নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪

ডিএনডিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহী রোগে

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৪:০৯, ৭ জুলাই ২০২১

ডিএনডির ভেতর পানিবান্দি মানুষের সীমা নেই। একদিকে পানিবন্দি হয়ে তারা দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে অন্যদিকে পানিবাহী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য জলাবব্ধতার পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে আছে। বির্বন আকার ধারণ করেছে পানির রং। সেই পানিতে পা ফেলতে ঘিন ঘিন করে। কিন্তু নিরুপায় মানুষের উপায় নাই। বাধ্য হয়ে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত ওই পানি মাড়িয়ে তারা চলাচল করছে। চলাচলের রাস্তা ও বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় রান্না-বান্না ও বাথরুম নিয়ে অবর্ননীয় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। তাছাড়া রিভার্জ ট্যাংকি ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ডিএনডির ভেতরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে এমন পরিস্থিতির খবর।


পানিবন্দি মানুষের ভয়াবহ দুর্ভোগে চিত্র হচ্ছে ফতুল্লার লালপুর ও পৌষাপুকুর পাড় এলাকায়।বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোতে। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিচিতজনদের বাসা বাড়ীতে। টিন শেড,বেড়া- টিনের এক তলা বাড়ীতে যাদের বসবাস তাদের কস্টের মাত্রা সবচাইতে বেশী।অধিকাংশ বাড়ীর আসবাবপত্র পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোন রকমে ঘুমাবার জন্য ইট দিয়ে খাট উচু করে তাতেই জড়ো সড়ো হয়ে রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে অনেককেই। গোসল কিংবা গোসলের জন্য তাদেরকে ছুটে যেতে হচ্ছে বহুতল ভবনে বসবাস করা পরিচিত জনদের বাসায় নতুবা আশপাশের এলাকায় বসবাস করা নিকটাত্মীয় স্বজনদের বাসায়। অনেকেই ভাড়া বাড়ী ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র।দোকানগুলোর সাটার লাগানো। পানিতে ডুবে আছে দোকান গুলোর অর্ধ সাটার। 


যে রাস্তায় এক সময় রিক্সা, অটোরিক্সা, ইজিবাইক চলতো, পায়ে হেটে নিজ নিজ গন্তব্য স্থলে ছুটে চলতো হাজার হাজার মানুষ সেই রাস্তায় আজ ছুটে চলছে নৌকা। বর্তমানে লালপুর- পৌষাপুকুর রাস্তায় ১৯ টি নৌকা চলাচল করছে। নানা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে তাদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।


আসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, ফতুল্লা বাজারে তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। একবার করে যেতে লাগে ৪০ টাকা আসতে লাগে ৪০ টাকা। সে হিসেব মতে তার প্রতিদিন যাতায়াত খরচ হচ্ছে ২৪০ টাকা। তাই তিনি সকালে বের হন কাজ শেষ করে একবারে রাতে বাসায় ফিরেন। দুপুরের খাবারটা বাইরে খেয়ে নেন। আর যাদের নৌকা দিয়ে যাবার মতো টাকা নেই তারা কোমর পানি মাড়িয়ে পায়ে হেটে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে বলে তিনি জানান। এতে অনেকেই পানিবাহী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের পায়ে ঘাঁ হয়ে গেছে।

ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের উকিলবাড়ি, লাল খা, শেয়ার চর, তক্কারমাঠ থেকে ফতুল্লা স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা পানির নিচে। এলাকার অবস্থা অনেক খারাপ। বাড়ি-ঘর পানি নিচে তলিয়ে আছে। এনায়েতনগর ইউনিয়নের ইসদাইর, বুড়ির দোকার এলাকার মানুষের ভোগান্তিও বলে শেষ করা যাবে না। আমির হোসেন একজন জানান, কতদিন ধরেই তো পানিতে কস্ট করতেছি। দিন দিন পানি রং বদলে যাচ্ছে। র্দুগন্ধ আসছে পানি থেকে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে সেই পানি দিয়েই হাটতে হচ্ছে আমাদের। কাকে বলবো এই কস্টের কথা।


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলীর অবস্থাও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন ধরে ও্ই এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এলাকার প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে। কদমতলী মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা এম এ মাসুদ বাদল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভয়াবহ দিন পার করছি। কবে এর থেকে মুক্তি পাবো একমাত্র আল্লাহই জানেন। বাথরুম পর্যন্ত ডুবে আছে। অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমরা।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে  বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সাড়ে ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ।


ওদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে ডিএনডিবাসী। এমনটা মনে করছেন ভুক্তভাগিরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে প্রকল্প পাশ হয়েছে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও সুফল নাই। এটা দু:খজনক। আমরা যেভাইে হোক দ্রুত এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চাই।
 
 

সম্পর্কিত বিষয়: