ্রত থাকে।



তিন দিন থেকে সপ্তাহকাল পর্যন্ত যে কাশি থাকে, তাকে সাব-অ্যাকিউট কাশি বলে। ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণ-পরবর্তী কাশি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়।



দুই সপ্তাহের অধিক কাশি হলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী কাশি বলে।

কা‌শি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে তাকে পুরোনো কাশি (Chronic Cough) বলে। এ‌টি সাধারণত অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের টিউমার,  ফুসফুসের এবসেস বা ফোড়া, পোস্ট ন্যাজাল ড্রিপ রাইনাইটিস, সাইনোসাইটিস, সিওপিডি, আইএলডি, ক্যান্সার ও যক্ষ্মার জন্য হ‌তে পা‌রে। য‌দি পুরাতন কাশির সঙ্গে রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা বা কফ বের হয় , সেটি যক্ষ্মা বা ফুসফুস ক্যানসারের কারণেও হতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সারের কফে ছিঁড়ে ছিঁড়ে রক্ত যায় এবং বুকে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। এ ধরনের রোগের শেষের দিকে অথবা ভোকাল কর্ডে ইনফেকশন হলে কাশিতে আর জোর থাকে না, তখন  রোগীর কাশি অনেক সময় ভিন্ন শব্দে শুনতে পাওয়া যায়, যাকে বভাইন কা‌ফ (BovineCough) বলে।



কাশির সা‌থে  কফ বা শ্লেস্মা বের না হলে তাকে  শুকনো কাশি ব‌লে। সাধারণত হাঁপানি বা অ্যাজমা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা,  শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ও তার পরবর্তী জটিলতা, সাইনোসাই‌টিস ও অ্যালার্জিক রাইনাই‌টিস এর পরবর্তী জটিলতা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বিভিন্ন রকমের ওষুধ সেবন, যেমন- কিছু ওষুধ এসিই ইনহিবিটর (ACE inhibitors) বা বিটা ব্লকার সেবন, ইত্যাদি কারণে শুষ্ক বা খুসখুসে কাশি হয়ে থাকে। খুসখুসে কাশির আরো একটি অন্যতম কারণ হলো ধুমপান।এছাড়াও ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোনো ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র শুকনো কাশি হতে পারে।



সাধারণত কাশির সঙ্গে প্রচুর শ্লেষ্মা নির্গমন ফুসফুসের ফোড়া বা ইন‌ফেকশনের জন্য হয়ে থা‌কে।



‌কিছু কা‌শি শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশ, যেমন-শ্বাসনালির সমস্যা, ফ্যারিনজাইটিস ও ল্যারিনজাই‌টিস এর জন্য হ‌য়ে থা‌কে।



সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে বা শুয়ে থাকলে অথবা কো‌নো প্রকার খাবার  খাওয়ার প‌রে যদি কাশি হয়, সেটি পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা কার‌ণে হয়।

 

কাশি দিলে বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা হলে, তা শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া আক্রান্ত  কা‌শি।



য‌দি শীতে, ঠান্ডায়, গরমে, বর্ষায় বা ধুলাবালিতে কা‌শির মাত্রা বেড়ে যায়, তা হ‌লে সে‌টি অ্যালার্জিজনিত কা‌শি।



ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জ্বর-সর্দি ভালো হয়ে গেলেও সাধারণত কাশি ভালো হতে চায় না বা কয়েক সপ্তাহব্যাপী কাশি লেগেই থাকে। হাঁপানি, অ্যালার্জি বা সাইনোসাইটিস না থাকলেও এমনটি ঘটতে পারে। এ‌কে ভাইরাস সংক্রমণ-পরবর্তী কাশি ব‌লে।



ব্রঙ্কিএকটেসিস (Bronchiectasis) নামক রোগটিতে পাকা পাকা হলুদ দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা নির্গত হয়। ফুসফুসে এনএরোবিক জীবাণু সংক্রমণের ফলে এই দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো কফের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত যাওয়া। প্রচুর সংখ্যক এ ধরনের রোগীকে যক্ষ্মা ভেবে ভুল করে অ‌নেক সময় যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে।



ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এমন একটি রোগ যা পরিবেশ দূষণ এবং মূলত ধূমপানের জন্য হয়ে থাকে। এ রোগে শ্বাসকষ্ট হলো অন্যতম প্রধান লক্ষণ। তবে কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। কফ প্রথমে অল্প আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পরে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে কফ বের হতে চায় না। একটু কফ বের হয়ে গেলে রোগী শ্বাস যন্ত্রণা থেকে আরাম পায়। 



ফুসফুসের ফোঁড়া বা Lung Abscess হলে কফ পেকে হলুদ হয়ে যায় এবং অনেক সময় কফে দুর্গন্ধ থাকে। 



শীতকালে অনেকে কাশিতে ভুগে থাকেন, যাকে Winter Cough বলে।  



যারা ‌লেকচারার, ক্যানভাসার কিংবা যারা উচ্চঃস্বরে  বক্তৃতা  করেন তাদের গলায় সব সময় ফেরিনজাইটিস হয়ে কাশি লেগেই থাকে। 



হুপিং কাশি (Whooping Caugh):
এই কাশি‌তে হুপহুপ শব্দ হয় ব‌লে এ‌কে  হুপিং কা‌শি ব‌লে। এ‌টি বরডেটেলা প্যারাপারটুসিস (Borderless Pertussis) নামক এক প্রকার ব্যাক‌টে‌রিয়া জীবাণু ঘ‌টিত কা‌শি। এটিকে পার্টুসিসও (Pertussis) বলে। 

এ‌টি শ্বাস তন্ত্রের একটি  সংক্রামক ব্যাধি৷ বাংলাদেশের অনেক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়৷ সাধারণত বড়‌দের এই রোগ হয় না। ঠান্ডা লাগার মতো এই রোগ জ্বর, নাক দিয়ে পানি পরা এবং কাশি দিয়ে শুরু হয়৷ দুই সপ্তাহ পর বুকের ভিতর ঘড়ঘড়ানি শব্দ শুরু হয়৷ রোগী একবারও শ্বাস না নিয়ে ঘনঘন হুপহুপ শব্দ ক‌রে একটানা কাশ‌তে থা‌কে , যতক্ষণ না পর্যন্ত কাশির সঙ্গে এক দলা চটচটে শ্লেষা বেরিয়ে আসে। একসাথে পাঁচ থেকে পনেরোটি কাশি দেয়। এ‌তে রোগীর দম বন্ধেরমত ভাব হয়।‌ কাশির সময় বাতাসের (অক্সিজেনের) অভাবে রোগীর ঠোঁট ও নখ নীল হয়ে যেতে পা‌রে এবং এক পর্যায় ঘড়ঘড় শব্দসহ বমি হতে পারে।



হুপিং কাশি ৩ মাস বা তারও বেশি দিন ধরে স্থায়ী হতে পা‌রে। পাড়ার কোন শিশুর হুপিং কাশি হয়ে থাকলে এবং অন্য শিশুর দমকা কাশির সাথে চোখ দুটো ফোলা ফোলা লাগলে তক্ষনাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 



ঘুংড়ি কা‌শি(Croop):
‌‌ভোকাল কর্ড ও লে‌রিং‌সের অভ্যন্ত‌রে শ্লৈ‌ষ্মিক ঝি‌ল্লী প্রদা‌হিত হ‌য়ে এক প্রকার কৃ‌ত্রিম ঝিল্লী তৈ‌রি হয়ে প্রচন্ড শ্বাসকষ্টসহ কা‌শি হয়। আর এ কা‌শি‌কে ঘুং‌ড়ি কা‌শি ব‌লে। এ‌টি প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Parainfluenza virus ) জ‌নিত কা‌শি। গলা সাঁই সাঁই ক‌রে কা‌শি আরম্ভ হয়। কা‌শির শব্দ ঢংঢং ও কুকু‌রের (Barking dog) আওয়া‌জের মত শব্দ।



এছাড়াও আ‌রো ক‌তিপয় লক্ষণ আ‌ছে তা হো‌মিও ওষুধ নির্বাচ‌নে সহায়ক,‌ যেমন-গলা খুসখুস ক‌রে কা‌শি, শুই‌লেই  কা‌শি,‌ দি‌নে কা‌শি নাই কিন্তু রা‌ত্রি হ‌লেই কাশি শুরু, খাবার বা কোন কিছু খাই‌লেই কাশি বা‌ড়ে, ঘ‌রে অবস্হান কা‌লে বা কা‌রো কা‌রো বা‌হি‌রের খোলা বাতা‌সে ও ধলাবালু‌তে কা‌শি বা‌ড়ে, রাতে বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কাশি বাড়ে। বাগানের ফুলের রেণুর সংস্প‌র্শে অ্যাজমা রোগীর কাশি বা‌ড়ে। কা‌রো কা‌রো ঠান্ডা বা গর‌মে, শীত বা সিগা‌রে‌টের ধোঁয়ায় কা‌শি বা‌ড়ে। আবার কা‌রো কা‌রো ঠান্ডায়, গর‌মে বা গরম কিছু পানাহার কর‌লে কা‌শি ক‌মে। কা‌রো কা‌রো দি‌নের বেলায় কা‌শি এ‌কেবারেই   থা‌কেনা কিন্তু রা‌ত্রি হ‌লেই কা‌শি চ‌লে আ‌সে। কা‌রো কা‌রো দিন রা‌ত্রি সর্বত্র সমান কা‌শি থা‌কে। আবার কারো কারো কাশির ধমকে প্রসাব বের   হয়ে আসে।



তাই কাশিকে রোগ মনে না করে রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ মনে করে প্রকৃত রোগ নির্ণয় করে, লক্ষণ ভিত্তিক হোমিও ওষুধ নির্বাচন করে চিকিৎসা  করতে হবে।


‌চি‌কিৎসাঃ
হো‌মিওপ্যা‌থি চি‌কিৎসায় রো‌গের না‌মের ওপর কো‌নো ওষুধ প্র‌য়োগ করা যায়না,‌ কেউ কর‌লেও তা‌তে ভাল ফল পাওয়া যায়না। কারণ এই চি‌কিৎসায় রো‌গ ও রোগীর লক্ষণসম‌স্টির  মাধ্য‌মে ওষুধ নির্বাচন করে চি‌কিৎসা দি‌তে হয়। তাই যে কার‌ণেই যে প্রকা‌রের কা‌শি হোকনা কেন, তা স‌ঠিক ওষুধ নির্বাচ‌নের মাধ্য‌মে চি‌কিৎসা দি‌তে পার‌লে অতি দ্রুত ও স্বল্প সম‌য়ে কা‌শি আ‌রোগ্য করা সম্ভব।এমনকি (অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়) সর্বপ্রথম এক ডোস ওষুধ প্রয়োগ করার পরপরই রোগীর কাশির প্রকোপ ও ধমক কমে যায়।

প্রাথমিকভা‌বে ব্রা‌য়ো‌নিয়া, বে‌লে‌ডোনা, রাসটক্স, পাল‌সে‌টিলা, ড্রোসেরা, জা‌স্টি‌সিয়া এডা, এরা‌লিয়া রে‌সি, ব্লাটা ও‌রি, ক‌ষ্টিকাম, ফেরাম ফস, পার্টু‌সিন, সিনা, কা‌র্বো‌ভেজ, রিউ‌মেক্স প্রভৃ‌তি ওষুধ লক্ষণানুসা‌রে যে‌কোন ১টি বা ২টি ওষুধ চি‌কিৎস‌কের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন কর‌তে পা‌রেন কিন্তু রো‌গের তীব্রতা, হ্রাস-বৃ‌দ্ধি,‌ রো‌গের কারণ ও উৎস অনুসন্ধান,‌ রোগীর আহার-নিদ্রা, রুচি-অরু‌চি, ঠান্ডা-গরমে ও নড়াচড়ায় রোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি, ধাতুগত ও মান‌সিক লক্ষণ ইত্যা‌দি উপসর্গ অ‌নুসা‌রে উক্ত ওষু‌ধের ডোজ, মাত্রা, শ‌ক্তি, একজন চি‌কিৎসকই নির্ধারণ কর‌তে পা‌রেন। তাই চি‌কিৎস‌কের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা দরকার।

পরীক্ষাঃ

হো‌মিওপ্যা‌থি‌ চি‌কিৎসায় তেমন কোনো প‌রীক্ষার প্র‌য়োজন হয় না। কারণ রোগী ও রোগের লক্ষণ সমস্টির  চি‌কিৎসা পদ্ধ‌তি এ‌টি। অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, সাধারণত হো‌মিও চি‌কিৎসায় কা‌শি পূর্ণ আ‌রোগ্য হ‌তে তিন সপ্তা‌হের বে‌শি সময় লা‌গে না। য‌দি কা‌শি তিন সপ্তা‌হ বা তারও  বে‌শি সময় ধ‌রে চল‌তে থা‌কে এবং কো‌নো ওষু‌ধেই কা‌শির  উপকার না হ‌লে,‌ রোগ ও রোগীর ই‌তিহাস পর্যা‌লোচনা ক‌রে, যক্ষ্মা বা ক্যান্সা‌রের মত  কো‌নোকিছু স‌ন্দেহ হ‌লে ‌কিছু পরীক্ষা করার প্র‌য়োজন হয় এবং পরীক্ষা ক‌রে রোগ সম্প‌র্কে নি‌শ্চিৎ থাকাই ভা‌লো।

প্রাথ‌মিকভা‌বে  যক্ষ্মা সনাক্ত করার জন্য সিবিসি, বু‌কের এক্স-রে  ও  কফ পরীক্ষা করা হয়। য‌দি বু‌কের এক্স-‌রে এবং কফ পরপর তিন বার পরীক্ষা ক‌রেও  যক্ষ্মার জীবাণু ধরা না প‌রে, তা-হ‌লে  বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা (WHO) এর ম‌তে, সে যক্ষ্মার রোগী নয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করা  হয় এক্স-রে পরীক্ষার ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে। অনেক রোগী আছেন যারা শুধু এক্স-রেতে কিছু দাগ থাকার কারণে যক্ষ্মা ভেবে  মাসের পর মাস   ওষুধ খেয়ে চলেছেন। অনেক সময় দেখা যায়, তার কোনো দিন যক্ষ্মাই হয়নি। কেননা, এক্স-রেতে যে দাগটি দেখা যায়, তা অন্যান্য জীবণু বা ফাঙ্গাস দিয়ে নিউমোনিয়া হয়েছিল সেটির দাগ। 

তাই এক্স-রে করে যক্ষ্মা নির্ণয় করতে হলে ব্যাপক অভিজ্ঞতার খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় আরো অন্যান্য পরীক্ষা, যেমন-  মাইক্রোস্কপিক কালচার সেনসিটিভিটি, এমটি, অ্যাজমা নির্ণয়ের জন্য স্পাইরোমেট্রি ও রিভারসিবিলিটি পরীক্ষা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান,   ব্রঙ্কোসকপি প্রভৃতি করা লাগতে পারে।


পরামর্শঃ

রোগী ও তার জামা-কাপড়, বিছানাপত্র এবং বাস স্হান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে  হ‌বে।



শুষ্ক কাশি হলে গলা শুকনো রাখা একেবারেই ঠিক নয়। গলা ভিজা রাখার জন্য  তরল জাতীয় খাবার, যেমন- স্যুপ খেতে পারেন। 



