
সোনারগাঁয়ে মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করায় ইমরান হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাদক কারবারি ও তার সহযোগীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় ইমরান বর্তমানে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ইমরানের পিতা হাবিবুর রহমান শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পাঁচআনী এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন (৩৫) এলাকায় মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইসলামপুর সাকিনস্থ গুদারঘাট এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্য মনির মেম্বারসহ তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ইমরানের ওপর হামলা চালায়।
এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করার পাশাপাশি তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী গুরুতর আহত ইমরানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর পিতা মো. হাবিবুর রহমান। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় ইমরানের ওপর এ হামলা হয়েছে। তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ইমরানের ওপর হামলার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে সাবেক ইউপি সদস্য মনির মেম্বারের নাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত ও সন্ত্রাসী চক্র। গত ১০ আগস্ট র্যাব-১১ এর হাতে মনির মেম্বারসহ ৬ জন সহযোগীকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, ছুরি, সুইচ গিয়ার, দা ও ১০০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে তখনই একাধিক অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠে আসে।
তবে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এলাকাবাসীর দাবি, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। এর ফলে এলাকায় চরম ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর ইউনিয়নের পাচআনী এলাকায় সোলাইমান নামে এক যুবকের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে তাকে অপহরণ করে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।
মনির মেম্বার উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পাচকান্দি এলাকার খাসেরগাঁও গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তার নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানা ওসি (তদন্ত) রাশেদ হাসান খান বলেন, মনির মেম্বার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাও একটি অভিযোগ পেয়েছি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।