নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

০৯ মে ২০২৪

পদেই শক্তি খরচ আন্দোলনে নেই

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২০:২৮, ৯ নভেম্বর ২০২৩

পদেই শক্তি খরচ আন্দোলনে নেই

বিএনপির একদিনের হরতাল ও তিন দফায় ৭ দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে দেখা যায়নি জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ অনেক নেতাদের। ফলে কর্মসূচিগুলোতে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল নগন্য। আর তাই রাজপথে দীর্ঘ সময় তারা টিকে থাকতে পারেনি। তবে তাদের গুটিকয়েক সমর্থক চোরাগুপ্তা ভাবে খন্ড খন্ড ভাবে এই কর্মসূচিগুলোতে মাঠে নেমেছিল। শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থা না থাকায় রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকার বিরোধী বিএনপির আন্দোলন। রাজনীতির সূতিকাগার রাজধানী লঘোয়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে এমন দৈন্যদশা হতাশ করেছে বিএনপির সমর্থকদের। অথচ এই শীর্ষ নেতারা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিতে যার পর নাই শোডাউন করেছেন। পদ পাওয়ার জন্য অর্থ খরচ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কেড়েছেন। কিন্তু এই নেতারাই দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকে হতাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের।


দলীয় সূত্রমতে, রাজধানীর নয়াপল্টনে আলোচিত বিএনপির মহাসমাবেশ শেষ পর্যন্ত সফল হতে গিয়েও হয়নি। এরআগেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে মহাসমাবেশের পশ্চিমাংশে। যার রেশ এসে পড়ে মূল সমাবেশ স্থলে। ফলে পন্ড হয়ে যায় দেশ ও দেশের বাইরে আলোচিত বিএনপির বহু কাংখিত মহাসমাবেশ। ব্যাপক হতাহতের মধ্যে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করে।  হরতাল শেষে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিন, ৫ ও ৬ নভেম্বর দুইদিন এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর দুইদিন মোট ৭দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে বিএনপির হাইকমান্ড দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করার জন্য নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবন্ধ হওয়ারও নির্দেশ দেয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিন্তু কর্মসূচিগুলোতে শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতে ফুটে উঠেছে তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের চিত্র।

হরতালর দিন ও অবরোধের প্রথম দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ আন্তর্জাতিক বিষয়খ সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ আড়াইহাজারে সরাসরি রাজপথে থেকে পিকেটিং করেছেন। পুলিশ ও আওয়ামীলীগ যৌথভাবে তার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। আজাদের এলাকার চিত্র পুরো জেলায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু দিনশেষে তার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার পাশপাশি মামলা ও পুলিশের ব্যাপক অভিযানের কারণে তাকে পিছু হটতে হয়েছে। 


মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তথ্যমতে, হরতাল ও অবরোধের প্রথম দুইদিন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেনকে রাজপথে দেখা গেলেও এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। তবে হরতাল থেকে শুরু করে তিন দফার অবরোধে বিভিন্ন কৌশলে নারায়ণগঞ্জ শহরে সক্রীয় ছিলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সবশেষে বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করার আগ মুহুর্তে সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সমর্থকরা সিদ্ধিরগঞ্জে, কাজি মনিরুজ্জামানের সমর্থকরা রূপগঞ্জে, আজহারুল ইসলাম মান্নানের সমর্থকরা সোনারগাঁয়ে, জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকরা লিংকরোডে পিকেটিং করেছে। অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ মাঠে থেকে আবার কারো কারো সমর্থকরা পিকেটিং করে কর্মসূচি পালন করেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুককে ৮দিনের কর্মসূচির একদিনেরও দেখা যায়নি।

এছাড়া হরতাল ও তিন দফায় ৭ দিনের অবরোধে মাঠে কর্মীরা দেখা পায়নি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান দিপু, অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, আজহারুল ইসলাম মান্নান, বিএনপির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও আড়াইহাজারের সাবেক এমপি আতাউর াহমান খান আঙ্গুরের। মোটকথা তারা মাঠে নামেননি। জেলা ও মহানগর যুবদলের তৎপরতা দেখা গেলেও সবদিন শীর্ষনেতাদের দেখায় যায়নি কর্মসূচি চলাকালে রাজপথে। জেলা ও মহানগর ছাত্রদল এবং জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের শীর্ষ নেতাদেরও একই অবস্থা।


এদিকে বিএনপি তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিল, দুই একটি গাড়ি ভাংচুর ও সড়কে টায়ার জ¦ালালেই কর্মসূচি সফল হয় না। বিএনপির মতো একটি দলের কর্মসুচি পালনের ক্ষেত্রে যদি এমন পরিস্থিতি দেখা যায়, তাহলে কর্মীদের মনোবল এমনতিইে নস্ট হয়ে যায়। যেখানে দলের শীর্ষ নেতারা মাঠে নেই। সেখানে সাধারণ কর্মীরা মাঠে টিকে থাকবে কিভাবে? 


ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা আরও বলেন, বিগত দিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে কি পরিমান লবিং গ্রুপিং হয়েছে চিন্তাও করা যাবে না। আবার কমিটিতে একটা পদ পেতে শীর্ষ নেতাদের বাড়ি-ঘর আর অফিসে দৌড়ঝাপ করতে করতে অনেকের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে। কিন্তু পদ পদবী পাওয়ার সেই নেতারা এখন কই। শুধুমাত্র কমিটির পদধারী নেতারা নামলেই তো জমজমাট আন্দোলন হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, মামলা-হামলা তো থাকবে। গত ১৪/১৫ বছর তো এগুলা নিয়েই চলতে হয়েছে। মামলা কি পিছু ছেড়েছে। মামলা হয়েছে আরও হবে। এসব মাথায় রেখেই আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। তাছাড়া শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিরোধ, মতপ্রার্থক্য ও গ্রুপিংয়ের কারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হতে পারেনি। সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে থাকা অবস্থায় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে সকল ভেদাভেদ ভুলে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেয়া উচিৎ ছিল বিএনপির হাইকমান্ডকে। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন। 

 

ওদিকে পুলিশ ও বিএনপির তথ্যমতে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার সবগুলো থানায় নাশকতার অভিযোগ এনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ১৬টি মামলার বাদী পুলিশ। রূপগঞ্জ থানার একটি মামলা বাদী ছাত্রলীগকর্মী। এই সকল মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৭৪৭ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে কয়েকশত। ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই সকল মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৯৫ জনকে। গ্রেপ্তার এড়াতে বাকীরা রয়েছে বাড়ি-ঘর ছাড়া। কারণ পুলিশ আর ডিবি প্রায় প্রতিরাতেই হানা দিচ্ছে তাদের বাড়ি-ঘরে। এই সকল মামলা ও পুলিশের তৎপরতা মোকাবেলা করে আগামীদিনে কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীরা।


 

সম্পর্কিত বিষয়: