নারায়ণগঞ্জের বাজারে ডিমের দাম লাগামছাড়া, সেই সাথে রয়েছে ইলিশ। মৌসুম চললেও এক কেজি ইলিশের দাম বাজারভেদে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা।
অন্যদিকে চাল, ডাল, সবজি, মাছ ও মাংসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। শুক্রবার (১১ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ শহরের দিগুবাবুর বাজার, কালিবাজারসহ সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে লাগামছাড়া দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। অন্যদিকে এভাবে মূল্য বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। এরফলে নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে ডিম ও গোশত খাওয়া বাদ দিয়েছেন। মধ্যবিত্তদের অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়।
যারা কিনতে পারছেন, তারাও পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যারা ডজন ডজন ডিম কিনতেন এখন তারা হালিতে নেমেছেন। গরু কিংবা খাসির গোশত খাওয়া তো অনেকে ভুলেই গেছেন। ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি দিয়ে যারা আমিসের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতেন তারাও এখন পড়েছেন বিপাকে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ডজনের কমে ডিম কিনলে প্রতিটির দাম ১৫ টাকা। অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকেদের জন্য এ যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিগুবাবুর বাজারে আসা রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, একটি ডিম কিনতে ১৫ টাকা লাগবে! এটি কোথাকার হিসাব? এই দেশে দেখার কেউ আছে? জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে, আর আমাদের চোখ বন্ধ করে টাকা দিতে হবে। যেন মগের মুল্লুক!
এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও দাম চড়া। ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আধা কেজি থেকে এক কেজির ইলিশ ৯০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
দিগুবাবুর বাজারে এসে দুশ্চিন্তায় আবুল হোসেন। তিনি ইলিশ কিনবেন বলে বাসা থেকে বের হলেও বড় ইলিশ হাতে ধরতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এটি কীভাবে সম্ভব? ভরা মৌসুমেও ইলিশের এত দাম! দাম কেন বেড়েছে, এর ব্যাখ্যাও কারো কাছে নেই। বিক্রেতাদের কথা, নিলে নিন, না নিলে যান। তাদের বক্তব্য, তারা কম দামে কিনতে না পারলে কম দামে দেবেন কীভাবে।
আগের বাড়তি দামেই গরুর মাংসের কেজি বাজারভেদে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির কেজি বাজারভেদে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি প্রতি কেজি মুরগি বাজারভেদে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে সব ধরনের মাছ আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষের আমিষের জোগানদাতা সিলভার কার্পের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। দেড় থেকে দুই কেজি বা তার বেশি ওজনের সিলভার কার্পের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
তেলাপিয়ার কেজি ২০০ টাকা, কই মাছ ২০০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত। চাষের পাঙাশ মাছের কেজি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
রুই ও কাতলার কেজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা, বাইম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা, বড় বোয়াল ৮০০ টাকা, ছোট ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের আইড় ৭৫০ টাকা। চাষের শিং মাছ ৫৫০ টাকা। পাবদার কেজি ৬০০ টাকা। মলা মাছের কেজি ৫০০ টাকা।
এদিকে চালের বাজারে নতুন করে বাড়েনি চালের দাম। আগে দাম বেড়ে যাওয়া প্রতি কেজি চিকন চাল বাজার ও ধরনভেদে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চিকন চালের কেজি ৬৫ টাকা, পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, স্বর্ণা ও আটাশ চালের কেজি ৫৫ টাকা।
মসুর মোটা ডালের কেজি ১০০ টাকা, চিকন ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা। ছোলার ডাল ৯০ টাকা কেজি। আলুর কেজি ৪০ টাকা, আদা ২৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, আমদানি করা পেয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম বেড়েছে। সব রসুনের কেজি এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
ভোজ্য তেলের দাম নতুন করে বাড়েনি। প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বোতলজাত পামওয়েলের লিটার ১৫০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ টাকা। খোলা দুয়েক জায়গায় ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, উচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ভেন্ডি ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, টমেটো ২৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা। আলু প্রতি কেজি ৪০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেলোয়ার হোসেন নামের বেসরকারি এক চাকুরিজীবী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়তি হওয়ায় মাছ-মাংস কেনা কমাতে হয়েছে। বাজেটের মধ্যে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় নিয়মিত। উর্ধ্বমূখী বাজার দর নিয়ে ভবিষ্যত শংকায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।


































