নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা

নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহনে দুই শর্ত উপেক্ষিত

নুসরাত জাহান সুপ্তি

প্রকাশিত:০৪:২৭, ৪ অক্টোবর ২০২১

নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহনে দুই শর্ত উপেক্ষিত

‘করোনা এখন আর নেই, অযথা বিরক্ত করবেন না। অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।’ মুখে মাস্ক নেই কেন প্রশ্নের জবাবে রবিবার সকাল ৯ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মৌমিতা পরিবহনের যাত্রী আমিরুল ইসলাম ওই কথাগুলো বলেন। তিনি আজিমপুর এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। 


ওই বাসটিতে উঠে দেখা যায় বাসের প্রতিটি আসনে যাত্রী থাকার পরেও দাড়িয়ে আছে ৮-৯ জন যাত্রী। বাসের যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের মুখেও নেই মাস্ক। তবে চালক দেখালেন তাঁর প্যান্টের পকেটে মাস্ক রয়েছে। ঢেউ নামের একজন যাত্রী বলেন, আমি এ বাসের নিয়মিত যাত্রী। ঢাকা সিটি কলেজে পড়াশোনা করি। কোচিং এর জন্য নিয়মিত বাসে যাওয়া আসা হয়। তারা সব সময়ই অতিরিক্ত যাত্রী নেয়। সিট না থাকলেও নারীদের উঠায়। একবার বাসে উঠে গেলে পরে দাড়িয়ে যাতায়াত করে তারা। কিছু বললে মাঝ রাস্তায় নেমে যেতে বলে।  


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসের কন্ডাক্টর ভিন্নমত পোষন করে বলেন, ‘আমাদের কোনো দোষ নেই। যাত্রীদের তাড়া থাকে অফিস টাইমে। তারাই জোর করে বাসে ওঠে। আমরা মাস্কের কথা বললে ধমক দেয়। 


নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা ও চিটাগাংরোডগামী বাস গুলোর বেশির ভাগ বাসেই দেখা যায় দাঁড়িয়ে যাত্রী যাতায়াত করে।  এ রুটের মৌমিতা, অনাবিল, বন্ধু সহ একাধিক গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। স্বাস্থ্যবিধিসহ যথাযথ নিয়ম মেনে গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। বিধিনিষেধ থাকলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না পরিবহন চালকরা। বাস চালক ও তার সহকারীদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। 

 

অথচ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বিবেচনায় তিন মাস অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহন করেছে গণপরিবহনগুলো। যাত্রীদের এই সময়ে গুনতে হয়েছে কাগজে-কলমে ৬০ শতাংশ। ২৯ আগস্ট বিআরটিএ ও বিআরটিসি’র ঢাকা সড়ক জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাসগুলো সব সিটে যাত্রী তুলতে পারবে। যাত্রীরাও আগের ভাড়া দেবেন। তবে এর জন্য দু’টি শর্তও মানতে হবে। শর্ত দু’টি হলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকতে হবে। আর বাসের চালক, হেলপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক্যের জন্যও মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

 

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছিলেন, প্রতিটি গণপরিবহনকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একটি ট্রিপ শেষ হলে বাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তো বটেই, জীবাণুমুক্তও করতে হবে। তা না করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।


অথচ মন্ত্রীর এমন ঘোষণা বা নির্দেশনা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের গণপরিবহন গুলো এর কিছুই তোয়াক্কা করছেনা। আবার এই বিধি নিষেধ মানাতে সংশ্লিষ্টদেরও মাঠে তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।


জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জে গত এক মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩২৬ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৪৬৭ জনের নমুনায় ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ২২১ জন।  সুস্থ্য হয়েছেন ২৫ হাজার ৫৩৭ জন। পুরো জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাধারন মানুষ বিধি নিষেধ নিয়মনীতি না মানলে আক্রান্তের হার পুনরায় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। 
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস রুটগুলোর মাঝপথের যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। বাসগুলো চাষাড়া থেকেই পুরোপুরি ভরে যাচ্ছে। তবুও মাঝ পথ থেকে যাত্রীদের উঠানো হয়। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী যাত্রীদের। একদিকে যাত্রীদের মুখে মাস্ক নেই অন্যদিকে নেই শারীরিক দুরুত্ব। 


১নং গেট থেকে চিটাগাংরোডগামী বন্ধু বাসের যাত্রী মেহেদী বলেন, মাস্ক মুখে দিলে হাঁসফাঁস লাগে। এ জন্য পকেটে রেখে দিয়েছেন। একই বাসের কন্ডাক্টরের মুখেও মাস্ক ছিল না। তাঁর অজুহাত, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, হাঁকডাক দেওয়া লাগে। তাই মাস্ক পরে থাকা সম্ভব নয়। 


সাইনবোর্ডের বাসযাত্রী আল আমিন বলেন, ‘বাসের সব সিটে যাত্রী থাকলেও রাস্তা থেকে মানুষ ডাকতে থাকে। সামনেই খালি হয়ে যাবে, এই কথা বলে যাত্রীদের তুলবেই।’


স্বাস্থ্যবিধিসহ যথাযথ নিয়ম মেনে গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের গুরুত্ব জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সকলকে  নির্দিষ্ট নির্দেশনা মানতে হবে। নয় তো সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এখনো প্রতিদিন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুও থেমে যায়নি। এজন্য সংক্রামণ হ্রাসে সরকার কর্তৃক দেওয়া সকল নির্দেশনা মেনেই যাত্রীদের গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হবে। 

সম্পর্কিত বিষয়: