
বন্দরে বিএনপি নেতা মঞ্জু, আরিফ ও মাসুম বাহিনীর ইন্ধনে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদে জেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি নেতা মঞ্জু নিজেকে সাধু সাজাতে চাঁদাবাজ আরিফকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। চাঁদার দাবিতে মসজিদ বালু ভরাট কাজে নিয়জিত ড্রেজার শ্রমিকদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের ঘটনাটি ঘটিয়েছে উপজেলার ধামগড় ইউপির ৪ নং ওয়ার্ড আড্ডা মুসলিম নগর এলাকায়।
প্রায় এক মাস মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ রাখার পর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিক সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে বস্তুনিষ্ট প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজরা এক সংবাদ সম্মেলন করায় মঞ্জু ও আরিফের বিরুদ্ধে বের হচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া মঞ্জু, মালিভিটা গ্রামের মৃত বাহাত আলীর ছেলে। তিনি আওয়ামীলীগের সরকার আমলে বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য এবং ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদের সহচর হয়ে কামতাল মালিভিটা দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদে থেকে ১৬ বছর একক আদিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল।
৫ আগস্টের পর জামায়াত শিবিরের কর্মীরা সদস্য ফরম বিতরণ কালে মঞ্জু ছাত্রশিবির কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয় এবং মাদ্রাসার জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের গালাগালি করলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিলে বে-কায়দায় পড়ে আওয়ামীলীগের দোসর মঞ্জু ।
পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নূরুজ্জামান, মদনপুর আর কে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন আলী মমিন ও মঞ্জুর ছোট ভাই আব্দুল গাফ্ফার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়াও মঞ্জু ৫ আগস্টের পর নিজেকে বিএনপি বিশাল বড় নেতা বনে গিয়ে শুরু করে মব জাস্টিস। উপজেলার মালিভিটা গ্রামের ক্বারী আব্দুল্লাহ নিজ বাড়ির পাশে আড্ডা মুসলিম নগর ব্রহ্মপূত্র নদের তীরে ২০ শতাংশ জমি রেখে মারা যান তিনি।
মৃত্যুর আগে তিনি নিজের জমিতে একটি মসজিদ নির্মাণ করতে তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে বলে যায়। ২০২২ সালে তিন ছেলে পিতার নামে ক্বারী আব্দুল্লাহ (রঃ) নামকরণ করে ৫ শতাংশ জমির উপর টিনের তৈরি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । তার পর থেকে মসজিদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মসজিদটি তার নির্ধারিত স্থানে পুননির্মাণের জন্য গত ১৫ জুন মাসে বালু ভরাট কাজ শুরু করা হয়েছে।
মসজিদের বালু ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে স্থানীয় বিএনপি নেতা মঞ্জরুল হক ভূঁইয়া মঞ্জু, আরিফ হোসেন, মাসুম পারভেজ নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লাঠি সোটা দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র নিয়ে ড্রেজার শ্রমিকদের উপর হামলা চালায় এবং প্রতি ঘন ফুট বালু থেকে ৪০ পয়সা চাঁদা দাবি করে।
মসজিদ কমিটি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত ২৯ দিন যাবত মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ রাখায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিক সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তার পর প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে বিএনপি নেতা মঞ্জরুল হক ভূঁইয়া আরিফকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টায় এক সংবাদ সম্মেলন করে।
এতে ফুঁসে উঠেছে মসজিদের দাতা পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী। তারা চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে সত্য বলে চেলেঞ্জ করে সংবাদ সম্মেলনের বিরুদ্ধে উল্টো বক্তব্য দিয়েছেন।
বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মরহুম ক্বারী আব্দুল্লাহ'র দুই নাতী ভিডিওতে বলেন মসজিদের বালু ভরাট কাজ চাঁদার দাবিতে বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি নেতা আরিফ কাকা। এখানে তোফায়েল বালু ফেলালে তাকে বালুতে গাইরা লামু। এগুলো মঞ্জু ঝেঠা মধ্যস্থতা করেছিল। চাঁদাবাজির ঘটনা সত্য কিন্তু আমরা চাঁদা দেই নি।
আরিফ হোসেন ধামগড় ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড দশদোনা গ্রামের মৃত নুরা মিয়ার ছেলে। তিনি আওয়ামীলীগের সরকার আমলে মাল্টপারপাস খুলে কোটি কোটি আত্মসাৎ করে আত্নগোপন চলে যায়। ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বিরিয়ানির খাইয়ে বনে গেছে বিএনপি নেতা। বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় মব জাস্টিস তৈরি করে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
মাসুম পারভেজ, ধামগড় ইউপির ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আলী হোসেন খোকার ছেলে। তিনি জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) এর বন্দর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়ে বনে গেছে বিএনপি নেতা। তারা পারিবারিক ভাবে আওয়ামীলীগের পদপদবিতে রয়েছে। ৫ আগস্টের পর চাঁদার দাবিতে সরকারি রাস্তার কাজ বন্ধ রেখেছে।
অটো চুরির সেন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ইতি মধ্যে এক চোরাই অটো ক্রয় করে ঝালেলায় পড়লেও দারোগা আল ইসলামের মধ্যস্থতা মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে সমাধান করেন বলে ভুক্তভোগী অটো মালিক সাকিল জানিয়েছেন।
চাঁদার দাবিতে মসজিদের বালু ভরাট কাজ এক মাস যাবত বন্ধ রাখার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে স্থানীয় ভাবে প্রতিরোধ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নূরুজ্জামান, বিএনপি নেতা ফুয়াদ প্রধান, প্রবীণ বিএনপি নূরুল হক, বিএনপি নেতা জহির পাগলা, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিততে মসজিদের বালু ভরাট কাজ শুরু করেছেন বলে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।