নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

১৪ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতালে জিম্মি লাশ, নারায়ণগঞ্জ ডিসির হস্তক্ষেপে পরিবারের কাছে ফেরত

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:২২, ১১ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতালে জিম্মি লাশ, নারায়ণগঞ্জ ডিসির হস্তক্ষেপে পরিবারের কাছে ফেরত

রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্তৃক্ষ রোগীর লাশ আটকে রেখে দাবি করে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল। এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি হৃদয়বিদারক পোস্ট করেন নিহত রোগীর অসহায় পিতা রিংকু শরীফ।  

সেখানে উল্লেখ ছিল রাজবাড়ী জেলার কালুখালি উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের রিংকু শরীফের মেয়ে পিংকি শরীফ শুক্রবার সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশে অবস্থিত বেসরকারি বিএনকে হাসপাতালে মারা গেছেন। তার নবজাতক কন্যা তখনও মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু মৃত্যুর পরও শান্তি মিলছিল না পিংকির পরিবারের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর লাশ আটকে রেখে দাবি করে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল। অসহায় পিতা রিংকু শরীফ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে মাত্র ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান লাশটি ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি।

এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনির সঙ্গে এবং বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানান।

অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি দ্রুত বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল হাসানকে জানান। ডা. হাসান এরপর কথা বলেন বিএনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবং রিংকু শরীফের কাছ থেকেও বিস্তারিত তথ্য নেন।

এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রিংকুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশ হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেয়। অবশেষে টানা ১৪ ঘণ্টা লাশ জিম্মি রাখার পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পিংকির মরদেহ ও তার নবজাতক কন্যাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসানকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলি। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করেন। জাহিদুল ইসলাম সত্যিই একজন ভালো ও মানবিক ডিসি। তার কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসান বলেন, অতিরিক্ত সচিব মহোদয়ের নির্দেশ পেয়ে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। রোগীর পরিবারের আর্থিক অসুবিধার কথা জানিয়ে মানবিক কারণে লাশ হস্তান্তরের অনুরোধ করি। তারা সম্মত হন এবং তাৎক্ষণিকভাবে লাশ ও নবজাতক হস্তান্তর করা হয়। এই উদ্যোগের কৃতিত্ব প্রথমে নারায়ণগঞ্জের ডিসি সাহেবের।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন,  ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। যেহেতু বিষয়টি আমার দায়িত্বপূর্ণ জেলার বাইরে ঘটেছে, তাই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি স্যারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিনীত অনুরোধ করি।

বাকি সব ব্যবস্থাপনা করেছেন শেখ মোমেনা মনি স্যার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসান মহোদয়। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি মানবিকতার হাত প্রসারিত করার জন্য।

তিনি আরও বলেন. অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি এবং ডা. মঈনুল হাসানের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা কেউ আমাকে চিনতেন না, তবুও মানবিক কারণে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন। 

পিংকির চাচা জিরু সর্দার জুয়েল বলেন, “তাদের সাহায্য না পেলে আমরা টাকা ছাড়া লাশ বের করতে পারতাম না। আমরা তাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

উল্লেখ্য, পিংকিকে প্রথমে সাভার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এক দালালচক্রের প্রলোভনে তাকে ভর্তি করা হয় বিএনকে হাসপাতালে। শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হলেও ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বিলের অজুহাতে লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর মানবিক উদ্যোগে এগিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তার দ্রুত পদক্ষেপের ফলেই অবশেষে অসহায় পরিবারের হাতে ফিরে আসে পিংকির লাশ।