বা‌হি‌রের খোলা খাবার, ফাস্ট ফুড, জ্যাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ব্রেড, পাস্তা, চিপস বা সুপারি, জর্দ্দা, এনা‌র্জি ড্রিংস,‌ কোল্ড ড্রিংস,‌ ফ্রি‌জের ঠান্ডা খাবার, সাম‌য়িক সম‌য়ের জন্য বন্ধ রাখা অধিকতর ভা‌লো। 



অনেকে কাশি হলে মুখে লবঙ্গ রাখতে বলেন এবং গরম দুধ, মসলাযুক্ত রং চা (লিকার চা), আদার  রস  খেতে  বলেন। এতে সাময়িক উপশম হয় বটে, কিন্তু  কারো কারো ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরেই আবার কাশির প্রকোপ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে এসব না খাওয়াই ভালো।



শাকসব্জি ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার এবং তরল জাতীয় খাবার  খাবেন।



টক ও মি‌ষ্টিজাতীয় কোন কিছু খা‌বেন না। টক জাতীয় ফল যেসব ফলে সাইট্রিক এসিড আছে, তা খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ সাইট্রিক এসিড গলায় সংক্রমন ঘটিয়ে কাশি বাড়িয়ে দেয়।



ঠান্ডাজ‌নিত কা‌শি‌তে কুসুম গরম পা‌নি পান কর‌বেন ও গোস‌লে ব্যবহার ক‌র‌বেন। ঠান্ডাজনিত   কা‌শি হ‌লে ফুটান্ত গরম পা‌নির ভাপ (বাষ্প) নাক ও মুখ দি‌য়ে নি‌তে পা‌রেন, এতে অনেক আরাম ও উপশম হ‌বে। ত‌বে গরম পা‌নির ভাব বে‌শি সময় ধ‌রে নেওয়া উ‌চিত নয়; এ‌তে ফুসফু‌সের সমস‌্যা হ‌তে পা‌রে।



ঠান্ডা অসহ্য হ‌লে ঠান্ডা লাগা‌বেন না। আবদ্ধ ঘ‌রে কা‌শি বাড়‌লে, জানালা খু‌লে রাখ‌বেন যা‌তে ঘ‌রে পর্যাপ্ত আ‌লো বাতাস ঢুকতে পা‌রে।

 


ধুমপান, অ‌তি‌রিক্ত মানসিক চাপ ও টেনশন কা‌শি‌কে প্রভা‌বিত ক‌রে। তাই অতি‌রিক্ত মানসিক চাপ ও টেনশন একেবারে দূর না করা গে‌লেও সহনীয় পর্যায় নি‌য়ে আসে‌তে হ‌বে এবং ধুমপান বর্জ‌ন করতে হ‌বে।



কা‌রো কা‌রো ক্ষে‌ত্রে কথা বল‌লে বা হাসাহা‌সি কর‌লে কা‌শি বে‌ড়ে যায়, এ‌ক্ষে‌ত্রে প্র‌য়োজন ছাড়া বে‌শি কথা বলা ও হাসাহা‌সি না করাই অধিকতর ভা‌লো।



যা‌দের কাশি, কফ সিরাপ ও এ‌ন্টিবা‌য়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার প‌রেও যদি সম্পূর্ণ আ‌রোগ্য না হয় এবং সর্বদাই কা‌শি লে‌গে থা‌কে, তারা হো‌মিও চি‌কিৎসা নিন। কারণ প্রকৃতপক্ষে হোমিওচিকিৎসায় রোগটি সম্পূর্ণ আরোগ্য করা সম্ভব।



তাই রোগীদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাই নেওয়া দরকার।



ধুমপানসহ নেশাগ্রস্তরা নেশা পরিহার করুণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন, সুস্থ থাকুন। এবং প্রাকৃ‌তিক বস্তু গ্রহণ করুন, সুস্থ জীবনযাপন করুন।


-লেখক:

ডা. গাজী খায়রুজ্জামান

হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কলামিস্ট

মোবাইল : 01743 83 48 16

সম্পর্কিত বিষয়: