ফতুল্লার শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি।
২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে। কিন্তু আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাহরাহ বেগম কবরীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে যান।
কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনির হোসেন কাসেমীকে আসটি ছেড়ে দেয়। এতে কস্ট পান শাহ আলম। সেই কস্ট এবং মামলার ভয়ে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
যদিও পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি গণমাধ্যকে বলেছিলেন শারীরিক কারণে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে পদত্যাগ করেছেন। এবং এখন থেকে সাংগঠনিক কোনো পদ-পদবী তিনি গ্রহণ করবেন না।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করার জন্য আমার রাজনীতিতে আসা। বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন গত সেপ্টেম্বরে (২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর) আমার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ১১টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সম্প্রতি এই বিষয়ে অবগত হয়ে উচ্চ আদালত থেকে নাশকতার ওই মিথ্যা মামলায় জামিন পেয়েছি।’ ‘আমার মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আফিয়া-জালাল ফাউন্ডেশন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আজীবন জনগণের সেবা করে যাব।
জনকল্যাণমূলক কাজে দলমত-নির্বিশেষে আমার নিজ এলাকা ফতুল্লাসহ সকল এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করি।’
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের তথ্যমতে, পদত্যাগ করার পর থেকে শাহ আলম পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ডে জড়াননি।
বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামীলীগ সরকারের হামলা-মামলা-নির্যাতন যখন চরম আকারে তখন মোহাম্মদ শাহ আলম তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান রক্ষায় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নিজেকে একেবারেই গুটিয়ে নেন। এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো থেকে আওয়ামীলীগের সময়েই তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
মজার বিষয় হলো জুলাই অভ্যত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রীয় হয়ে উঠেন শাহ আলম। এবং নিজেকে পরিচয় দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিএনপির স্থানীয় একটি অংশও শাহ আলমের দিকে ভিড়তে থাকেন।
বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢামাঢোল বেজে উঠায় “দুধের মাছি” হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন মোহাম্মদ শাহ আলম। নিজের শিল্প কারখানার শ্রমিক আর বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের একটি ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে একাধিক শোডাউন দেন এলাকায়।
দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। এখানেই শেষ নয়, দলীয় মনোয়ন নিশ্চিত করতে ছুটে যান লন্ডনে। মাঠে বলাবলি আছে, ১৫ দিন অপেক্ষা করেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাত পাননি শাহ আলম।
অথচ ৩ এপ্রিল ফতুল্লা থানা বিএনপি অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক বৈঠকে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি শাহ আলম নিবার্চন করলে নমিনেশন পাওয়ার ক্ষমতা রাখি।
ইনশাল্লাহ আমি নির্বাচন করব। কারণ আমি দেখতেছি শুনছি কি হচ্ছে। বিএনপি মনির হোসেন কাসেমীকে জোটের প্রার্থী ঘোষণার দেয়ার পরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেন শাহ আলম। ফলে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি তাকে দল থেকে বহিস্কার করে।
এদিকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ফতুল্লার পাগলা বাজার এলাকায় র্যালি শেষে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ২০০৮ সালের পর ২০১৮ সালেও বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তবে দল ও জোটের স্বার্থে এবং উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।
অথচ ২০১৮ সালে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করেন দল থেকে। যাকে বলে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। পদত্যাগ করে আবার নিজেই নিজেকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মোহাম্মদ শাহ আলম যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন না, এর প্রমান ৩০ ডিসেম্বর তাকে বহিস্কারের চিঠি।
চিঠিতে মোহাম্মদ শাহ আলমকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ‘সাবেক সদস্য’ উল্লেখ করেন চিঠিতে সাক্ষর করা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।
তবে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ফলে তার চিঠিতে তাকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ওয়ান এলেভেনের পর থেকে হঠাৎ করেই আলোচনায় আসার চেষ্টা করেন ফতুল্লার জালাল উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে শাহ আলম। ওই বছরে তৃতীয় ধারার কিছু রাজনৈতিক দল গঠন হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন শাহ আলম।
তিনি তখন নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে একটি ইফতার মাহফিলে মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমকে অতিথি করেন। ওই অনুষ্ঠানে অতিথিরা দেশের দ্ৎুংয়ঁড়;দলের দুই নেত্রীকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে একটি মিলনায়তনে কিংস পার্টি খ্যাত কল্যাণ পার্টির আত্ম প্রকাশ ঘটে। ওই অনুষ্ঠানে লোকজন নিয়ে শাহ আলম উপস্থিত হন। ্হনংঢ়;অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিয়ে কল্যাণ পার্টির জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
কল্যাণ পার্টির প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রারাহিম সেদিন তার বক্তব্যে শাহ আলমের ওপর দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রদান করেন। শুরু হয় শাহ আলমের রাজনীতি। তখন শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা কল্যাণ পার্টিকে অনুদান দেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে শেষ মুহূর্তে বিএনপির মনোনয়ন পান শাহ আলম। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।


































