নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

২০ আগস্ট ২০২৫

জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, জরুরি পদক্ষেপ জেলা প্রশাসকের

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৫৬, ১৯ আগস্ট ২০২৫

জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, জরুরি পদক্ষেপ জেলা প্রশাসকের

রূপগঞ্জ উপজেলার বেড়িবাঁধসংলগ্ন গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রায় দুই দশক ধরে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ভুগছে। খাল দখল, ভরাট ও আবর্জনায় প্রবাহমান খালগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বর্ষণেই পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিতে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে সমস্যার সমাধান চাইলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এর আগে। অবশেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে তিনি বলেন,“আমার ধারণা ছিল না রূপগঞ্জের মতো একটা উপজেলায় এই ধরনের জলাবদ্ধতা নেমে আসতে পারে। যখনই আমরা শুনেছি এই জলাবদ্ধতার কথা তখনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন।

পানিবন্দি মানুষের পাশে যেন আমরা থাকতে পারি সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, সমাধান হতে হবে টেকসই। আগামীতে যাতে এই মানুষগুলো আর পানিবন্দি না হয়,সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঢাকা শহরের পাশে শিল্পায়ন-ঘেরা একটা জেলায় মানুষ কেন পানিবন্দি থাকবে!

তারপরও সামান্য বৃষ্টিতে! বন্যা যদি হতো তাহলেও মেনে নেওয়া যেত,তিনি আক্ষেপ করে বলেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা জানিয়েছে কিছু খাল অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে।

আমরা যখন জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে গেলাম, তখন ২৫০০ ট্রাক আবর্জনা পরিষ্কার করেছি। কিন্তু মানুষ আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। আমরা যদি ২৫ হাজার ট্রাক না, ২৫ লক্ষ ট্রাক ময়লাও পরিষ্কার করি, শহরের ৪০ লক্ষ মানুষ যদি আবার সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন, তাহলে তো এই সমস্যা সমাধান হবে না। এবার আমরা প্রতিজ্ঞা করে নেমেছি, আমরা আর সেটা হতে দেবো না।”

তিনি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান। “আমরা প্রাথমিকভাবে জনগণকে সচেতন করছি। সতর্ক করছি, লিফলেট বিতরণ করছি। আমরা ডাস্টবিন করে দিয়েছি। এরপরেও যদি তারা না মানেন, তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।”

শিল্পকারখানার বর্জ্য খালে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। শিল্পকারখানাগুলো না মানলে তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে, আগামী সভায় সবাই সেটা জানাতে হবে।”

নারায়ণগঞ্জ জেলার খাল দখল ও দূষণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে কাজ করছে। এ কাজে সকলকে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে। “ঢাকার এত কাছে থেকেও এ ধরনের জলাবদ্ধতা মেনে নেওয়া যায় না। বন্যা হলে মানা যেত, কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই এমন ভোগান্তি অগ্রহণযোগ্য।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দুটি শ্যালো পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পাম্প প্রতি মিনিটে প্রায় ৪ হাজার লিটার পানি নিষ্কাশনে সক্ষম, যা কার্যকর হলে প্রায় ৭০০ পরিবার উপকৃত হবে। 

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় হাজার পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, ভোজ্য তেল ও মসলা সামগ্রীসহ ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। পাশাপাশি তারাবো পৌরসভা, গোলাকান্দাইল ও মুড়াপারা ইউনিয়নে ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান খান, সরকারি কমিশনার (ভূমি) পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেল ও রূপগঞ্জ, পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নোমান, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির মিয়া, ইউপি সদস্যবৃন্দ ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।