সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) ও ওমর ফারুক (২৭) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় ভুইয়ার মৃত্যু হয়েছে। এসময় পুলিশ সদস্যসহ আরো ২০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাহিওে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত হৃদয় ভূইয়া উপজেলার দুঘঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে শনিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে দুধঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আব্দুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। ভোটগ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান।
এসময় ফলাফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পুনরায় ভোট গননার অনুরোধ করেন। পুনরায় ভোট গননা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজু প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গননার দাবি করেন।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাজূ কৌশলে কেন্দ্রের বাহিরে চলে যান। এ বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা সৃষ্টি করে।
একপর্যায়ে পুলিশ, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এসময় কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভূঁইয়া ও কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) গুলিবিদ্ধ হন।
এয়াড়াও আপন, সাখওয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ ও রিপনসহ ১২ জন আহত হোন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদয় ভূঁইয়া মারা যান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এমসআই) খবির উদ্দিন, কনস্টেবল, মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আব্দুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ, আল আমিন আহত হোন। পুলিশ সদস্যদেও সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে রাজু নির্বাচিত হয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুনরায় ভোট গননা করে ফলাফল দেওয়ার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এসময় পুলিশ ও রাজুর সমর্থকের ওপর গুলি চালায়।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান দাবি করেন, নির্বাচন শেষে দুই পক্ষেও মধ্যে সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
এসময় আজিজ সরকারের সমর্থকদেও গুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে পুলিশের ৮ সদস্য আহত হোন।
উল্লেখ্য, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডেও সদস্য মো. মুজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে এ পদটি শূন্য হয়। ফলে আজ শূন্যপদে এই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
