নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

১৬ জুলাই ২০২৫

রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০২:৫৯, ৯ জুলাই ২০২১

রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডে স্বপ্না রানী (৪৫) ও মিনা আক্তার (৪১) নামের দুই নারী নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএসবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে ১০ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৩ টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অগ্নিকান্ডের প্রায় ৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

 

আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আহতদের স্থানীয় ইউএসবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্যান্য শ্রমিকরা কারখানার বাইরে বিক্ষোভ ও কারখানার প্রধান ফটকের গেটসহ অন্যান্য জিনিস ভাংচুর করতে থাকেন। নিহতরা হলেন, সিলেট জেলার যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী ও কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার উত্তরকান্দা এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার। শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন।

 

ছয়তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টুন এবং পলিথিন তৈরীর কাজ চলে। সেখান থেকেই হঠাৎ করে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। তবে ওয়েল্ডিং করার সময় নাকি আগুন লাগে বলে জানান কিছু শ্রমিক। এসময় আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছুটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করে। আগুন থেকে বাচঁতে রানী ও মিনা আক্তার নামের দুই নিহত নারী ২ ও ৩ তলা থেকে লাফিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া গুরুতর আহত বাকিদের এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা চারতলা পর্যন্ত উঠে যায়।

 

যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটিতে এখনো ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক আটকে আছে বলে শ্রমিকরা জানান। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ নূসরাত জাহান ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) আতিকুল ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকদের উদ্ধার করতে না পারায় শ্রমিকরা কারখানার সামনে ভাংচুর করেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানাটির যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে করা হয়েছে। অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালনা করায় এ অগ্নিকান্ডে সূত্রপাত হয়।

 

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ছয়তলা বিশিষ্ট কারখানাটির সামনে ও পেছন দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের স্নোরুকেল (মই) ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আগুন ও প্রচন্ড কালো ধোঁয়া থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখনো ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেন। তবে মইয়ের সাহায্যে ভিতরে কেউ আটকিয়ে আছে কিনা খুঁজে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কারখানার শ্রমিক ও ফায়ারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটির ৫ পঞ্চম তলায় একটি ক্যামিকেল গোডাউন রয়েছে। এই ক্যামিকেল গোডাউনের কারণে আগুন ভয়াবহ রূ নিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কারখানাটির কর্মীরা বলছেন, কারখানার ভিতরে অনেক লোক আটকা পড়েছে। আগুন লাগার সময় সবাই যখন এক সঙ্গে বের হয়ে আসা শুরু করে, তখন জটলার কারণে অনেকেই কারখানা থেকে বের হতে পারেনি। কারখানার কর্মীদের এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। তবে ভিতরে কেউ আটকে আছে কিনা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস।

 

এদিকে কারখানার শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কেউ আটকে আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ইতমধ্যে ফায়ার ১৪-১৬ জনকে ভিতর থেকে উদ্ধার করেছে। তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ভিতরে লোকজন আছে কিনা। তবে শ্রমিকরা দাবি করছে ভিতরে লোকন আটকিয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, এই ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ ও কলকারখানার আইন অমান্য করা হয়ে থাকলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিব। নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৭ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

তবে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। এদিকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে দেখা যায়, ভবনটির ৪ তলায় আগুনের লেলিহান শিখা আবারও ছড়িয়ে পড়ে। তখন ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করেন। এ সময় কারখানার অভ্যন্তরে উত্তেজিত শ্রমিকরা একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। তাছাড়া কারখানার মেইন গেটে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করাসহ কারখানার মেইন গেটে অবস্থিত ইসলামি ব্যাংকের বুথ ভাঙচুর করে।

 

এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ রাখে স্বজনহারাসহ কারখানার সকল শ্রমিক ও উত্তেজিত জনতা। এ সময় শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানান, আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি সেকশনে থাকা কেচি গেট বন্ধ করে দেয়। ফলে অনেক শ্রমিক ভিতরে আটকে পড়ে। তাদের ভিতর থেকে বের করতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন ও কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই তাদের দ্রুত উদ্ধার করার জন্য রাস্তায় নেমেছেন তারা।

 

এদিকে স্থানীয় জনতা, শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের বিক্ষোভের কারণে কারখানার আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে।

 

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রূপগঞ্জের ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.নাজিমুদ্দিন বলেন, স্থানীয় কিছু উৎসুক জনতা ও স্বজনহারাসহ সকল শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। তারা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ইসলামী ব্যাংকের বুথ ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে এ পর্যন্ত নিশ্চিত ২ জনের পর আমরা আর নিহতের খবর না পেলেও বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম। এদিকে সর্বশেষ স্থানীয় ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন দুটি মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ২৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। এক্ষেত্রে আমরা গুরুত্বসহকারে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছি। ক্রিটিকাল রোগীদের আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। 


ওদিকে রাত ১১ টার দিকে ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. ওসমান গণি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা জটিল বিধায় ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ১৩ টিম যার যার মতো করে উদ্ধার কাজ ও আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত নিশ্চিত ২ জনের পর আমরা আর নিহতের খবর না পেলেও বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম।

সম্পর্কিত বিষয়: