নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে দালালদেরই খবরদারি, এক ডাক্তারের ৪ সহকারী!

নুসরাত জাহান সুপ্তি

প্রকাশিত:০১:৪৭, ১২ মে ২০২২

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে দালালদেরই খবরদারি, এক ডাক্তারের ৪ সহকারী!

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের বহি.বিভাগের ১০২নং কক্ষে চিকিৎসা সেবা দেন ডা. রাশিদা সুলতানা। এই কক্ষের বাহিরে রোগীর লম্বা সিরিয়াল। সিরিয়ালের বেশির ভাগ রোগীর হাতে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রোগ পরীক্ষার রিপোর্ট। রোগীরদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ৪ তরুণ। তারা রোগীদের ডাক্তারের দেয়া নির্দেশনা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে না করিয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। নিজেদের পরিচয়ে তারা রোগীদের জানায় তারা এই ডাক্তারের সহকারী।


সরেজমিনে বুধবার (১১ মে) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) এই চিত্র দেখা যায়। তবে এই চিত্র কেবল ১০২নং কক্ষেই নয়, হাসপাতালের বহি.বিভাগের প্রায় সকল কক্ষের চিত্র একই। হাসপাতালে ডাক্তারের সহকারীদের কাছে নেই তাদের পরিচয় পত্র। ডাক্তারের সহকারীদের নামে হাসপাতালে চলছে দালালদের অভিনব দৌরাত্ম্য। 


অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁর স্বজনেরা দালালদের হাতে নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখনো কড়া কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কারণ হাসপাতালের নিরাপত্তা ও দালাল নিরসনের কর্মীর সাথেই দেখা মিলে দালালদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।


হাসপাতালের দালাল নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারী মো. সাউদ। তার সাথেই রয়েছে দালালদের সখ্যতা। দালালদের সাথে বিভিন্ন সময়ে তাকে কথা বলতে দেখা যায়। এই বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে যোগদান করার পর ৯০ শতাংশ দালালের সমস্যা সমাধান হয়েছে। আগে দালালেরা রোগীদের বাহিরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্টের জন্য পাঠাতো। কিন্তু এখন এই হার কমে গেছে। এখন ডাক্তারের সাথে ভলেন্টিয়ার থাকে। কিছুক্ষণ পূর্বে আপনার সাথে থাকা দালালরা হাসপাতালে কি করছিল? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভালো প্রশ্ন করেছেন। এই বিষয়ে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আরএমও (আবাসিক মেডিকল অফিসার) ভালো বলতে পারবে।  


 হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এস কে ফরহাদের সঙ্গে হাসপাতালে দালালদের প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রাঙ্গনে যেন দালাল না আসে এজন্য সাউদ নামের একজন কর্মী নিয়োগ রয়েছে। ডাক্তারের কক্ষের বাহিরে অতিরিক্ত ডাক্তারের সহকারী থাকার কথা না। যদি থেকে থাকে তাহলে কেন আছে এ বিষয়ে সাউদকে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা হাসপাতালে দালালদের ঢোকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছি। দালালরা কিভাবে রোগীদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগ পরীক্ষা করতে পাঠাচ্ছেন। এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি এ বিষয়ে হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেন।  
 
এদিকে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কাছে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দিয়ে ভর্তি, শয্যা পেতে এবং রোগ পরীক্ষাসহ নানা কাজে সহযোগিতার কথা বলে হাতিয়ে নেন টাকা। অনেক সময় বকসিশ নিয়ে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের হয়রানিও করেন দালাল চক্র।


হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারীর ডাক্তার সাইদ আল মাহমুদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন সুভাষ চন্দ্র। দালালদের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। তার হাতের রোগ পরীক্ষার রিপোর্ট দেখিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তারের সাথের ছেলেটা আমাদের বলছে, হাসপাতালে টেস্ট হইব না। এইখান (ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার) থেকে টেস্ট করাইতে বলছে। টেস্টগুলো করাতে ১ হাজার ৮০০ টাকা লাগছে। গরিব মানুষ বইলাই তো সরকারি হাসপাতালে আসছি। সরকারি হাসপাতালে টেস্টগুলো করাইতে পারলে কত উপকার হইতো। তার পাশে থাকা অন্য একজন রোগীর স্বজন বলেন, আমার ছেলেকেও ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট পরিচয় দিয়ে এক ছেলে এইখানেই (ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার) করাতে বলছে। হাসপাতালের টেস্ট নাকি ভালো না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার সাথে সাথে গিয়ে টেস্ট শেষে বলে তারে ২০০ টাকা দিতে। টেস্টের খরচ ১ হাজার আর তারে দিছি ২০০ টাকা।
 
হাসপাতালে দালালেরা প্রকাশ্যে তাঁদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। গত ২৪ এপ্রিল এই হাসপাতালের দালাল চক্রের ১৯ সদস্যের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু নিয়মিত নজরদারির অভাবে হাসপাতালের অবস্থা যেই সেই।
 
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান এই বিষয়ে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জেনারেল হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার। হাসপাতালে নিয়মের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সম্পর্কিত বিষয়: