নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

১১ মে ২০২৪

আড়াইহাজার থানায় ওসি নজরুলের ২৫ মাস

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৫:৪৯, ৭ জুন ২০২১

আড়াইহাজার থানায় ওসি নজরুলের ২৫ মাস

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় মো. নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ২১ মে। দীর্ঘ ২৫ মাস তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্ণমেয়াদ অতিবাহিত করা অতীতে এই থানায় ওসি’র দায়িত্বে থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি বলে জানা গেছে। 

সফলতার সহিত তিনি র্দীঘ সময় তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছেন। তবে তার বিদায় (বদলী) বিষয়টি জানতে পেরে অনেকের মনেই কষ্টের আচড় লেগেছে বটে। তারপরও নিয়ম অনুযায়ী তাকে বদলী হতেই হবে এটাই স্বাভাবিক। সফলতার সঙ্গে বিদায় নেওয়াটাও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আনন্দের বিষয়। 

জানা গেছে, এটাই ছিল ওসি’র দায়িত্ব পালনের প্রথম কর্মস্থল। দায়িত্ব অর্জনের প্রথমেই তিনি সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার প্রথম ওসি’র কর্মস্থলে প্রথমে বিভিন্ন কজে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা হলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে চ্যালেঞ্জগুলো তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অতিক্রম করেন। 

আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে তার নানা পদক্ষেপে ক্রমে তার ঝুলিতে যোগ হতে থাকে একের পরএক অর্জন। (৪ জুন) আড়াইহাজার পৌরসভা বাজার জামে মসজিদে জুম্মার নামাজের আগে তিনি তার বদলীর বিষয়টি মুসল্লীদের অবহিত করেন। মাদারিপুর জেলায় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগদান করছেন। 

ওসি নজরুল ইসলামের ২৫ মাসের কর্মকাল : 
আড়াইহাজার থানায় তিনি যোগদানের পর থেকে ক্রমেই উপজেলার আইনশৃঙ্খলায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। ধীরে ধীরে কমে আসে চোরি ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের পরিমাণ। এক সময়ের ডাকাত প্রবন এলাকায় তার সময়কালে ডাকাতির সংখ্যা দ্রুত কমে যায়। মানুষের মাঝে দেখা দেয় স্বস্তি। 
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমটি তিনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার বেশ উন্নয়ন ঘটে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় গ্রুপের মধ্যে বিবাদোমান ঘটনাগুলো বেশ দক্ষতার সঙ্গে তিনি মোকাবেলা করেন। 
এর মধ্যে স্থানীয় কালাপাহাড়িয়ায় ২০২০ সালের ৭ জুন সিনিয়র এসপি (সার্কেল-গ) মাহিন ফরাজীর নেতৃত্বে দিনভর বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের কমবাইন্ড অভিযান। সম্প্রতি খাগকান্দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিবাদোমান বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদে বসে মীমাংশা করে দেওয়ায় তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে বেশ প্রসংসা পেয়েছেন তিনি। মাদক নিমূর্লেও ছিল তার শক্ত পদক্ষেপ। 
থানায় সধারণ ডায়রী (জিডি) ও পুলিশ ক্লিয়ার রেন্সের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন জিরো ট্রলারেন্স। তার সময়কালে জিডি কিংবা ক্লিয়ার রেন্সে কোনো অর্থ দিতে হয়নি মানুষকে। নিজে ও তার স্টাফদের অনৈতিক অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সর্বদা সতর্ক। 
ভুক্তভোগীদের কাছে টেনে তাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত গ্রহণ করতেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এতে মানুষ তার প্রতি বেশ সন্তষ্ট ছিলেন। যা অতীতের যেকোনো সময়ের রের্কড ভেঙেছে। 

মাদক নির্মূল ও থানা কার্যক্রমে গতি : 
একটা সময় প্রতিদিনই দুই থেকে চার জন মাদক ব্যবসায়ী আটক করা হতো। ওসি’র শক্ত পদক্ষেপের ফলে অনেকেই এরই মধ্যে মাদকের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ‘গা’ ডাকা দিয়েছেন অনেক মাদক ব্যবসায়ী। তিনি যোগদানের সময়কালে থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানার সংখ্যা ছিল ৪ হাজারের অধীক। 

তার সময়কালে ১ হাজার ৬০০টি গ্রেফতারী পরোয়ানা নিম্প্রতি করা হয়েছে। প্রতি মাসে মামলা হতো ৭০ থেকে ৮০টি। তিনি যোগদানের পর প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছে ১৫ থেকে ১৭টি। থানায় মুলতবী মামলা ছিল ৩৫০টি। তার পদক্ষেপের কারণে ক্রমে থানার সার্বিক কার্যক্রমে গতি ফিরে আসে। বর্তমানে মামলা সংখ্যা ৩৬টি। 

বছরে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতি রুজু হতো। যোগদানের পর ডাকাতি রুজু হয়েছে ২টি। জঙ্গি দমনেও ছিল তার ব্যাপক তৎপরতা। মানবিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে ওসি নজরুল ইসলাম বেশ সুনাম অর্জন করেন। মহামারী করোনার এই পরিস্থিতিতে তিনি মানুষকে সচেতন করতে প্রতিনিয়ত মাঠে কাজ করে যাচ্ছিলেন। 

ধর্মকর্মেও তিনি বেশ মনোযোগি ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ার চেষ্টা করতেন তিনি। প্রায় সময় রোজাও রাখতেন। দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সাজানোগুচানো সংসার পুলিশের এই কর্মকর্তার। তার জম্মস্থান মুন্সিগঞ্জের সিরাজদী খান উপজেলায়। তাকে আড়াইহাজারবাসী মনে রাখবেন যুগযুগ ধরে। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও ওসি নজরুল ইসলামের নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
 

সম্পর্কিত বিষয়: