নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

১৮ জুলাই ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত সন্ত্রাসী আকরাম জালিয়াতির দুই মামলায় গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৮:৩৮, ১৭ জুলাই ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত সন্ত্রাসী আকরাম জালিয়াতির দুই মামলায় গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজীর আলোচিত সন্ত্রাসী ও বিএনপি নেতা পরিচয় দানকারী আকরাম হোসেন ওরফে লোহা চোর আকরামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

চেক জালিয়াতির দুটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বুধবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বন্দর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত হোসেন।  

তিনি জানান, ১৯ লাখ ৯২ হাজার ও ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকার দুটি চেকের মামলায় আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সে প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আকরাম হোসেন ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার রতনপুর গ্রামের মৃত কাজী মুসলিম মিয়া ওরফে তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় থাকেন। 

জানা গেছে, ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আদমজী ইপিজেডের একক নিয়ন্ত্রণ নিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পুঁজি করে মামলা বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠে আকরামের বিরুদ্ধে। একাধিক মামলার আসামি আকরাম আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছিলেন আত্মগোপনে। 

৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে আসেন। তার দলীয় কোন পদ নেই। তবে তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। এবং বিএনপির দলীয় অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির প্রবীণ এক নেতা জানান, আকরামের বাবা ছিলেন আদমজী জুট মিলের কর্মচারি। সে সুবাধে বাল্যকাল থেকেই তিনি আদমজীতে থাকতেন।

পরে জড়িয়ে পরেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। তৎকালীন জাতীয় পার্টির সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি সফর আলী ভূঁইয়ার সেকেন্ড ইন কামান্ড হয়ে আদমজীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত হন তিনি। 

২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে তৎকালিন বিএনপি দলীয় এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে যান বিএনপি নেতা।

২০০২ সালের ৩০ জুন আদমজী জুট মিল বন্ধ করে সেখানে ইপিজেড গড়ে তুলতে সরকার যখন সমস্ত জায়গা বেপজার কাছে হস্তান্তর করে, তখন আকরাম বেপজার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নিয়োগ প্রাপ্ত হন। 

ঠিকাদারীর আড়ালে জুট মিলের লোহা, স্ক্রাব ও মালামাল চুরি করে রাতা রাতি টাকার প্রচুর টাকার মালিক বনে যান। পরচিতি পায় লোহ চোর আকরাম হিসেবে।

পরে ইপিজেডের কাজ শুরু হলে বেপজার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে একক আধিপত্য বিস্তারন করেন। এবং ইপিজেডে নিজে গড়ে তোলেন একটি ইমেজ কার্টন কারখানা (বর্তমানে নেই)। 

ওই কারখানার ভেতরে তার ব্যক্তিগত অফিসে গভীর রাত পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের আড্ডা চলতো। বসতো মাদক সেবনের আসর। নিজের কারখানায় বসেই নিয়ন্ত্রন করতেন সমস্ত ইপিজেড।

ইউরো বাংলা বিল্ডাসের নামে ইপিজেড সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়কের পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট গড়ে তুলে ভাড়া দেন। তখন ইপিজেডে গড়ে উঠা শিল্পকারখানা মালিকরা আকরামের কথা অমান্য করার সাহস পেতনা। 

এতে সহজেই ইপিজেডে ব্যবসাসহ বিস্তার করেন একক আধিপত্য। নজরুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদারের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় প্রেপ্তার হয় আকরাম। সে মামলায় জামিনে বেরিয়ে তিনি ইপিজেড ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন।

দাঙ্গা-হঙ্গামা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানায় তার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়। 

৫ আগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর সমহিমায় এলাকায় ফিরে আসেন আকরাম। এলাকায় ফিরে বিভিন্ন এলাকার অপরাধীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি বাহিণী। ওই বাহিনীর অনেক সদস্য আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে ওই দোসররা এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছে। তারা এখন আকরামের শেল্টারে। 

৫ আগস্টের পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে আদমজী ইপিজেড দখল চেষ্টাকারী হিসেবে আকরামের নাম উঠে আসে। বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে আকরাম ইপিজেডের ভেতর বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর ব্যবসা দখল করে নেয়।

ব্যবসা করার জন্য তার লাইসেন্স না থাকায় আওয়ামী দোসরদের লাইসেন্সে ব্যবসা বাগিয়ে নিয়েছেন।